টমেটো চাষে সাবলম্বী চাকরি না পাওয়া সাগর

স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামের যুবক শাহরিয়ার কবীর সাগর।

ভাগ্য বদলের আশায় শেষ পর্যন্ত বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন কয়েকবার। কিন্তু তার সেই চেষ্টাও ভেস্তে যায়। শেষে ব্যতিক্রমী ফসল চাষে নাম লেখান।

সে হিসেবে চাষ করেন জাত-বি-১১ উফশি চেরি টমেটো। আর এতেই সাবলম্বী হয়ে সবার নজরে আসেন তিনি।

জানা যায়, কৃষক আব্দুল করিম ও শিরিন আকতার কাজলের একমাত্র ছেলে সাগর। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

আর দশজন শিক্ষিত যুবকের মতো তিনিও ছুটতে থাকেন চাকরির জন্য। এরপর বিদেশ যাওয়ার চেষ্টাও করেন। তাতেও ভাগ্য প্রসন্ন না হলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছোট ভাইয়ের পরামর্শে শুরু করেন চেরি টমেটো চাষ।

পুষ্টিমান সম্পন্ন এ টমেটো সব ঋতুতেই উৎপাদন করা যায়। এর স্বাদ ও গুণাগুণ সাধারণ টমেটোর মতোই। তবে দেখতে অনেকটা চেরি ফলের মতো বলে স্থানীয়ভাবে এর নামকরণ করা হয়েছে চেরি টমেটো।

সাগর এ চেরি টমেটোর বীজ সংগ্রহ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িতে পলিথিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করেন। সে চারা রোপণ করেন বাবার ১ বিঘা জমিতে। দিন-রাত পরিশ্রম করে ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে চাষ করতে থাকেন টমেটো।

৭০ দিন পর আশাতীত ফলন পেতে শুরু করায় পরিশ্রম আর খরচের বোঝা হাল্কা হতে থাকে সাগরের। চেরি টমেটো প্রতিকেজি পাইকারি মূল্য ২-৩শ থেকে ৪শ টাকা। এতে প্রথম দফায়ই ৩০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেন।

কালাই উপজেলার নয়াপাড়ার রনি, খোশালপুরের আরিফ, আওড়ার সনি, হাজীপুরের মাহিনসহ একাধিক বেকার যুবক ও স্থানীয়রা বলেন, ‘সাগরের সাফল্য ও দাম ভালো হওয়ায় আমরাও অনুপ্রাণিত হয়ে চেরি টমেটো চাষ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই সাগরের কাছ থেকে পরামর্শও নিয়েছি।’

শাহরিয়ার কবীর সাগর বলেন, ‘৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে চেরি টমেটো চাষ করে প্রথমেই ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। এছাড়া গাছে যে টমেটো আছে তাতে ৪ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে। কিন্ত এখানে টমেটোর বাজার না থাকায় ঢাকায় টমেটো পাঠাতে হচ্ছে।’

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘সাগরের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। শুধু চেরি টমেটো নয়, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য অনেক বিকল্প ও লাভজনক ফসল আছে। আগ্রহীদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।’

বিএ-১৫/২৩-০৭ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)