কে হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা আগামী ৭ জুন পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় তার পদত্যাগের কারণ। পদত্যাগের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে, কে হবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এই নিয়ে জল্পনাকল্পনা জোড়ালো হয়ে ওঠছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমে নানা সম্ভাব্য প্রার্থীর নামের তালিকা উঠে এসেছে। লন্ডনের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম দি গার্ডিয়ান এ সংক্রান্ত একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।

বরিস জনসন:

এই তালিকার শীর্ষেই রয়েছেন লন্ডনের প্রাক্তন এই মেয়র। তিনি বেশ কয়েকবছর ধরে ব্রেক্সিট নিয়ে তার মতামতের কারণে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন। তার সমর্থকরা তার সরাসরি কথাবার্তার জন্য পছন্দ করেন, আর বিরোধীরা অভিযোগ করেন যে তিনি উগ্র এবং বর্ণবাদী। অনেকেই তাকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে তুলনা করেন। তবে এক জরিপে দেখা গেছে তিনি ৩৯ শতাংশ মানুষের সমর্থন পেয়ে তিনি বর্তমানে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন।

ডমিনিক রাব:

তিনি ২০১৮ এর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকারের ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার সম্প্রতি “রেডি ফর রাব” লিখে টুইটারে প্রচারণাকে অনেকেই তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তুতিমূলক প্রচার হিসেবেই দেখছেন।

জেরেমি হান্ট:

২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জেরেমি হান্টকে তার সমালোচকরা “প্যান্ট পরা তেরেসা” অর্থাৎ তেরেসা মে’র মতই ব্রেক্সিট সমস্যা মোকাবেলার অযোগ্য বলা হচ্ছে। মাত্র কিছুদিন আগে দেওয়া ভাষণেও পরিষ্কার পরিকল্পনা তুলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় এই সমালোচনা আরো জোরালো হয়েছে।

মাইকেল গোভ:

পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এই এমপি সমালোচনা করার মত তেমন কিছু না করলেও সেটিকেই তার দূর্বলতা বলছেন অনেকে। বিরোধীদের মতে, তিনি একইভাবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মত আলোচনাযোগ্য কিছুও করেননি। তারই সাথে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মে সরকারের প্রতি তার আনুগত্য অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না।

এন্ড্রিয়া লিডসাম:

হাউস অফ কমন্স অর্থাৎ সংসদের নিম্নকক্ষের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনরত এ্যান্ড্রিয়া লিডসাম ২০১৬ সালে তেরেসা মে’র শেষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে, তেরেসা মে কনজারভেটিভ পার্টির নেতার দায়িত্ব পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। লিডসাম আবারও সেই সর্বোচ্চ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বলে আশা করছেন অনেকে।

সাজিদ জাভিদ:

পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ এমপি বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। আইএস এ যোগ দেওয়া ব্রিটিশ কিশোরীর নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তিনি আলোচনা-সমালোচনায় আসেন। তাকে অনেকেই কিছুটা কট্টরপন্থী বলে মনে করেন। জাভিদ প্রধানমন্ত্রী হলে, তিনিই হবেন যুক্তরাজ্যের প্রথম মুসলিম প্রধানমন্ত্রী।

ম্যাট হ্যানকক:

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা এই কনজারভেটিভ নেতা প্রতিদ্বন্দ্বীদের তালিকায় তুলনামূলক দূর্বল অবস্থানে। তাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাকে ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে হবে।

পেনি মর্ডুয়ান্ট:

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া এই নেতা একই সাথে উদারপন্থী ও ব্রেক্সিট সমর্থক হওয়ায়, তিনি সকল পক্ষকে একত্রিত করতে পারবেন বলে সমর্থকদের ধারণা। তবে নতুন এ মুখ অপরীক্ষিত হওয়ায় খুব বেশি মানুষের আস্থার জায়গায় তিনি নেই।

ররি স্টুয়ার্ট:

মর্ডুয়ান্টের ঠিক আগেই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা স্টুয়ার্ট বর্তমানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। ইটন ও অক্সফোর্ডের মত প্রতিষ্ঠানের প্রশংসনীয় শিক্ষাজীবন এবং যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে তার অবদান ও আফগানিস্তানে তার সময় নিয়ে লেখা বই, তার ভাবমূর্তি অনেকটাই অনুকূলে রাখতে সাহায্য করছে।

এছাড়াও সাবেক কর্মসংস্থান ও পেনশন মন্ত্রী এস্থার ম্যাকভি, সরকারি কোষাগারের প্রধান সচিব লিজ ট্রাস, এ্যাম্বার রুডসহ আরও বেশ কিছু কনজারভেটিভ নেতার নামও রয়েছে এ তালিকায়। তবে, ইতোমধ্যেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মধ্য জুলাই নাগাদ নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হবে। তাই, ব্রেক্সিট ইস্যুতে বেসামাল রাজনৈতিক অবস্থায় যুক্তরাজ্যের হাল কে ধরবেন তা জানতে সে পর্যন্তই হয়ত অপেক্ষা করতে হবে।

কিভাবে নির্বাচন:

টোরি এমপিরা আগামী ১০ জুনের মধ্যে নিজেদের নাম জমা দিতে পারবেন। যে কোনো এমপি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে পারবেন, শুধু পার্লামেন্টে তার ‍দুইজন সহকর্মী তাকে সমর্থন দিলেই হবে।

তারপর শুরু হবে বাছাই প্রক্রিয়া। বাছাইয়ে বাদ দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত যখন দুইজন থাকবেন তখন দলের সব সদস্য ভোট দিয়ে তাদের একজনকে বেছে নেবেন।

গত বছর মার্চের হিসাব অনুযায়ী কনজারভেটিভ পার্টির মোট সদস্য এক লাখ ২৪ হাজার।

সর্বশেষ ২০০৫ সালে দলীয় সদস্যদের ভোটে ডেভিড ক্যামেরন দলীয় প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে টেরিজা মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলীয় প্রধান হন।

এসএইচ-২১/২৫/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)