তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন!

তালেবানকে

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে দেশটির ক্ষমতা নিয়েছে তালেবান। পতন ঘটেছে পাশ্চাত্য সমর্থিত আফগান সরকারের। তবে ক্ষমতায় গেলেও তালেবানরা বহির্বিশ্বের সমর্থন পাবে কিনা, এ প্রশ্ন রয়েই গেছে। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তালেবানকে আফগানিস্তানের ‘বৈধ সরকার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ‘ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড’ এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও বিদেশি গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা ইসলামপন্থী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বেইজিং এমন সময়ে তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চাপ প্রয়োগ করে তালেবানকে আলোচনার টেবিলে বসাতে চাচ্ছেন। ফলে বাইডেনের সেই প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যহত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আর এই শঙ্কার আগুনে ঘি ঢালছে পাকিস্তানও। ইমরান খান এরই মধ্যে তালেবানদের ক্ষমতা দখলকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন।

চীন-পাকিস্তান কেন তালেবানের পাশে দাঁড়িয়েছে সেই প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না থাকলে সম্ভাব্য কিছু বিষয় তুলে ধরছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের মতামত, পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। যেই দেশটির সঙ্গে আফগানিস্তানের দীর্ঘ পাহাড়ি সীমান্ত রয়েছে। অনেক আফগান নাগরিকই মনে করেন, চীনের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান কৌশলে তালেবানকে সহায়তা করছে।

সীমান্ত অঞ্চলে প্রশিক্ষণাগার, আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা, বিপদাপন্ন সৈন্যদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া ইত্যাদি কাজ খুবই গোপনীয়ভাবে সম্পন্ন করেছে ইসলামাবাদ। এ কাজের পুরস্কার হিসেব বিভিন্ন সময়ে দুর্বল অর্থনীতির দেশ পাকিস্তানকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ দিয়েছে চীন। এর বাইরে দেশটিতে প্রায় ৬৫ বিলিয়ন ডলার চীনা বিনিয়োগ রয়েছে।

পাকিস্তানের বিষয়ে আফগান কমান্ডার ইসমাইল খান বার্তা সংস্থা এপি-কে জানিয়েছেন, ‘আমি আফগান জনগণকে স্পষ্টভাষায় জানাতে চাই, এই যুদ্ধ তালেবান আর আফগান সরকারের মধ্যে হচ্ছে না। এই যুদ্ধ হচ্ছে আফগান জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যুদ্ধ।’ এ সময় পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ‘তালেবান হলো তাদের (পাকিস্তানের) পণ্য, যারা তাদেরকে সেবা দিচ্ছে।’

এদিকে চীনের তৎপরতার বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে যুক্ত করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে চীন। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের ওপর চীনের আগ্রহ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা র‍্যান্ড করপোরেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান জানিয়েছেন, চীন নীরবে আফগানিস্তানে তাদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেছে।

এই প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরও জানান, পেশোয়ার ও কাবুলের মধ্যে একটি মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে চীন। তাছাড়া শিনজিয়াং প্রদেশের ওয়াকান করিডর দিয়ে আফগানিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণেরও তৎপরতা চালাচ্ছে শি জিন পিং সরকার।

আর এসব সংস্কার ও অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলে এখানে বিপুল অংকের অর্থ বিনিয়োগ করবে দেশটি। চতুর্দিক থেকে ভূমিবেষ্টিত আফগানিস্তান হবে তাদের অন্যতম বড় বাজার। যেখানে একচেটিয়া আধিপত্য থাকবে বেইজিংয়ের।

আর গত মাসে তালেবানের অন্যতম মুখপাত্র সুহাইল শাহিনের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও এ কথার সত্যতা পাওয়া যায়৷ এ মুখপাত্র বলেন, চীন আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ। তারা যদি আফগানিস্তান পুনর্গঠন কাজ করে, তাহলে আমরা সেটাকে স্বাগত জানাব। তারা যদি সেখানে বিনিয়োগ করে তাহলে কথা দিচ্ছি, আমরা তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিব।

শুধু তা-ই নয়। চীনের উইঘুর ও জিনজিয়াংয়ে কোনো মুসলিম আফগানিস্তানে আশ্রয় নিতে পারবে না এবং সেখানে বসে চীনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডও চালাতে পারবে না, বেইজিংকে এমন নিশ্চয়তাও দিয়েছে তালেবান। ফলে বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীটিকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে চীন।

বিশ্লেষণে বলা হয়, স্বার্থ হাসিলের জন্য চীন কর্তৃক তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘটনা নিশ্চিতভাবে বাইডেনের শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টাকে ব্যহত করবে। ফলে দীর্ঘ যুদ্ধে ভঙ্গুর আফগানদের দুর্দশা ঘোচাবার যে ক্ষীণ আলো জ্বলছে, বেইজিং তার ওপর ছায়া ফেলতে পারে।

এসএইচ-১২/১৭/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)