ভ্যাকসিন না নিলে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন

কয়েকদিন ধরে করোনায় মৃত্যুশূন্য বাংলাদেশ। কমেছে শনাক্তের হারও। তাহলে কি করোনা বিদায় নিচ্ছে শিগগিরই, না কি সঠিক ভ্যাকসিনেশনের কারণে বাংলাদেশের এ সফলতা। অনেকে এখনও এক ডোজ ভ্যাকসিনও নেননি। তাদের জন্য করোনা ঝুঁকি কতটুকু, আবার বুস্টার ডোজ নেওয়ার পর অনেকের শরীরে শনাক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাস, এটারই বা কারণ কী। বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধির ভাঙার ভয়াবহ অবস্থার পরিণতিই বা কী হবে।

এসব বিষয়ে সময় সংবাদের জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক প্রভাষ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের ইনচার্জ ও সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার। তার সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: বুস্টার ডোজ কী? ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে বলুন।

আয়শা আক্তার: করোনা ভাইরাস ঠেকাতে টিকার প্রাথমিক পূর্ণ ডোজ (ধরন হিসেবে এক বা দুই ডোজ) পাওয়া একটি জনসংখ্যার মাঝে টিকার কার্যকারিতা নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নেমে যাওয়ায় বাড়তি যে ডোজ দেওয়া হচ্ছে তাকেই বলা হচ্ছে বুস্টার ডোজ। এটি দেওয়ার মূল লক্ষ্য হল, মানবশরীরে টিকার কার্যকারিতা বাড়ানো

আমার মতে, ৬ মাস আগে যারা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ২টি ডোজ নিয়েছেন, ওমিক্রন সংক্রমণের বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা প্রায় শূন্য শতাংশ। এবং ফাইজারের ২ ডোজ টিকার ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটি ৩৫ শতাংশের কিছুটা বেশি। তবে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজার টিকার তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ। অর্থাৎ ওমিক্রনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঝুঁকিপূর্ণ সবাইকে টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়া।

প্রশ্ন: বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরও কারো কারো করোনা হয়েছে। এটার কারণ কী?

আয়শা আক্তার: বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরও করোনা হয়েছে, কারণ ভ্যাকসিন হান্ড্রেড শতাংশ সুরক্ষা দিচ্ছে না। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে। যার দরুণ পজিটিভ হলেও ওই রোগী মৃদু সংক্রমণের মধ্যে ভালো হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না, মৃত্যুঝুঁকি একদমই কমে আসে। এছাড়া বুস্টার ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় ডোজটি কি টিকা দেওয়া হবে তা সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। কারণ টিকাভেদে ইমিউন রেসপন্স আলাদা হয়।

প্রশ্ন: কয়েকদিন ধরে দেশে করোনায় মৃত্যু নেই, শনাক্তও কমেছে অনেক। এটা কি টিকার সুফল? না কি প্রাকৃতিকভাবেই করোনা বিদায় নিতে যাচ্ছে?

আয়শা আক্তার: অবশ্যই এটা ভ্যাকসিনের সফলতা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে মানুষকে ভ্যাকসিনেশন করা গেলে করোনার সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি তো মানতেই হবে। করোনা যে এখনই বিদায় নিচ্ছে সেটা বলা যাচ্ছে না।

প্রশ্ন: বুস্টার ডোজের কার্যক্ষমতার কোনো নির্দিষ্ট সীমা বা সময় আছে কি?

আয়শা আক্তার: যে কোনো ভ্যাকসিন দিলে সেটা ছয় থেকে আট মাস পর্যন্ত কার্য ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তবে এটা নির্ভর করে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন, সেটার ওপর। এছাড়া একটি টিকা কতটুকু কার্যকর হবে তা নির্ভর করে টিকা দেওয়ার পরে তা শরীরে কতটুকু নিউট্রালাইজিং এন্টিবডি এবং টি-সেল রেসপন্স তৈরি করে তার ওপর।

প্রশ্ন: যারা এখনো কোনো ডোজই নেননি, তাদের জন্য এই সময়ে করোনা ঝুঁকি কতটুকু?

আয়শা আক্তার: যারা এখনো কোনো ভ্যাকসিন নেননি, অবশ্যই তারা ভ্যাকসিন নিয়ে নেবেন। ভ্যাকসিন না নিলে যদি আপনার করোনা পজিটিভ হয়ে থাকে, তাহলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবেন।

প্রশ্ন: এখন যেহেতু করোনার প্রভাব অনেকটাই কমে গেছে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

আয়শা আক্তার: স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ভ্যাকসিন দুটো মিলেই আমাদের করোনা সংক্রমণ শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসবে। তাই করোনার প্রভাব কমে গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।

প্রশ্ন: দেশে আবারও করোনার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা আছে কি?

আয়শা আক্তার: যেহেতু এটা ভাইরাস যে কোনো সময় চেঞ্জ করে রূপ বদলে মিউটেশনের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে অথবা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: বুস্টার ডোজের পরও কি আরও কোনো ডোজ নিতে হবে? অর্থাৎ চতুর্থ ডোজ আসার সম্ভাবনা রয়েছে কি?

আয়শা আক্তার: বুস্টার ডোজ আমরা চালিয়ে যাচ্ছি সাথে প্রথম, দ্বিতীয় ডোজ। চতুর্থ ডোজ দিতে হবে কি না সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

প্রশ্ন: সামনে ঈদ। শহর ছেড়ে গ্রামে যাবে বড় একটা জনগোষ্ঠী, এতে করোনা ছড়ানোর কোনো আশঙ্কা আছে কি?

আয়শা আক্তার: আশা করছি করোনা সংক্রমণ কমের দিকেই থাকবে। এ জন্যই ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম সফলতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।

প্রশ্ন: সবশেষে করোনার টিকা নেওয়া, না নেওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার বিষয়ে জনগণের উদ্দেশে কী বলবেন।

আয়শা আক্তার: অবশ্যই সবাই ভ্যাকসিন টা নিয়ে নেবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছে সবার জন্য বিনামূল্যে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। অবশ্যই ভ্যাকসিন দিবেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

এসএইচ-১৬/২২/২২ (স্বাস্থ্য ডেস্ক)