বিবাহিত ছেলেরা বাসায় একা থাকলে কি করে জেনে নিন

বিবাহিত ছেলেরা

রাত বাড়তে থাকে। আরও আরও মদ পড়ে গেলাসে। গাঢ় হলদেটে রং তার। স্কচ। সঙ্গে একটি লালায়িত শরীর। আর অনেক কিছু…

পমেরেরিয়ানের তুলোটে শরীর লুটোপুটি খাচ্ছে সাদা পাথরের মেঝেয়। তার মুখে আজ ঠান্ডা দুধ আর কড়কড়ে ভাত পড়েছে। যিনি উষ্ণ খাবার দেন, তিনি নেই। পমেরেরিয়ানের পাতে নয়, উষ্ণ ‘খাবার’ আজ রাতে ছড়িয়ে পড়েছে বেডরুমে। সেখানে মদে-মাংসে এক মহামোচ্ছব।

বাঙালির পরকীয়া নানা রূপে ভোল বদলেছে। সময়ে সময়ে ঘটেছে তার ‘মেটামরফোসিস’। এবং কোনও সন্দেহ নেই যে, একে যথার্থই মেটামরফোসিস বলা চলে। তার রূপ, রস, গন্ধ পাল্টে গিয়েছে কালে কালে। কিন্তু আকরে সে বয়ে চলেছে পরকীয়ার সেই আবহমান ধারা।

কখনও ধর্মপালনে, কখনও আভিজাত্য এবং অর্থের অহমিকার প্রকাশে, কখনও বা কামুকের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে কোনওক্রমে কোমরের কাপড় গুটিয়ে বিছানা ছেড়েছে এই পরকীয়া। এভাবেই বুকের কাছে কোঁচকানো কাপড় জড়িয়ে সে চলে এসেছে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের মাঝপর্বে। এখন সে বারবণিতা নয়। আবার ‘রক্ষিতা’-র স্টেটাসও পায়নি। এক অদ্ভুত আলো-আঁধারিতে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছে এ যুগের পরকীয়া। যার পোশাকি নাম ‘‘বেবি’’।

‘পোশাকি’ শব্দটায় রক্ষণশীলতা রয়েছে। ‘ভদ্রভাষা’ বলে যে মোড়ক রয়েছে, তার বাইরে বের করে আনা যাক ‘বেবি’-কে। তার আগে বলে নেওয়া প্রয়োজন, আইনগতভাবে ‘‘বেবি’’ শব্দটিকে অশ্লীল এবং অসম্মানজনক হিসেবে ধরা হয়। শুরু করা যাক এখান থেকেই।

যে শব্দ অশ্লীল, তা-ই ঘোরে মুখে মুখে। হয়ে গিয়েছে ‘‘বেইবি’’। ‘ই’-এর উপর একটি রসাত্মক স্ট্রেস বাড়িয়ে তোলে বেবি-মাহাত্ম্য। শব্দটির মধ্যে যে পেজোরেটিভ সেন্স রয়েছে, তা অনস্বীকার্য। রাতে ড্রেসিং টেব্‌লের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রিমে-মুখে ব্যস্ত স্ত্রীও কখনও ‘‘বেইবি’’ হয়ে ওঠেন। কিন্তু অধুনা বহুতলের একাদশ তলে ‘‘বেইবি’’ আর স্ত্রী-র পরিচয়ে ক্রিম ঘষে না। স্ত্রীর অন্দরমহলে সে পদচারিণী হয়ে ওঠে কাম-প্রসূত দৃশ্যযৌনতায়।

জমিদার-বঙ্গে বারমহলে যারা অপেক্ষা করত রাতের, চৌরঙ্গীর হোটেলের ঘরে একসময়ে যারা সাদা চাদরে অ্যাশট্রে টেনে রাখত, তারাই আজ ঢুকে পড়েছে বেডরুমে। কার ঘরে কে রাত কাটাচ্ছে, এহেন খোঁজ রাখার সময় বাঙালির আর নেই। যার ঘরে বেবি, তার রাত কাটে ব্যস্ততায়। যার ঘরে নেই, তার রাত কাটে ঘুমে আধো-ঘুমে, ল্যাপটপে, ডেস্কটপে। সে-ও ব্যস্ততা।

চলুন বহুতলের একাদশ বা দ্বাদশ ফ্লোরে। অথবা, কলকাতা থেকে দু’ঘণ্টার ড্রাইভে কোনও হাইওয়ের ধারে পঞ্জাবি ঢাবায় (বঙ্গীয়করণে ‘ধাবা’)। দেখা যায় কাচের গেলাসে গাঢ় হলদে রং। রাত যত এগোয়, রং ততই গাঢ় হতে থাকে। হলদে রং ক্রমশ তুলি টানে লালে। এলিয়ে পড়ে শরীর। ‘‘বেইবি’’-র মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কাজের কথা, অকাজের কথা।

পরকীয়ায় এই ‘‘বেইবি’’-রা জুড়ে আছে এক মায়াবি এলাকা। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে এরা চিরকালই সক্রিয়, স্বতঃস্ফূর্ত। একাকী পুরুষের শরীরে মনে ছড়িয়ে পড়ে এক অনায়াস গতিতে। ভাগ করে নেওয়ার দায় এদের নেই। তবু ভাগ এরা করে। রাত, শরীর, সুখ। যন্ত্রণার আখ্যানগুলি দু’টি মনে চেপে থাকে যৌনতার পাথরে। রক্ষিতারা আর্থিকভাবে নির্ভরশীল রক্ষাকর্তার উপরে। তাই মর্জি বাঁধা রেখে দিনযাপন চলে। দেহব্যবসায়ীর পুঁজি শরীর। এর আগেপরে কিছু নেই। ‘‘বেইবি’’-রা কিন্তু আর্থিকভাবে স্বাধীন। ইচ্ছে, অনিচ্ছে, ভাল লাগা বা মন্দ লাগা-র গুরুত্ব তার কাছে অপরিসীম। তার মর্জিতে মর্জি সেঁটে চলতে হয় অন্যজনকে। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড থেকে শুরু করে গাড়ির চাবি, বাড়ির চাবি। সবই থাকে তার ব্যাগে।

বেপরোয়াভাবে সে এগিয়ে চলে এক সম্পর্ক থেকে আর একটি সম্পর্কে। এক শরীর থেকে আর এক শরীরে। ভালবাসার পুঁজি সে কারও কাছে বাঁধা রাখেনি। পেটের খিদে তার মিটে যায় নিজের রোজগারেই। দেহব্যবসায়ী? না, সে নয়। রক্ষিতা? তা-ও নয়। সে বিচরণ করে এক অদ্ভুত ধূসর এলাকায়। এই তাকে দেখা যায়, এই যায় না। সে জানে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে তার শাড়ির আঁচলের ফাঁক দিয়ে অনেক দৃশ্য পিছলে যেতে চায়। তবু সে দেহব্যবসায়ী নয়। সে জানে, রেস্তোরাঁয় খাদ্য-পানীয়ের বিল মেটাবে অন্যজন। তবু সে রক্ষিতা নয়। এই অঞ্চলে ঘোরা যে বড় কঠিন কাজ!

সে স্ত্রী নয়। সে স্ত্রী হতে পারবে না। সে জানে সংসার-সুখ সে পাবে না এখানে। তা হলে কীসের টানে সে ছুটে আসে? নিছকই সময় কাটানো? নেহাতই শরীরী খিদে? বোধহয় তাতেও পুরোটা ব্যাখ্যা করা গেল না। ব্যাখ্যার বাকিটা লুকিয়ে তার মনের ওই ধূসর এলাকাটায়। যেখানে আধোআলোয় তাকে দেখতে পারে একমাত্র সে-ই। সংসার-সংসার খেলা, কিন্তু সংসার নয়। ড্রেসিং টেব্‌লের সামনে দাঁড়িয়ে নাইট-ক্রিম মাখা, কিন্তু স্ত্রী সে নয়। যৌনতায় মাত হয়ে যাওয়া, কিন্তু মা সে হবে না। কোনও দায় তার নেই, দায়িত্বও নেই। আনন্দ তার কীসে, সে-ই জানে। কিন্তু ভয় তার নেই।

রাত ক্রমশ ফিকে হয়। দিনের আলো ফুটেও ফোটেনি। অন্ধকারে দেখা যায় আবছায়া। একাদশ তলের ২১বি ফ্ল্যাটের দরজা খোলে নিঃশব্দে। কারও কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে পড়ে ‘‘বেইবি’’। হলদে রঙের দামি সিল্কের শাড়ি এগিয়ে চলে করিডর বেয়ে, লিফ্‌টের দিকে। স্লিভলেস ব্লাউজ পেরিয়ে বেরিয়ে এসেছে সুগঠিত বাহু। পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে কোমর এবং…নিঃশব্দে উঠে আসে লিফ্‌ট। ঢুকে যায় একটা শরীর। দরজা বন্ধ হয়। নেমে যায় লিফ্‌ট।

ঘরে ফেরে ক্লান্ত শরীর। কাঁধ থেকে নেমে যায় বাদামি রঙের ব্যাগ। আলোআঁধারিতে আকাশ ভরেছে। জানলার কাছে দাঁড়ায় ‘‘বেইবি’’। ঠান্ডা হাওয়া মুখে এসে ঝাপটা দেয়। শুরু হয় অঙ্ক। শরীর-প্রেম= ০। প্রেম-দায়িত্ব=০। দায়িত্ব-স্নেহ=০।

সব এসে দাঁড়ায় সামনে। আলোআঁধারিতে দূর থেকে ভেসে আসে আহির ভৈরোঁ…

** গোটা প্রতিবেদনে ‘‘তুমি’’ সম্বোধন করে যাওয়া হল। কেন? ‘‘বেইবি’’ যে বড় কাছের…

আরএম-২০/১৯/১২ (লাইফস্টাইল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: এবেলা)