অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিম-খ্রিষ্টানের একসঙ্গে নামাজের পর নামল বৃষ্টি

সেপ্টেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ার শুরু হওয়া দাবানলে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। কয়েক মাস ধরে চলা এ দাবানল ভয়ঙ্কর রুপ নেয়ায় জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালানো মানুষকে সমুদ্র সৈকতেও আশ্রয় নিচ্ছেন। এরই মধ্যে গতকাল রোববার বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করেছেন দেশটির সব ধর্মাবলম্বী মানুষ।

ভয়াবহ এই দাবানলের ভুক্তভোগী শুধু মানুষ নয় প্রাণীকূলও। দেশটির পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, দাবানলের লেলিহান শিখায় অন্তত ৫০ কোটি প্রাণী মারা গেছে। এ থেকে পরিত্রান পেতে গতকাল রোববার অ্যাডিলেডের বোনিথন পার্কে নামাজের আয়োজন করেছিল স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়।

ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল ও আমিরাতের দৈনিক খালিজ টাইমসে এ নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, গতকাল মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের আয়োজিত ওই নামাজের জামাতে যোগ দিয়েছিলেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষও। ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন তারা।

দুই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার অস্ট্রেলিয়ার একদল মুসলিম দাবানল সংকট থেকে উত্তরণে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে জমায়েত হয়েছিলেন ওই পার্কে। তাতে অংশ নেন অর্ধশতাধিক পুরুষ, নারী এবং শিশু। তারা সমবেতভাবে নামাজ আদায় করে দুহাত তুলে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন।

অস্ট্রেলিয়ার ধর্মীয় সংগঠন ‘সেন্টার ফর খ্রিষ্টান অ্যান্ড মুসলিম রিলেশনস’ এই আয়োজনটি করেছিল। তাতে অংশ নেয়া খ্রিষ্টান পাদ্রী প্যাটরিক ম্যাকনেরনি বলেন, ‘আজ আমি মুসলিম ভাই-বোনের সঙ্গে বৃষ্টির এই প্রার্থনায় যোগ দিয়েছি। আমার বন্ধু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ খুতবায় সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস ও তওবার ওপর জোর দিয়েছেন।’

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, রোববার অ্যাডিলেডের বোনিথন পার্কে নামাজের পর দাবানলে জ্বলতে থাকা অস্ট্রেলিয়ায় নেমে এসেছে স্বস্তির বৃষ্টি। দেশটির কিছু অংশে বৃষ্টির কারণে সাময়িকভাবে তাপমাত্রা কমে গেলেও কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আগুন আবার জ্বলবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, সিডনি থেকে মেলবোর্ন পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ দাবানলে জ্বলতে থাকা নিউ সাউথ ওয়েলসের কিছু অংশে হয়েছে ভারী বৃষ্টিপাত। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার ফের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসে আগুনের মাত্রা আরও তীব্র হতে পারে।

বৃষ্টিপাতের পর নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী গ্লেডিস বেরেজিকলিয়ান সোমবার সকালে সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। আজকের সকালের পুরোটা পুনরুদ্ধারের জন্য। যারা বাস্ত্যুচুত হয়েছেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান কাজ।’

এদিকে, দাবানলের কারণে ক্যানবেরায় দ্য ন্যাশনাল গ্যালারি অব অস্ট্রেলিয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ভিক্টোরিয়া ব্যুরো আবহাওয়া দফতর সতর্ক করে বলেছে, সোমবার সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দৃষ্টিসীমা এক কিলোমিটারের নিচে নেমে এসেছে।

দাবানল নেভাতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ৩ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছেন। ভয়ঙ্কর দাবানলে পুড়তে থাকা অস্ট্রেলিয়ায় এই মুহূর্তে ক্যানবেরা শহর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর রেকর্ড গড়েছে। এই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

দাবানলের লেলিহান শিখায় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলস; এখানকার প্রত্যেকটি রাজ্য এবং অঞ্চল দাবানলে আক্রান্ত হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলসে এক হাজার দুশর বেশি বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি লাখ লাখ হেক্টর জমি পুড়ে গেছে। নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়া রাজ্যের লাখ লাখ বাড়ি-ঘর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। গত সপ্তাহে উপকূলীয় শহরগুলো থেকে কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

কিছুটা স্বস্তির বৃষ্টিতে দক্ষিণ উপকূলীয় শহরগুলো থেকে ঘর ছেড়ে যাওয়া বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেছেন। সিডনি মর্নিং পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, বেগা, বারমাগুই, তাতরা, মেরিমবুলা, পামবুলা এবং ইডেন শহর থেকে দাবানলের ফলে ঘর ছেড়ে যাওয়া মানুষরা ফিরে আসছেন।

নিউ সাউথ ওয়েলস ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র মার্টি ওয়েববার বলেছেন, বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। তাই ওই এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে ফিরতে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমরা এখনো শঙ্কামুক্ত নই; কিন্তু বিভিন্ন স্থানে লাগা আগুনগুলো কিছু প্রশমিত হয়েছে। এটা আমাদের অগ্নি নির্বাপনের কাজকে সহজ করেছে।’

এসএইচ-২৪/০৬/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)