বিচ্ছিন্ন কাশ্মীরের গল্প দাদার মৃত্যুর ১৯ দিন পর খবর পেলেন নাতি

ভারতের সংবিধানে অধিকৃত কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, তা তুলে নেওয়ার পর থেকে দেশের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে অঞ্চলটির যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। একইসঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও টেলিফোন নেটওয়ার্ক। মোদি সরকারের এই কড়াকড়ি আরোপের ফলে গোটা বিশ্ব থেকে কার্যতঃ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কাশ্মীর উপত্যকা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে সেখানে বসবাসকারী কাশ্মিরীরা স্বজনদের কাছে কারও মৃত্যুর খবর পর্যন্ত পৌঁছাতেও পারছেন না।

এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কাতার প্রবাসী কাশ্মীরের যুবক সোহেল আহমেদের সঙ্গে। এই কাড়াকড়ির জন্য নিজের দাদার মৃত্যুর ১৯ দিন পর সেই খবর জানতে পারেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘এই সময়’ খবরটি প্রকাশ করেছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কাতার প্রবাসী সোহেলের পরিবার থাকে কাশ্মীরের এইচএমটি শ্রীনগরে। গত ১০ আগস্ট সেখানেই বার্ধ্যক্যজনিত কারণে মারা যান তার দাদা। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সোহেলের কাছে এ সংবাদ পৌঁছাতে পারেনি তার পরিবার। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার ছেলের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়ে সোহেলকে খবরটি জানান তার বাবা। কিন্তু ততদিনে ১৯ দিন পার হয়ে গেছে তার দাদার মৃত্যুর।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সোহেলের বাবা ফারহাত স্ত্রীকে সাথে নিয়ে শ্রীনগরের ডিস্ট্রিক ডেভেলপমেন্ট কমিশনারের অফিসে যান। সেখানেই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ছেলের সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলার সুযোগ পান তারা দুজন। কথা বলার সময় বাবা ফারহাতের চোখ পানিতে ছলছল করে ওঠে।

সোহেলের বাবা ফারহাত বলেন,‘সোহেল তার দাদুর মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুব দুঃখ পেয়েছে। অনেকদিন ধরেই সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তারা। অবশেষে শ্রীনগরের ডিস্ট্রিক ডেভেলপমেন্ট কমিশনারের অফিসে গিয়ে দুই মিনিট কথা বলার সুযোগ পান তারা। কাশ্মীরের কিছু কিছু জায়গায় এখন ল্যান্ডলাইন ‘চালু হয়েছে’। কিন্তু এতদিন ধরে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক কল করার সুযোগ পাননি তারা। এ জন্যই ১৯ দিন সময় লেগে গেল।’

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা ৩৭০ ধারা সংবিধান থেকে বাতিল করে বিজেপি সরকার। পাশাপাশি জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে আলাদা আলাদা দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। সেখানকার বাসিন্দারা যেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করতে পারে তাই অঞ্চলটিতে আগের দিনই নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় সেখানকার ল্যান্ডফোন, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ। এর ফলে এখন পর্যন্ত কার্যতঃ সারাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে কাশ্মীর উপত্যকা।

এসএইচ-২০/০১/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)