মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ায় সংসার ভাঙল রোকসানার

গত ৮ মার্চ রোকসানা খাতুন (২৩) এর প্রসব বেদনা শুরু হলে শ্বশুরবাড়ির কেউ এগিয়ে আসেনি। খবর পেয়ে মা এসে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করান মেয়েকে। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্ম দেন রোকসানা। বৃহস্পতিবার কন্যা সন্তানসহ স্বামীর বাড়িতে যান রোকসানা। কিন্তু সেখানে তার জায়গা হয়নি। উল্টো তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয় তিন মাস আগেই তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে!

একপর্যায়ে ৯৯৯-এ কল দিলে ওইদিন সন্ধ্যায় সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। কিন্তু বাড়িতে কেউ না থাকায় পুলিশের পরামর্শে সন্তানকে নিয়ে রোকসানা সুন্দরগঞ্জে বাবার বাড়িতে চলে যান। রোকসানা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে। তার স্বামীর নাম রাজা মিয়া। এর আগে ওই ব্যক্তি সুরভী বেগম (২৮) নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। বিয়ের সাড়ে তিন বছরে সন্তান না হওয়ায় সুরভীকেও তালাক দেন তিনি। রাজার বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামে।

রোকসানা জানান, তার স্বামীর স্বপ্ন ছিল পুত্র সন্তানের বাবা হবেন। তাই অনাগত সন্তানের লিঙ্গ নিশ্চিত হতে আল্ট্রাসনোগ্রাম করান তার স্বামী। কিন্তু রিপোর্টে কন্যা সন্তান জানার পর থেকেই রোকসানার জীবনে নেমে আসে অযত্ন-অবহেলাসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

শ্বশুরবাড়িতে বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে পানি তোলা হলেও তাকে ওই পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। পেটে সন্তান নিয়ে তাকে টিউবওয়েল চেপে সাংসারিক কাজকর্মে পানি ব্যবহার করতে হয়েছে। একপর্যায়ে তাকে বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যান রাজা। স্বামীর অবর্তমানে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

এ ব্যাপারে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, এ ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে রাজা মিয়ার দাবি, সন্তান পেটে নিয়েই রোকসানাকে বিয়ে দিয়েছে তার পরিবারের লোকজন। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গর্ভধারণকালীন তালাক দেওয়ার বিধান না থাকায় বিষয়টি গোপন রাখেন তিনি।

এসএইচ-১৯/১৩/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)