গাজাবাসীদের অবশ্যই তাদের ভূখণ্ডে থাকতে হবে: মিশরের প্রেসিডেন্ট

ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ঘর থেকে পালিয়ে বাচ্চাদের সাথে নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি নারীরা।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের অবশ্যই তাদের ভূখণ্ডে থাকতে হবে হবে মন্তব্য করেছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) তিনি বলেন, গাজাবাসীদের অবশ্যই ‘অবিচল থাকতে হবে এবং তাদের ভূখণ্ডে থাকতে হবে’।

বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালাচ্ছে এবং হামলার মুখে গাজায় আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার আহ্বানের মধ্যে সিসি এই মন্তব্য করলেন।

মিশর এবং অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের মধ্যে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং হলো উপকূলীয় এই উপত্যকাটিতে প্রবেশ ও বের হওয়ার একমাত্র পথ যা ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত নয়।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজা উপত্যকায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আকাশপথে চালানো এই হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ছাড়িয়েছে দেড় হাজার।

এছাড়া ব্যাপক হামলায় গাজা ইতোমধ্যেই পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। এমনকি ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির লাখ লাখ মানুষের ঘুমানোর কোনও জায়গা নেই বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)।

এই পরিস্থিতিতে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ দিতে মিশরকে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। জবাবে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি জানিয়ে দিলেন, গাজাবাসীদের অবশ্যই তাদের ভূখণ্ডে থাকতে হবে।

ফিলিস্তিনিদের ‘বৈধ অধিকার’ নিশ্চিত করার বিষয়ে কায়রোর ‘দৃঢ় অবস্থান’ নিশ্চিত করে মিশরের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, মিশর এই কঠিন সময়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ‘চিকিৎসা ও মানবিক উভয় ধরনের সহায়তা প্রদান’ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বৃহস্পতিবার তিনি এক সামরিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেন, তবে গাজাবাসীদের অবশ্যই ‘অবিচল থাকতে হবে এবং তাদের ভূখণ্ডেই থাকতে হবে’।

২৪ লাখ লোকের ছোট্ট উপকূলীয় গাজা ভূখণ্ড ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল অবরুদ্ধ করে রেখেছে। হামাসের হামলার জেরে এখন পানি, খাদ্য এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া টানা ছয় দিনের বিরতিহীন বিমান ও কামানের গোলাবর্ষণে পুরো গাজা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিশর দাতাদেরকে গাজার জন্য এল আরিশ বিমানবন্দরে মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান নাকচ করে দিয়েছে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটি।

আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির দাবি, গাজাবাসীদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার অর্থ হবে ‘ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করা’। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, মিশর ইতোমধ্যেই ‘সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ৯০ লাখ অতিথিকে (শরণার্থী) আশ্রয় দিয়েছে।’

তার দাবি, ‘কিন্তু গাজাবাসীদের বিষয়টি ‘অন্যরকম’। কারণ তাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার অর্থ হবে ‘(ফিলিস্তিনিদের) নির্মূল করা।’

এসএ-০৮/১০/১৩(আন্তর্জাতিক ডেস্ক)