১১ বছর পর এক মামলায় ২৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

মাদারীপুর সদরের রাজিব সরদার হত্যা মামলার ১১ বছর পর রায়ে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ৬ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিকেলে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ লায়লাতুল ফেরদৌস এই রায় ঘোষণা করেন। আর এই রায়কে ঐতিহাসিক রায় বলে দাবি করেছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী পিপি মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- আব্দুল হাই হাওলাদার, আব্দুল হক হাওলাদার, জহিরুল হাওলাদার, রাসেল হাওলাদার, রাজা হাওলাদার, কালু হাওলাদার, সোবহান হাওলাদার, তুষার শরীফ, ইউসুফ হাওলাদার, আজিজুল হাওলাদার, রহিম হাওলাদার, রেজাউল হাওলাদার, শামিম হাওলাদার, আহাদ হাওলাদার, দলিল উদ্দিন হাওলাদার, অলিল উদ্দিন হাওলাদার, জসিম হাওলাদার, মনির হাওলাদার, সুমন শরীফ, সাগর শরীফ, হাফিজুল কাজী, কালু কাজী, আলাউদ্দিন কাজী।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- সেকেন হাওলাদার, উজ্জ্বল হাওলাদার, জামাল হাওলাদার, রুবেল হাওলাদার, নুরুল আমিন হাওলাদার, বাকিবিল্লা হাওলাদার।

মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্র জানায়, গত ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর সকালে মামা আলী হাওলাদারের নার্সারিতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন রাজীব সরদার। এ সময় তিনি পৌর শহরের হরিকুমারিয়া এলাকায় আসলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অভিযুক্তরা দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর যখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যায় রাজীব।

এ ঘটনার ৩ দিন পর নিহতের মামা আলী হাওলাদার বাদী হয়ে জামাল হাওলাদার, রহিম হাওলাদার, আছাদ হাওলাদারসহ ৪৭ জনকে আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে সদর থানার তৎকালীন পুলিশের উপ-পরিদর্শক রাজীব হোসেন তদন্তের পর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৩৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে। পরে বিচারিক আদালতে দীর্ঘ ১১ বছর যুক্তিতর্ক শেষে উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। এদিকে এ রায় ঘোষণার সময় ২২ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মাদারীপুর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। দীর্ঘ ১১ বছর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এই মামলায় ২৩ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তুষ্ট।

মামলার বাদী আলী হাওলাদার বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর হলেও রায় পেয়ে আমরা খুশি। তবে আরও বেশি খুশি হবো যেদিন রায় কার্যকর হবে। আমার সঙ্গে বিরোধের জের ধরে আমার উঠতি বয়সী ভাগিনাকে যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, সেই রক্তের দাগ তখনই মুছবে যেদিন ওরা ফাঁসিতে ঝুঁলবে।’

তবে আসামীপক্ষের আইনজীবী বাবুল আখতার বলেন, আমার মক্কেলের সঙ্গে ন্যায় বিচার করা হয়নি। যে কারণে আমরা সংক্ষুদ্ধ হয়েছি। আগামীতে রায়ের কপি পেলে উচ্চ আদালতে আপীল করবো। আশা রাখি সেখানে আমরা ন্যায় বিচার পাবো। এর বেশি বলতে চাই না।

এআর-১০/২১/০৩ (আঞ্চলিক ডেস্ক)