কৃষক আমির হোসেন শূন্য থেকে কোটিপতি

সবজি চাষ করে নিজ প্রচেষ্টায় শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের কৃষক আমীর হোসেন। দৃঢ় বিশ্বাস আর একান্ত প্রচেষ্টায় মাত্র ৬ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ শুরু করে কোটি টাকার ওপরে সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।

এমন সফলতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকসহ তিনি পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। সবজির পাশাপাশি মাল্টা চাষে সফতলার পর এখন তিনি উচ্চ ফলনশীল পেয়ারা চাষেও দেখছেন সম্ভাবনার আলো।

জানা যায়, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের কৃষক আমির হোসেন যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তখনই তার দিনমজুর বাবা মোজাহার ব্যাপারী মারা যান। ফলে দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমির হোসেন বাধ্য হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে একটি হোটেলে শ্রমিকের কাজ নেন। কিন্তু তাতেও জুটত না দুই বেলার খাবার।

৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৬ শতক জমিতে ১০০টি পেঁপের চারা লাগান আমির হোসেন। ওই জমিতেই সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেন আদা। ছয় থেকে সাত মাসের চেষ্টায় পেঁপে ও আদা বিক্রি করে তার আয় হয় ১৫ হাজার টাকা। এভাবে শুরু হয় বিভিন্ন সবজি চাষ।

বছর খানেক চলার পর সবজি বিক্রির টাকা জমিয়ে এক বিঘা জমি বর্গা নেন। সেখানেও একই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন তিনি। অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে সফল চাষি হিসেবে জমি কিনতে শুরু করেন। এভাবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।

বর্তমানে প্রতি বছর উৎপাদন খরচ বাদে তার আয় হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। তার কৃষি কাজে সহযোগিতা করেন স্ত্রী করিমন বেগম।

আমীর হোসেনের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বড় ছেলে আয়নুর রহমান স্নাতক পাসের পর বর্তমানে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত। বড় মেয়ে লিপি বেগম এইচএসসি পর্যন্ত পড়ার পর বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে আরাফা আক্তার এ বছর বগুড়ায় স্নাতকে অধ্যায়নরত। সন্তানদের লেখাপড়া ও সংসারের সব খরচ আসে ফল ও সবজি বিক্রির টাকা থেকেই।

সফলতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আমির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে আমি দুই বিঘা জমিতে মাল্টা, এক বিঘা জমিতে কলা, ১০ শতক জমিতে গেন্ডারী আখ, ৫ শতক জমিতে নবরত্ন কচু, ১০ শতক জমিতে লেবু, ৪০ শতক জমিতে গোল আলু ও এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করছি। এসব জমিতে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ, আদা, কচু, টমেটো ও মিস্টি কুমড়া চাষ করেছি। একটি জমিতে একাধিক ফসলেই কৃষকরা দেখতে পারবে সফলতার মুখ।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক শামছুল আজাদ বলেন, আমি প্রতি মাসে একবার আমির ভাইয়ের বাড়িতে আসি কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে। আমির ভাইয়ের পরামর্শ নিয়ে আমি বিভিন্ন সবজির চাষ করে সফল হয়েছি।

সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের সবেক ইউপি সদস্য ফরমান আলী বলেন, আমি আমির ভাইয়ের বাগান দেখে অবাক হলাম। আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি একজন কৃষক কখনো এত সফলতা অর্জন করেন। আমির ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আগামীতে কচু ও গেন্ডারী আখের চাষ করব।

সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরশাদ আজিজ রোকন বলেন, একটি জমিতে একসঙ্গে ৪টি ফসল চাষের সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় কৃষক আমির হোসেনের ভাগ্যে মিলেছে বিভিন্ন পুরস্কার। তিনি আমার ইউনিয়নের গর্ব। মাঝে মাঝেই জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা আসেন তার ফসল দেখতে। তার সাক্ষাৎকার নিতে আসেন বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরাও। ফলে এ ইউনিয়নটি দেশ-বিদেশে পরিচিত হয়েছে।

সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমির হোসেন কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার। ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তার হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরস্কার তুলে দেন। আমরা নিয়মিত কৃষি বিভাগ থেকে আমির হোসেনের ফল ও ফসলখেত পরির্দশনসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, একটি জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করে কৃষক আমির হোসেন সফলতা এনেছেন। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কারও। এখন ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তিনি মালটা চাষে সফতলার পরে তিনি পেয়ারা চাষ শুরু করেছেন। তার ফসল উৎপাদনে পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

এসএইচ-০৭/১৬/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)