তালেবানের শাসন থেকে বাঁচতে আফগানিস্তানে পলায়নপর নাগরিকেরা সীমান্তে গিয়ে জড়ো হয়েছেন। বুধবার স্থলবেষ্টিত দেশটির সীমান্তে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ তালেবান নেওয়ার পর বিদেশি সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় এক ধরনের প্রশাসনিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। কীভাবে এই মানবিক সংকট মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সোমবার আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর প্রত্যাহার শেষ হয়েছে। এরপর তালেবান যোদ্ধারা মূলত ব্যাংক, হাসপাতাল ও সরকারি প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রাখতে উদ্যোগী হয়েছেন। দেশটিতে মার্কিন আগ্রাসনের সময়ে বিদেশি বাহিনীকে সহায়তা করা আফগানরা তালেবানের শাসনে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।-রয়টার্সের
বিদেশি বাহিনী চলে যাওয়ার পর কাবুল বিমানবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইরান, পাকিস্তান ও মধ্য-এশীয় দেশগুলো হয়ে ব্যক্তিগতভাবে দেশ ছাড়তে উদ্যোগী হয়েছেন আতঙ্কিত আফগানরা।
খাইবার পাসের পূর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে সবচেয়ে বড় সীমান্ত ক্রোসিং তোর্কহাম। সেখানকার এক পাকিস্তানি কর্মকর্তা বলেন, আফগান অংশে সারি সারি মানুষ দেখা গেছে। তারা ফটক খোলার অপেক্ষায় আছেন।
আফগানিস্তান ও ইরানের মধ্যকার ইসলাম কলয়া সীমান্ত ফাঁড়িতে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সীমান্ত দিয়ে ইরানে ঢুকে পড়া আটজনের একটি দলের এক সদস্য বলেন, অতীতের চেয়ে সীমান্ত শিথিল করে দিয়েছে ইরান। যারা ইরানে ঢুকতে চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীকে খুব একটা কঠোর হতে দেখা যায়নি।
মধ্য-আগস্টে তালেবানের হাতে কাবুলের পতনের পরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ফ্লাইটে এক লাখ ২৩ হাজারের বেশি আফগানকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন নিজ দেশে পড়ে থাকা লাখো আফগান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত সপ্তাহে বলেছিল, বছর শেষে পাঁচ লাখের মতো আফগান দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। জার্মানির হিসাব বলছে, আফগানিস্তানে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করা ১০ থেকে ৪০ হাজার আফগানকর্মীকে ঝুঁকি অনুভব করলে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া উচিত।
উজবেকিস্তানের সরকার বলছে, ঝুঁকিতে থাকা আফগান নাগরিকদের যে তালিকা জার্মানি তৈরি করেছে, তারা যদি বিমানের মাধ্যমে ভ্রমণ করেন, তবে অনুমোদন দেওয়া হবে।
কিন্তু কাবুল বিমানবন্দর কীভাবে পরিচালনা করা হবে, তা নিয়ে কাতার ও তুরস্কের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে আসতে তালেবানকে কয়েকদিন বা সপ্তাহ লাগতে পারে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-ইয়েভেস দ্রিয়ান বলেন, এই তিনটি পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে।
সোমবার এক প্রস্তাবে আফগানিস্তান ছাড়তে চাওয়া লোকদের নিরাপদ পথ করে দিতে তালেবানের কাছে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরির কথা বলা হয়নি তাতে। ফ্রান্সসহ অন্যান্যরা এমন একটি প্রস্তাব তুলেছিল।
যুদ্ধের সময় বিদেশিদের হয়ে কাজ করা আফগানদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে তালেবান। এছাড়া ফিরে এসে দেশকে পুনর্গঠনে সহায়তা করতে আফগানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। এবার ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই গোষ্ঠীটি।
এসএইচ-২৫/০১/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)