ভারতের লোকসভায় বেড়েছে মুসলিম সাংসদ

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মুসলিম সাংসদের সংখ্যা বেড়ে ২৭ জন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ২৩। এর মধ্যে বেশিরভাগ সাংসদরাই ছিলেন কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের। এবার লোকসভায় সবচেয়ে বেশি মুসলিম সাংসদ তৃণমূলের ৫ জন।

পরিসংখ্যান বলছে, এবারই সর্বোচ্চ নয়। ১৯৮০ সালে লোকসভায় ৪৯ জন সাংসদ ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ভারতের ৫৪৩ বিশিষ্ট লোকসভা আসনের (৫৪২ আসনে ভোট হয়) মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে ৩৫৩ টি আসন। এর মধ্যে বিজেপির একার আসন ৩০২। কিন্তু সংসদে তাদের কোন মুসলিম প্রতিনিধি নেই।

গোটা ভারতজুড়ে ৬ জন মুসলিম প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। এর মধ্যে কাশ্মীরে ৩ জন, পশ্চিমবঙ্গে দুই এবং লাক্ষাদ্বীপে একজন। কিন্তু একজনও জয়ের মুখ দেখতে পাননি। ২০১৪ সালেও বিপুল ভোটে জিতলেও লোকসভায় গেরুয়া শিবিরের কোনো মুসলিম সাংসদ ছিল না।

উত্তরপ্রদেশে জয়ী ৬ প্রার্থীর মধ্যে বহুজন সমাজপার্টি (বসপা) ও সমাজবাদী পার্টি (সপা) উভয়েরই ৩ জন করে জয় পেয়েছেন। বসপার ৩ জয়ী প্রার্থীরা হলেন গাজিপুর কেন্দ্রে আফজল আনসারি, সাহরানপুর কেন্দ্রে ফজলুর রহমান, আমরোহা কেন্দ্রে দানিশ আলি।

সপার জয়ী তিন প্রার্থী হলেন রামপুরা কেন্দ্রে আজম খান, সম্বল থেকে শফিক রহমান বার্ক, মোরাদাবাদ কেন্দ্রে এসটি হাসান সংসদের যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন। কংগ্রেস ছয়জন মুসলিম প্রার্থী দিলেও একজনও জিততে পারেননি।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে জয়ী ৬ জনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয় পেয়েছেন ৫ জন মুসলিম প্রার্থী আর কংগ্রেসের একজন। যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে ৮ জন মুসলিম প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন।

মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু-কাশ্মীর থেকে এবার মাত্র ৩ জন মুসলিম প্রার্থী লোকসভায় যাচ্ছেন। প্রত্যেকেই ন্যাশনাল কনফারেন্স’র প্রার্থী। জয়ী প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম হলেন শ্রীনগর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী এনসি প্রধান এবং রাজ্যটির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা।

বিহার থেকে এবার সংসদে যাচ্ছেন মাত্র ২ জন মুসলিম প্রার্থী। অথচ ২০১৪ সালের নির্বাচনে এরাজ্য থেকে ৪ জন মুসলিম প্রার্থী এমপি হয়েছিলেন। কেরালা থেকে ৩ জন মুসলিম প্রার্থী এবার সাংসদ হয়েছেন।

আসাম থেকে মুসলিম সাংসদ হয়েছেন ২ জন। ধুবড়ি থেকে বর্তমান সাংসদ ও এআইইউডিএফ প্রার্থী বদরুদ্দিন আজমল এবং বরপেটা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের আবদুল খালেক। অথচ এই রাজ্যে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত।

লাক্ষাদ্বীপ থেকে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র টিকিটে লোকসভায় জয় পেয়েছেন মোহম্মদ ফয়জল। পাঞ্জাবের ফরিদাকোট আসনে জিতেছেন কংগ্রেসের মোহম্মদ সাদিক। তামিলনাড়ুর রামানাথনপুরম কেন্দ্রে জয় পেয়েছেন ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ প্রার্থী কে. নাভাস কানি।

হায়দরাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী প্রার্থী অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)’এর প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসি। মহারাষ্ট্র থেকে ঔরঙ্গাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী একমাত্র মুসলিম প্রার্থী হলেন এআইএমআইএম-প্রার্থী ইমতিয়াজ জলিল।

১৯৮৪ সালে ভারতের তৎকালীণ প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর পুত্র রাজীব গান্ধী ক্ষমতায় এলে লোকসভায় মুসলিম এমপির সংখ্যা ছিল ৪২ জন। ২০০৪ সালে ১৪ তম লোকসভা এবং ২০০৯ সালে ১৫ তম লোকসভায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের আমলে লোকসভায় জয়ী মুসলিম সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩০ ও ৩৪ জন।

এসএইচ-২৭/২৫/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)