ঋষি সুনাক কি হেরে যাচ্ছেন?

হঠাৎ করেই কি পরিস্থিতি পাল্টে গেল! তা না হলে বরাবর এগিয়ে থেকেও ঋষি সুনাককে কেন টপকে গেলেন লিজ ট্রাস?

যুক্তরাজ্যের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উত্তরসূরী নির্বাচনের লড়াইয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনাকের চেয়ে এখন অনেকটাই এগিয়ে বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাস। ফলে অনেকেরই প্রশ্ন, তাহলে কি প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন না শুরুতে এগিয়ে থাকা ঋষি সুনাক।

প্রাথমিক বাছাইয়ে সবার ওপরেই ছিলেন ঋষি সুনাক। তাকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধছিলেন ভারতীয়রা। কিন্তু সবশেষ এক সমীক্ষায় পরিস্থিতি একেবারেই উল্টে গেছে।

যুক্তরাজ্যের শীর্ষ জরিপ প্রতিষ্ঠান ইউগভ গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার কনজারভেটিভ পার্টির ৭৩০ জন রাজনীতিকের মতামত নেয়। তাদের মধ্যে ৬২ শতাংশই লিজ ট্রাসের প্রতি সমর্থনের কথা জানান। ঋষি সুনাককে সমর্থন করেন ৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ, সমীক্ষায় সুনাকের তুলনায় ট্রাস ২৪ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে।

ইউগভ জানায়, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াই যত জমে উঠছে, লিজ ট্রাসের চূড়ান্ত জয়ের সম্ভাবনা ততই বাড়ছে। যদিও কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হিসেবে প্রাথমিক বাছাইয়ের পাঁচটি পর্বেই সুনাক তার প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাসের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন।

বুধবারের বাছাইয়ে ঋষি সুনাককে ভোট দেন ১৩৭ এমপি। আর লিজ ট্রাস পান ১১৩ জনের সমর্থন। ইউগভ বলছে, প্রথম চার দফার বাছাইয়ে ট্রাস তৃতীয় স্থানে ছিলেন। বুধবারের ভোটে তিনি দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসেন।

তাই শেষ মুহূর্তের বাছাইয়ে ট্রাস বড় চমক দেখাতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর যদি শেষ হাসি লিজই হাসেন তবে তিনি হবেন তৃতীয় নারী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তার আগে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পায় মার্গারেট থ্যাচার ও তেরেসা মে’কে।

এদিকে নির্বাচিত হলে শুরুতেই ট্যাক্স কমাতে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন লিজ ট্রাস। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পাবে বলে জানিয়েছেন সুনাক। সোমবার (২৫ জুলাই) এক টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়ে নিজ নিজ প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন দুই প্রার্থী।

যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হওয়ার লড়াইয়ে অংশ নেয়া কনজারভেটিভ পার্টির ৮ প্রার্থীর মধ্যে এখন টিকে রয়েছেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।

সোমবার এক টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নেন তারা। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শুরুতেই কোন্ কোন্ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হবে তাই তুলে ধরেন দুই প্রার্থী।

বিতর্কে লিজ ট্রাস বলেন, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্রিটেনের জনগণ কঠিন সময় পার করছে। নির্বাচিত হলে শুরুতেই মানুষের কষ্ট কমানোর চেষ্টা করবে তার সরকার। ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমানো হবে ট্যাক্স। প্রয়োজনে অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে সমস্যা মোকাবিলা করা হবে।

তার কথায়, ‘সারা দেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে অনেক কষ্ট করছে। তেল ও খাদ্যের ব্যয়ভার মেটাতে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।’

অপরদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক তার পরিকল্পনায় বলেন, নির্বাচিত হলে তার সরকার কাজ করবে দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। একইসঙ্গে ট্রাসের পরিকল্পনার জবাবে তিনি বলেন, এটা ব্রিটেনের অর্থনীতিকে আরো পেছনে নিয়ে যাবে। বাড়বে দেনা, যা পরবর্তী প্রজনম্মকে ভোগাবে অনেক।

তার কথায়, ‘দেশের জনগণ যেখানে কঠিন সময় পার করছে, সেখানে আগামী প্রজন্মকে আমরা এখন থেকেই বিল পরিশোধের জন্য তৈরি করতে পারি না। এটা আমাদের দলের আদর্শ না।’ বিতর্কের মাঝেই একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। যেখানে অংশ নেন এক হাজার ৩২ জন। এতে ৩৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন সোমবারের বিতর্কে সুনাকই এগিয়ে। অন্যদিকে ট্রাসের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩৮ শতাংশ মানুষ।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ায় দেশটিতে নতুন নেতা নির্বাচিত করা হবে আগামী সেপ্টেম্বরে।

এসএইচ-২০/২৬/২২ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)