মণিপুর কাণ্ডে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনছে বিরোধীরা

মণিপুরকাণ্ডে সংসদ অচল রেখেও কাজ হয়নি। এবার নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছে বিরোধীরা।

সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ২৬ দলের ‘ইন্ডিয়া’ জোট। যেখানে রয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, ডিএমকে, জেডিইউ, জেএমএম, এনসিপি, আরজেডি, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপির মতো দলগুলো।

সেই পর্যন্ত যদি অনাস্থা প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ২০০৩ সালের পর এটাই হবে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রথম কোনো অনাস্থা প্রস্তাব। সবশেষ ২০০৩ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন মতে, এমনিতে এবার সংসদের বাদল অধিবেশনের শুরু থেকেই চাপে আছে মোদি সরকার। চলতি বছরের মে মাস থেকে উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে জাতিগত সংঘাত চলছে।

প্রধানত মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এ সংঘাতে প্রায় দেড়শ’ মানুষের মৃত্যু, ৮০০’র বেশি গুরুতর আহত ও ২৯০টির বেশি গ্রামের সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে।

সংঘাতের প্রথম দিকেই ৪ মে দুই কুকি নারীর ওপর ভয়াবহ যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটলেও এর একটি ভিডিওচিত্র গত বুধবার ১৯ জুলাই রাতে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায়, দুই নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো হচ্ছে। বর্বরোচিত এই কাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই ভারতজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।

এ ঘটনার জেরে তোপের মুখে পড়ে বিজেপি সরকার। ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর কয়েক সেকেন্ডের জন্য সংসদ চত্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদি মুখ খোলেন। তবে বিরোধীদের দাবি ছিল, মণিপুর নিয়ে সংসদে বিতর্ক করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিবৃতি দিতে হবে।

কিন্তু সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মণিপুর নিয়ে তারা বিতর্কে রাজি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোন বিবৃতি দেবেন না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিতর্কের জবাব দেবেন। বিরোধীরা সরকারের এ প্রস্তাব মানেননি।

প্রতিবেদন মতে, সেই পরিস্থিতিতে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে বৈঠকে বসেন নতুন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারা। বৈঠকটি রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জোট নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মণিপুর নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে মোদির বিবৃতির দাবিতে আরও সরব হবেন। আরও জোরদার আন্দোলন করা হবে।

এরই অংশ হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে লোকসভায় বিজেপির হাতে যে আসন সংখ্যা আছে, তাতে অনাস্থা প্রস্তাবে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু বিরোধীদের এই অনাস্থা প্রস্তাব সরকারের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়াবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে বিরোধী দলগুলো দেশের মানুষের কাছে একটি বার্তা দিতে চাইছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

এসএইচ-০৭/২৫/২৩ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)