যুক্তরাজ্যের পর নেদারল্যান্ডসেও ঠাঁই হচ্ছে না শামীমার

জিহাদের জন্য চার বছর আগে দুই সঙ্গীসহ আইএসে যোগ দিতে লন্ডন থেকে সিরিয়ায় পাড়ি দেয়া শামিমা বেগমকে নিয়ে নেদারল্যান্ডসে ফিরে যেতে চান তার স্বামী ইয়াগো রিদাইক। তবে যুক্তরাজ্যের মত নেদারল্যান্ডসেও ফিরতে পারবেন না জঙ্গি শামীমা।

নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষের নিয়মানুযায়ী কোনো ডাচ নাগরিকের স্ত্রী বা জীবনসঙ্গীর নেদারল্যান্ডসে বসবাসের অনুমতি পেতে হলে বা বেড়াতে আসতে চাইলে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। এ ছাড়া দেশটির আইন অনুযায়ী, শামীমা যখন বিয়ে করেন, তখন তাঁর বিয়ের বয়স হয়নি।

কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো ডাচ নাগরিকের স্ত্রী বা জীবনসঙ্গীর নেদারল্যান্ডসে বসবাসের অনুমতি পেতে হলে বা বেড়াতে আসতে চাইলে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।

গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইয়াগো জানান, শামীমা স্বেচ্ছায় তাঁকে বিয়ে করেছেন। তখন তাঁর বয়স ছিল কম।

পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী শামীমা তাঁর স্কুলের দুই বন্ধু খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসের সঙ্গে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেন। পরে সেখানে নেদারল্যান্ডসের নাগরিক ইয়াগো রেইদিজককে বিয়ে করেন তিনি।

আইএসের ডেরায় থাকতেই গর্ভধারণ করেন শামীমা। সম্প্রতি তাঁর সন্তানের স্বার্থে নিজ দেশ যুক্তরাজ্যে ফেরার আকুতি জানান। তবে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ তাঁকে যুক্তরাজ্যের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের নির্দেশ দেন।

পরে একইভাবে স্বামী ইয়াগো রেইদিজকের দেশ নেদারল্যান্ডসে ফিরতে চাইলে সেই পথও রুদ্ধ বলে জানায় দেশটির কতৃপক্ষ।

ডাচ বিচার বিভাগীয় মন্ত্রণালয় জানায়, আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শামীমা ও তাঁর সন্তান ‘দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাব্য হুমকি’। যদিও তারা প্রশিক্ষিত নয়, কোনো সহিংসতায় যোগ দেয়নি।

গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইয়াগো আইএস ছেড়ে দিয়েছেন দাবি করে বলেন, আমি বুঝি না কোন দিক দিয়ে শামীমা বিপদের কারণ হবে। কারণ সে তিন বছর একটি বাড়িতেই ছিল।

ইয়াগো বলেন, ১৫ বছর বয়সী শামীমাকে যখন তিনি বিয়ে করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ২৩ বছর। আর এতে ভুল কিছু ছিল না বলে তিনি মনে করেন। কারণ, নিজের পছন্দেই তিনি এ বিয়ে করেন। কীভাবে রাকায় শামীমার সঙ্গে দেখা হয়, সে বর্ণনা দেন তিনি।

২৭ বছর বয়সী ইয়াগো রেইদিজক এখন উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় একটি কুর্দি বন্দিশিবিরে আটক রয়েছেন। নেদারল্যান্ডসে ফিরে গেলে সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেওয়ার অপরাধে তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

তিনি জানান, তিনি আগেও এই সংগঠন থেকে বের হয়ে যেতে চেষ্টা করেছিলেন। নেদারল্যান্ডসের গোয়েন্দা হিসেবে সন্দেহ করে সিরিয়ার রাকা শহরে আইএস তাঁকে বন্দী করে এবং তাঁর ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়।

শামীমার পারিবারিক আইনজীবী তাসনিম আখুঞ্জির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান জানায়, জঙ্গিদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পেয়ে সন্তানকে নিয়ে সিরিয়ার শরণার্থীশিবির ছেড়ে পালিয়েছেন শামীমা।

একই দিন আরেকটি দৈনিক জানায়, নিজের দুর্দশার কথা প্রকাশ করায় জঙ্গিরা শামীমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।

সিরিয়ায় একের পর এক শহরের দখল হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ার পর আইএসের সর্বশেষ ঘাঁটি পূর্ব সিরিয়ার বোগৌজ শহর থেকে শামীমা ও তাঁর স্বামী পালিয়ে যান।

শামীমা উত্তর সিরিয়ার আল-হাওল শরণার্থীশিবিরে আরও ৩৯ হাজার মানুষের সঙ্গে আশ্রয় নেন। সেখানে সম্প্রতি একটি পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছেন শামীমা। অন্যদিকে রেইদিজক একদল সিরীয় যোদ্ধার কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

শামীমা বেগম এবং ইয়াগো রিয়েডিক তাদের কারো কাছেই পাসপোর্ট নেই। নেই তাদের ভবিষ্যতের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণও।

এসএইচ-৩০/০৫/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)