তালেবানের মধ্যে বিরোধ, খোঁজ নেই বারাদারের

নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালেবানের নেতাদের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ তৈরি হয়েছে, তালেবানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ আবদুল গনি বারাদারের সঙ্গে একজন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যের বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে।

তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ চলছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই খবর পাওয়া যাচ্ছিল, যদিও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জনসমক্ষে দেখা যায়নি মোল্লাহ বারাদারকে। তবে তালেবানের কর্মকর্তারা বরাবরই এসব তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন।

গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটিকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ বলে ঘোষণা করে।
তারা যে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে, সেখানে সবাই পুরুষ এবং জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতারা রয়েছেন। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব হামলার অভিযোগ রয়েছে।

তালেবানের একটি সূত্র বিবিসি পশতুকে জানিয়েছে, বারাদার এবং শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানির মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ বাক্যবিনিময় হয়েছে। তখন সেখানে থাকা তাদের অনুসারীরাও পরস্পরের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। খলিল উর-রহমান হাক্কানি আফগানিস্তানের সশস্ত্র গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাতারভিত্তিক একজন জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতা নিশ্চিত করেছেন যে গত সপ্তাহেও একবার তর্কবিতর্কের তৈরি হয়েছিল।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেখানে বিতণ্ডার তৈরি হওয়ার কারণ হলো নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন নিয়ে সন্তুষ্ট নন বারাদার।

তারা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ে কৃতিত্ব কার হবে, সেই নিয়েই বিরোধের শুরু। জানা যাচ্ছে, বারাদার মনে করেন যে, তার মতো যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়েছেন, কৃতিত্ব তাদের। তবে তালেবানের অন্যতম জ্যেষ্ঠ একজন নেতা পরিচালিত হাক্কানি গ্রুপের সদস্যদের মত, যুদ্ধের মাধ্যমে তারা এই বিজয় পেয়েছেন।

প্রথম তালেবান নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছে বারাদারের। ২০২০ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে তিনি স্বাক্ষর করেন।

সেই সময় আফগান বাহিনী ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাক্কানি নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। এই গ্রুপকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন বলে তালিকাভুক্ত করেছে।

তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন এই দলের নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।

গুজব রয়েছে যে, গত সপ্তাহের শেষের দিকে বড় ধরনের বিরোধের তৈরি হয়েছিল, তখন বারাদার- তালেবানের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ব্যক্তিদের একজন আড়ালে চলে যান। সামাজিক মাধ্যমে ধারণা করা হচ্ছিল যে, তিনি হয়তো মারা গেছেন।

তালেবান সূত্র জানিয়েছেন, বিতণ্ডার পর বারাদার কাবুল ত্যাগ করেছেন এবং কান্দাহারে চলে গেছেন।
সোমবার প্রকাশ হওয়া বারাদারের একটি কথিত অডিও বার্তায় তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতাকে বলতে শোনা যায় যে, তিনি একটি সফরে রয়েছেন।

‘আমি এই মুহূর্তে যেখানেই থাকি না কেন, আমরা সবাই ভালো আছি,’ তিনি বলছেন।

তবে তালেবান বলে আসছে যে, তাদের মধ্যে কোনো বিতণ্ডা নেই এবং বারাদার নিরাপদে আছেন। কিন্তু তিনি বর্তমানে কী করছেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতি দিয়েছে।

একজন মুখপাত্র বলেছেন, তালেবান সুপ্রিম লিডারের সঙ্গে দেখা করতে বারাদার কান্দাহারে গেছেন। আবার পরবর্তীতে বিবিসি পশতুকে বলেছেন যে, তিনি ‘ক্লান্ত এবং বিশ্রামে থাকতে চান’।

অনেক আফগান মনে করেন, তালেবানের বক্তব্য নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২০১৫ সালে এই গ্রুপটি স্বীকার করেছিল যে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমরের মৃত্যুর খবর দুই বছর পর্যন্ত গোপন করে রেখেছিল। সেই সময় দলটি তার নামে অব্যাহতভাবে বিবৃতি প্রচার করে গেছে।

বারাদার কাবুলে ফিরে আসবেন এবং এসব বিরোধের বিষয় নাকচ করে ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দেবেন।
কখনোই জনসমক্ষে না আসা তালেবানের সুপ্রিম লিডার হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে নিয়েও নানারকম জল্পনা রয়েছে। তালেবানের রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় সব বিষয়ের প্রধান আখুন্দজাদা।

এদিকে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দাতাদের আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা পুনরায় সহায়তা কর্মকাণ্ড শুরু করেন। তিনি বলছেন, সহায়তা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে রাজনীতিকে মেলানো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে না।

আফগানিস্তান বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করে দেওয়ার পর সোমবার দেশটির জন্য একশ’ কোটি ডলারের সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এসএইচ-১০/১৫/২১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)