ভারত-ইন্ডিয়া বিতর্ক: এবার আলোচনায় নরেন্দ্র মোদি

ভারতের নতুন সরকারি নামকরণ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনার ঝড়। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের রাষ্ট্রপতি দৌপদী মুর্মুর আমন্ত্রণপত্রে ‘ইন্ডিয়া’র স্থলে লেখা হয় ‘ভারত’। আর এতেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় আলোচনা। একদিন পর আজ বুধবার এক সরকারি নথিতে দেখা গেলে নরেন্দ্র মোদিকেও `প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত‘ বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। পূর্বে `প্রাইম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া‘ সম্বোধন করা হতো তাকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়ায় ২০তম আসিয়ান-ইন্ডিয়া সম্মেলন সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদির সফর নিয়ে এক সরকারি নথি প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে মোদিকে `প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত‘ বলে সম্বোধন করা হয়েছে।

এই নথিটি এক্স এ পোস্ট করেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পত্র। সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে যায়। বেশ কয়েকজন মন্তব্য করেন একই নথিতে ইন্ডিয়া ও ভারত দুটি নামই ব্যবহার করা হয়েছে।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এক পোস্টে জানিয়েছেন, দেখুন আমাদের মোদি সরকার কতটা দ্বিধায় ভোগেন। ২০তম আসিয়ান-ইন্ডিয়া সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আসলে এই সবকিছুই বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া হওয়ার কারণে।‘

এনডিটিভি জানায়, জি-২০ সম্মেলনে ভারতের কর্মকর্তাদের এখন `ভারত-অফিশিয়াল‘ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আগে তাদের পরিচয়পত্রে লেখা থাকতো `ইন্ডিয়ান অফিসিয়াল‘।

দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ভারতের নামকরণে এটাই প্রথম পরিবর্তন। তারা বলছেন, ‘আমাদের সংবিধানেও দেশের নাম ভারত বলে উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, “ইন্ডিয়া, যা আসলে ভারত- কয়েকটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হবে”।’ শুধু রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্রেই নয়, বিদেশি প্রতিনিধিদলের কাছে দেওয়া জি-২০ এর বুকলেটেও ইন্ডিয়ার জায়গায় ভারত লেখা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ভারত, মাদার অব ডেমোক্রেসি।’

এই পরিবর্তনে দেশটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই পরিবর্তনের প্রশংসা করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেন, ‘রিপাবলিক অব ভারত- আমি খুশি ও গর্বিত যে আমাদের সভ্যতা অমৃতকালের দিকে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ‘এই কাজটি আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি মনকে প্রশান্তি দেয়। ভারতই আমাদের পরিচয়। আমরা এটা নিয়ে গর্বিত। রাষ্ট্রপতি আমাদের ভারত পরিচয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন।’

অন্যদিকে এর সমালোচনা করছে বিরোধীদলীয় নেতারা। অনেকের দাবি, ‘ইন্ডিয়া’ নামে বিরোধী জোট করায় বিজেপি সরকার এখন সবজায়গায় ‘ভারত’ নাম ব্যবহার করতে চাইছে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘যদি “ইন্ডিয়া” জোট নাম পাল্টে “ভারত” রাখে, তাহলে কি বিজেপি সরকার আবার দেশের নাম পরিবর্তন করবে?’

রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা মনোজ ঝা বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ হয়েছে আমরা জোটের নাম দিয়েছি ইন্ডিয়া। আর এর মধ্যেই বিজেপি সবাইকে “রিপাবলিক অব ভারত” নামে আমন্ত্রণ পাঠাতে শুরু করেছে। সংবিধানে বলা আছে, “ইন্ডিয়া, যা আসলে ভারত”। আপনি আমাদের কাছ থেকে ইন্ডিয়াও নিতে পারবেন না, ভারতও নিতে পারবেন না।’

এসএইচ-১০/০৬/২৩ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)