চীনা প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে ভারতে এলাহিকাণ্ড

কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে রাজকীয় অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে সমুদ্র, মন্দির থেকে রাস্তা- ভারতের মামাল্লাপুরামের সর্বত্র এখন সৌন্দর্যায়ন আর সবুজের ছোঁয়া। সঙ্গে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। এমন আবহের মধ্যেই চেন্নাই পৌঁছলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। তার সফরকে কেন্দ্র করে আরও এলাহি আয়োজন করেছে ভারত। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে নেয়া হয় এক মহাপরিকল্পনা। বিমানবন্দরেই তাকে স্বাগত জানান ভারতের তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী। খবর ইন্ডিয়া টুডে ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার।

মামাল্লাপুরাম যেন দুর্গ। সমস্ত এনট্রি-এক্সিট পয়েন্টে দু’দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছিল তল্লাশি, নজরদারি। শুক্রবার সকাল থেকে তা তুঙ্গে উঠেছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ পিকেট। গাড়ি থেকে আমজনতা- সব কিছুর উপর বাজ পাখির মতো নজর রেখেছেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দা থেকে ইউনিফর্ম পরা ভারতীয় পুলিশকর্মীরা। শুধু তাই নয়, উপকূল শহরে জলপথের বিপদ থেকেও চীনা প্রধানমন্ত্রীর সফরকে নিরাপদ করতেও সমুদ্রে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে নৌবাহিনী এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর অতিরিক্ত নজরদারি ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। কড়া নজর রেখেছে উপকূলরক্ষী বাহিনীও।

নিরাপত্তার পাশাপাশি নজর কেড়েছে মামাল্লাপুরামের সাজসজ্জা। ‘পাঁচ রথ’ এলাকায় একটি গেট তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র ফুল ও ফল দিয়ে। তামিলনাড়ু হর্টিকালচার বিভাগ এই গেটটি তৈরি করতে ব্যবহার করেছে ১৮ রকমের ফুল ও ফল। সেগুলো আবার এসেছে রাজ্যের প্রায় সব জেলা থেকে সেরাগুলো বাছাই করে। এ ছাড়া এখানে ফুল-ফলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে রাস্তার দু’পাশের বেশ কিছুটা এলাকা। মোদি-শি জিনপিং এর যেখানে যেখানে যাওয়ার কথা, সব জায়গাই এভাবে সাজানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, দু’দেশের মধ্যে সমন্বয় স্থাপনের লক্ষ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৪৩ জন বিশেষ কর্মকর্তা। চীনা প্রেসিডেন্টের গাড়িবহর চলার রুটে ৩৪টি স্থানে আয়োজন করা হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজার পুলিশ সদস্য। স্থাপন করা হয়েছে ৫০০ সিসিটিভি ক্যামেরা। মুখে শি জিনপিংয়ের মুখোশ পরে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী তাকে স্বাগতম জানানোর প্রস্তুতি নেয়। তামিলনাড়ুর দক্ষিণাঞ্চলীয় মামাল্লাপুরামে বৈঠকে বসবেন শি জিনপিং ও নরেন্দ্র মোদি।

এদিনে, কাশ্মীর ইস্যুতে মন্তব্য করে ভারতের সমালোচনার শিকার আগেই হয়েছে চীন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্য দেশগুলোর কোন অধিকার নেই ভারতের অভ্যন্তরীন ইস্যুতে মন্তব্য করার। গত বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিংয়ের কাশ্মীরের উপর নজর রাখা এবং পাকিস্তানকে কাশ্মীর ইস্যুতে সমর্থন জানানোর ঘটনায় এভাবে প্রতিবাদ জানায় ভারত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের ঠিক দু’দিন আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিং এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে এই বৈঠক করেন। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রভিশ কুমার জানান, আমরা প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিং এবং ইমরান খানের বৈঠক সম্পর্কিত রিপোর্টটি দেখেছি যেখানে তাদের কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার বিষয়টির উল্লেখ আছে। জম্মু ও কাশ্মীর অখণ্ড ভারতেরই অংশ, প্রথম থেকেই এ নিয়ে ভারত নিজের দৃঢ় অবস্থান স্পষ্ট করে এসেছে। ভারতের এই অনড় অবস্থান নিয়ে চীন অবগত। অন্য দেশের ভারতের অভ্যন্তরীন বিষয়ে মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই।

এসএইচ-১২/১০/১৯ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)