নির্ভয়া ধর্ষণ: প্রস্তুত হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চ

নির্বিকার থেকেই কি ফের ফাঁসি পেছনোর ছক কষছে নির্ভয়ার চার আসামি? এমন সংশয় আগে থেকেই তৈরি হচ্ছিল। তবে বৃহস্পতিবার ফাঁসির আগে আইনের কিছু প্রক্রিয়ায় ওই চার আসামি সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ না করায়, সেই সংশয় আরও উস্কে দিল।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টায় ফাঁসির দড়ি গলায় পরানো হবে নির্ভয়ার চার দণ্ডিতের। সেই জন্য তিহাড় জেলে শুরু হয়েছে ফাঁসির প্রস্তুতি। কিন্তু এখনও নির্বিকার ওই চার দোষী। আইন অনুযায়ী, ফাঁসির আগে আসামিদের কাছে তাদের কিছু শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার এই চার আসামির কাছেও সেই প্রশ্ন রেখেছেন জেল কর্তৃপক্ষ।

তবে জেল সূত্রের খবর, তারা চারজনই নাকি এ বিষয়ে নির্বিকার। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনও ইচ্ছাই যেন তাদের মধ্যে নেই। তাদের আচরণেও কোনও হেলদোল লক্ষ করা যাচ্ছে না। আর এর থেকেই মনে করা হচ্ছে, আইনের ফাঁককে কাজে লাগিয়ে ফের গোপনে ফাঁসি পেছনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

যে কোনও ফাঁসির আসামির কাছে শেষবারের মতো জানতে চাওয়া হয়, পরিবারের কার সঙ্গে তার শেষবার দেখা করার ইচ্ছা এবং সে নিজের সম্পত্তি কাকে দিয়ে যেতে চায়? নির্ভয়ার চার আসামির কাছেও বৃহস্পতিবার এই প্রশ্ন জানতে চান জেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা কেউই এর উত্তর দেয়নি।

তাদের আচরণ দেখেই তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষের অনুমান, ১ ফেব্রুয়ারি যে তাদের ফাঁসি হবে না, এ বিষয়ে হয়তো তারা নিশ্চিত। আইনের ফাঁক গলে কী ভাবে ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়া যায়, তার ছক কষে ফেলেছে তারা। তাই শেষ ইচ্ছা সংক্রান্ত এই দুই প্রশ্নের কোনও উত্তর তারা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না।

নির্ভয়া কাণ্ডে চার অভিযুক্তের ফাঁসির দিন প্রথমে ঘোষণা হয়েছিল ২২ জানুয়ারি। কিন্তু দোষীরা আলাদা আলাদা করে প্রথমে রায় সংশোধনের আর্জি, তারপরে ফের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার কৌশল নেওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। নতুন ফাঁসির দিন ধার্য হয় ১ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সে দিনও যে ফাঁসি হবেই তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই।

কারণ, নির্ভয়া কাণ্ডে দোষী বিনয় শর্মা ও মুকেশ কুমারের রায় সংশোধনের আর্জি খারিজ হলেও, পবন গুপ্ত ও অক্ষয়কুমার সিংহ এখনও সেই আর্জি জানায়নি। ফলে তাদের এখনও সেই আর্জি জানানোর সুযোগ রয়ে গিয়েছে।

যেহেতু অপরাধ চারজনেই একসঙ্গে করেছে, তাই আদালতের রায় মেনে তাদের একসঙ্গেই ফাঁসি দিতে হবে। ফলে যদি একজনের আবেদন বিচারাধীন থাকে, তাহলে বাকি তিনজনেরও ফাঁসি আটকে যাবে।

আইন অনুযায়ী, শেষ পর্যন্ত সকলের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলেও আবেদন খারিজ ও ফাঁসির মধ্যে অন্তত ১৪ দিনের ব্যবধান থাকতে হবে। ফলে ফাঁসি ১ ফেব্রুয়ারিই হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

ফাঁসি দেওয়ার প্রশ্নে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে অমিত শাহের মন্ত্রক। নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্তরা নির্বিকার থেকে ফাঁসি পিছিয়ে দেওয়ার যে কৌশল নিয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়েই কেন্দ্রীয স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত।

এসএইচ-১৫/২৩/২০ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)