বাংলাদেশ সৃষ্টির প্রধান কারণ বঞ্চনা: ইমরান খান

বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে প্রধান কারণ ছিল বঞ্চনা, পূর্ব বাংলার জনগণকে তাঁদের অধিকার দেওয়া হয়নি বলেই পাকিস্তানে ভাঙ্গন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শনিবার লাহোরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন বলে খবর প্রকাশ করেছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজির ভাতিজা বর্তমান পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানের অংশে পড়া বর্তমান বাংলাদেশ শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল ধারাবাহিকভাবে। পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তান) জনগণকে তাদের অধিকার দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে এটাই ছিল প্রধান কারণ।

ভারতে গোহত্যা নিয়ে সহিংসতার প্রেক্ষিতে দেশটির প্রবীণ অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহর একটি মন্তব্য থেকে সৃষ্ট বিতর্কের জেরে সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রসঙ্গে ইমরান বলেন, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়, তা ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকারকে দেখিয়ে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, সংখ্যালঘুরা যাতে নিরাপত্তা, সুরক্ষা অনুভব করে, নতুন পাকিস্তানে তারা যাতে সমান অধিকার পায়, তার সরকার তা নিশ্চিত করবে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহরও এমন স্বপ্ন ছিল।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভারতের উত্তর প্রদেশের বুলান্দশার জেলায় কথিত গোহত্যা নিয়ে সহিংস ঘটনায় পুলিশসহ দুজন নিহত হন। এ নিয়ে অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ বলেন, ভারতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর চেয়ে একটি গরুর মৃত্যু বেশি গুরুত্ব পায়।

তার এমন বক্তব্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে ভারতসহ গোটা বিশ্বজুড়েই।

নাসিরুদ্দিন শাহর ভাষ্য উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, ভারতের লোকজনরাই এখন বলছে তাঁদের দেশে সংখ্যালঘুরা নাগরিক হিসেবে সমান সুবিধা পাচ্ছে না। দুর্বলেরা যথাযথ আচরণ না পেলে তা অভ্যুত্থানে রূপ নেবে। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়, তা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে দেখিয়ে দেবে পাকিস্তান।

উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে অবজ্ঞা-বঞ্চনার শিকার হয় পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানে থাকলেও প্রথম বাজেটে উন্নয়ন খাতের ২৮ হাজার টাকার মধ্যে এই অংশে দেওয়া হয় মাত্র ৫ হাজার টাকা।

পরের দুই যুগে রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক- প্রতিটি ক্ষেত্রে এ জনপদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে নানাভাবে অধিকারবঞ্চিত করেছে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। এমনকি মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যও বাঙালিকে রক্ত দিতে হয়েছে।

সেই অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনের পর বাঙালি যখন স্বাধীনতার বিকল্প দেখছিল না, তখন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হামলা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির উপর।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার মানুষেরা। নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী; লাল সবুজ পতাকা ওড়ে স্বাধীন ভূমিতে, নতুন বাংলাদেশে।

এসএইচ-১০/২৩/১৮ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)