দেশ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে : ফখরুল

দেশ অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জনগণ আজ চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বটেই, সামাজিক ও ধর্মীয় কাজও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সম্পন্ন করতে হচ্ছে।

সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয় এবং ১২টি মন্দিরের ১৪টি প্রতিমা ভাঙচুরে গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গণমাধ্যমে এই বিবৃতি দেন তিনি।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বালিয়াডাঙ্গীতে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের এই ঘটনা শুধু ন্যাক্কারজনকই নয়- তা রহস্যজনক, পূর্বপরিকল্পিত এবং কলঙ্কজনক। এই ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুর করে যারা সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়, তারা নরকের কীট।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যেই মাঝেমধ্যে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এসব ঘটনা ঘটিয়ে সম্প্রীতির বন্ধনকে বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চায়। বালিয়াডাঙ্গিতে এক রাতেই বিপুল সংখ্যক মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়, এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সমগ্র এলাকায় হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, যা সামাজিক সম্প্রীতির অন্তরায়। যে সকল মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তার বেশিরভাগই সড়কের পাশে স্থাপিত ছিল। রাতে সাধারণত টহল পুলিশ থাকে, কিন্তু সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিও রহস্যজনক। তাদের গাফিলতিতে দুর্বৃত্তরা অনায়াসে এত বিপুল সংখ্যক মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটাতে পেরেছে বলে সাধারণের ধারণা। সরকার এর দায় এড়াতে পারে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে চলমান দুঃশাসনে এমন এক অস্বাভাবিক ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে অপরাধ করলেও দলীয় বিবেচনায় প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। যার ফলে অপরাধীরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে নতুন নতুন অপরাধ করতেই থাকে। দেশ আজ যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। জনগণ আজ চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ড বটেই, সামাজিক ও ধর্মীও কাজও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এর আগেও মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও হামলা হয়েছে। কিন্তু সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি।

তিনি বলেন, বালিয়াডাঙ্গীতে এর আগেও ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও তার পরিবারের সদস্য এবং তার অনুগত লোকজন শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল নয়, তাদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। তখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় যখনই হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি-সম্পদ, বাড়ি, ব্যবসা দখল, মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে- সেসব ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বালিয়াডাঙ্গীর ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, নিরপেক্ষ তদন্ত করে তা খুঁজে বের করতে হবে। তবে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশতঃ নিরীহ মানুষকে যেন হয়রানি না করা হয়, সে বিষয়েও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল অবিলম্বে বালিয়াডাঙ্গীর মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি সরকারি খরচে প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ মন্দির পুনঃনির্মাণ করারও দাবি জানান।

এআর-১০/০৬/০২ (ন্যাশনাল ডেস্ক)