বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত ‘দ্বন্দ্বে’ যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে!

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। শুক্রবার ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা।

তিনি বলেছেন, ‘একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সেই দেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ভিশনকে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে।’ তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেদেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের এই অবস্থান নতুন নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেভাবে নানা মন্তব্য করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা, তার বিপরীতে গিয়ে ‘তাদের’ দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে মার্কিন মন্ত্রীদের সামনে তুলে ধরার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। প্রতিবছর টু প্লাস টু বৈঠক যেমন করছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা, তেমনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মাঝে-মধ্যেই সাক্ষাত হয়। এরকম একটা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কেন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বে ভারত?

পররাষ্ট্র সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ শশাঙ্ক মাট্টু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পর পর বেশ কয়েকটি পোস্ট করেছেন বাংলাদেশ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রর ভূমিকা ও ভারতের অবস্থান নিয়ে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বন্দ্বে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের মাথা গলানোর কারণে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হুমকির মুখে পড়ছে।

প্রথম এই পোস্টের সঙ্গে ভারত আর বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর একটা ছবি দিয়েছেন মাট্টু। এর পরবর্তী পোস্টগুলিতে মাট্টু ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ওয়াশিংটন প্রকাশ্যেই হাসিনা সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাসিনা সরকার আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে মানবাধিকার ইস্যুতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেছেন, ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক হলেন শেখ হাসিনা। তিনি যদি নির্বাচনে পরাজিত হন, তাহলে প্রতিবেশীদের নিয়ে ভারতের নীতিমালাতেও সমস্যা হবে।

এ ছাড়া আজকের বৈঠকের আগে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) বিশেষজ্ঞ রিক রসো বলেন, ভারত-মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর প্রভাবই কিন্তু বেশি থাকবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, গাজা বা ইউক্রেনের যুদ্ধের চেয়ে বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কায় কী ঘটছে, সেটাই কিন্তু ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ! নির্দিষ্ট কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যেমন ধরুন বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গেও দুই দেশ আলাদাভাবে কথা বলছে।

তিনি বলেন, ওদিকে মালদ্বীপে একটি নতুন চীনপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। অস্থিরতার আশঙ্কা আছে শ্রীলঙ্কা বা নেপালে। ভারতের কাছে এই ইস্যুগুলোর গুরুত্ব অনেক বেশি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অনেক সরাসরি যুক্ত।

এসএইচ-০৭/১০/২৩ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)