ভারতের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ভরসা নেই

ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা দেশটির সুপ্রিম কোর্টের এক সাবেক নারী কর্মকর্তা তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওই নারী জানান, আদালতের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রক্রিয়ায় তার যথেষ্ট ‘আপত্তি’ রয়েছে। যেভাবে তদন্ত এগোচ্ছে, তা নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ তিনি। তাই তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত। তবে তদন্ত চালানোর জন্য তৈরি তিন বিচারপতির প্যানেল এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

গত ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ২২ জন বিচারপতিকে হলফনামা দিয়ে ওই নারী অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে প্রধান বিচারপতি গগৈ তাকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন। তখন তিনি জুনিয়র কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন।

হলফনামায় তিনি জানান, গগৈ ‘আমার কোমর জড়িয়ে ধরেন, আমার সর্বাঙ্গে হাত বুলান’ এবং শরীর দিয়ে ওই নারীর দেহ চেপে ধরেন। ওই নারী তখন দু‘হাত দিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর তাকে তিনবার বদলি করা হয় এবং গত ডিসেম্বরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওই নারীর স্বামী এবং ভাইকেও তাদের চাকরিতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান বিচারপতি জানান, এ ঘটনার পেছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন বলেও মন্তব্য করেন গগৈ। বিষয়টি নিয়ে শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। গত সপ্তাহে গগৈ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বাকি বিচারপতিদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়, তিন বিচারপতির একটি প্যানেল এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালাবে।

এক বিবৃতিতে অভিযোগ আনা ওই নারী তদন্ত কমিটি থেকে সরে আসার বিষয়ে চারটি কারণ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আজ ৩০ এপ্রিল। এ নিয়ে তৃতীয় দিন আমি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের (মাননীয় বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র) অভ্যন্তরীণ কমিটির সামনে হাজিরা দিলাম। পূর্ণ আস্থা নিয়েই আমি গত ২৬ ও ২৯ এপ্রিল তদন্ত কমিটির সামনে গিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, কমিটি নিরপেক্ষ ও সংবেদনশীল পথে হাঁটবে।’

‘কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা এমন যে, আমার শ্রবণশক্তির সমস্যা, উদ্বেগ ও ভয়ের কথা জানানো হলেও শুনানির সময়ে আমার সঙ্গে কোনো আইনজীবী বা বন্ধুকে রাখতে দেয়া হচ্ছে না, শুনানির অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং করা হচ্ছে না, ২৬ ও ২৯ এপ্রিল আমার বক্তব্য নথিভুক্ত করা হলেও তার কপি আমাকে দেয়া হয়নি, তদন্ত প্রক্রিয়া কোন পথে চলবে, আমাকে তা জানানো হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়, আমি এই কমিটির কাছ থেকে সুবিচার পাব না। তাই আমি এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় আর অংশ নেব না।’

তিনি আরও বলেন, তিন বিচারপতি তাকে জানান, এই তদন্ত ঘরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে। তার বক্তব্য, ‘২৬ এপ্রিল কমিটির বিচারপতিরা বলেছিলেন, এটা অভ্যন্তরীণ কমিটির তদন্ত নয়, আবার নির্দেশিকা মেনে তদন্ত চালানো হচ্ছে না। এই তদন্ত একটা ঘরোয়া প্রক্রিয়া মাত্র।’

এসএইচ-৩৩/০২/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক, তথ্য সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা)