গাছ বাঁচিয়ে রাখার জন্য ফুল ছিঁড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে

ফুলকে কেন্দ্র করেই আমাদের সব কিছু। অথচ ফুল বিক্রি করতে পারছি না। ফুল গাছে শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছ বাঁচিয়ে রাখার জন্য ফুল ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছি। জানি না কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করব।

কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের ধামশ্রেণী ইউনিয়নের কাশিয়াগাড়ী গ্রামের ফুলচাষি নুর মোহাম্মদ। করোনার প্রভাবে তার ব্যবসার এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা ছাড়া আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

নুর মোহাম্মদ ৫০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে প্রথমে ছয় হাজার টাকা দিয়ে ফুল চাষ শুরু করেন। তিনি বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করতেন। কিন্তু করোনার কারণে ফুল বিক্রি না হওয়ায় ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

তার মতো করোনার প্রভাব পড়েছে এ উপজেলার অন্য ফুলচাষিদের উপরও। ক্রেতা সংকটে তারা বিক্রি করতে পারছেন না বাগানে উৎপাদিত ফুল। গাছেই শুঁকিয়ে যাচ্ছে ফুলগুলো। বাধ্য হয়ে ফুল তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে।

উপজেলার বাগানগুলোতে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, প্রজাপতি, কচমচ, ডালিয়া, ক্যাকটাস, ঘাসফুল, রঙ্গন, বেলী, গন্ধরাজ ও হাসনাহেনা ফুলের চাষাবাদ হয়। কৃষি অফিস ঘুরেও সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ এসব ফুলচাষির।

উপজেলার পৌরসভাস্থ নারিকেলবাড়ী খামার গ্রামের আব্দুল মজিদ বিশ বছর থেকে ফুল চাষ আর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় এক একর জমিতে ফুল চাষ করেন তিনি। প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ও স্কুল-কলেজের গেটে গেটে ফুল বিক্রি করে তাদের পাঁচজনের সংসার সুখেই চলে। তবে করোনা দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ। এতে কমে যায় তার ফুল বিক্রি। কিন্তু ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে স্বল্প পরিসরেই ফুলচাষ করছেন তিনি। পরিবারের সবাই মিলে ঋণ থেকে মুক্তি পেতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন ফুলচাষের জমিতে।

আব্দুল মজিদ আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘অতিকষ্টে জীবন-যাপন করলেও সরকারি কোনো সহযোগিতা কিংবা পরামর্শ পাইনি।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, করোনাকালে ফুলচাষিদের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নাই। তবে, উপজেলার ফুলচাষিদের খোঁজখবর নিয়ে ভালো চারা উৎপাদন, রোগবালাই প্রতিরোধসহ তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হবে।

এসএইচ-২৩/১৩/২১ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)