রূপচর্চার প্রসাধনীর নামে কী কিনছেন! (ভিডিওসহ)

রূপচর্চার প্রসাধনীর

দোকানের তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা রঙ বেরঙের প্রসাধনী সহজেই নজর কাড়ে যেকোনও বয়সের নারীদের। মানহীন এসব প্রসাধনী বিক্রির সময় তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক সনদ দিয়ে দেন দোকানিও। প্রসাধন ব্যবসায় সামাজিক দায়বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুললে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হলেন না দোকানদার। উত্তরটা মেলে কর্মচারীদের থেকে ((কমেন্ট))।

লালবাগে পাঁচতলা একটি বাড়ির চিলেকোঠায় শ্যাম্পুর কারখানা। তবে আসল নয়। নকল বিদেশি শ্যাম্পুর কারখানা এটি। গোপন ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে সেখানে হাজির হয় আমাদের অনুসন্ধানী টিম। যা দেখা গেল, তাতে চক্ষু ছানাবড়া। বাথরুমের ড্রামে গ্লিসারিন, লবণ, সাদা পাউডার আর পারফিউম মিশিয়ে বানানো হচ্ছে ভেজাল শ্যাম্পু। এরপর জোগাড় করে রাখা খালি কৌটায় পুরে নেওয়া হচ্ছে এক এক করে। এখান থেকে নকল লোগো ও স্টিকার লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মানের শ্যাম্পু বলে এগুলো ছাড়া হয় বাজারে।

একইভাবে গ্লিসারিন, রঙ আর সুগন্ধি দিয়ে বানানো হয় বিদেশি ফেইসওয়াশ। তৈরি হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাবানও। শ্রমিকরা জানান- ((কমেন্ট))

গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ইসলামবাগ এলাকার একটি কসমেটিকস কারখানার চিত্র আমাদের হাতে আসে। পানির সাথে মোম, গ্লিসারিন, রঙ আর পারফিউম মিশিয়ে সেখানে বানানো হচ্ছে বাথ লোশন। পাশাপাশি বিভিন্ন নামে বডি স্প্রে, পারফিউমসহ বেশ কয়েকটি পণ্য তৈরি করা হচ্ছে এখানে।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)’র অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই প্রসাধনী পণ্য বানাচ্ছে দেবীদেশ ঘাটের একটি কারখানা। সৌরভ, লাভলী নামের স্কিন ক্রিম, মেহেদি, ভ্যাসিলিনসহ প্রায় ২৮ ধরনের পণ্য তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এমন একটি ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় পাওয়া যায় নিষিদ্ধ মার্কারি, যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ((কমেন্ট))

৫ মিনিটেই রঙ ধারণ করে বাজারে এমন গোল্ড মেহেদি ব্যবহারে মারাত্মক ফোসকা দেখা দিয়েছে কারও কারও হাতে। রঙ, টিটানিয়াম ডাই অক্সাইড, গাম আর সাইট্রিক এসিড দিয়ে বানানো হচ্ছে বিষাক্ত এক মিশ্রণ। ভেষজ মেহেদির ছিটেফোঁটাও নেই, অথচ মেহেদি বলেই প্যাকেট করা হচ্ছে।

একই ধরনের গণবিরোধী অসাধু কর্মকাণ্ডের নজির মিললো রাজধানীর কোনাপাড়ার একটি বাড়িতে। চক পাউডারের সাথে নির্দিষ্ট সুগন্ধি ও রঙ মিশিয়ে সেখানে বানানো হচ্ছে মেকাপ ও ফেইস পাউডার। তৈরি করা হচ্ছে নানা ব্র্যান্ডের নকল পারফিউম।

মালিটোলার একটি বাড়িতে স্তুপ করে রাখা পারফিউম, শ্যাম্পু ও বডি স্প্রের খালি পুরোনো বোতলের সন্ধান পায় আমাদের টিম। এসব বোতল বিক্রি করা হয় ভেজাল ও নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানায়। ((কমেন্ট))

এছাড়া পাম ও সয়াবিন তেলের সঙ্গে সুগন্ধি মিশিয়ে বানানো হচ্ছে ভেজাল তেল। তারপর সেগুলো ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে নামীদামী ব্র্যান্ডের বোতলে। পেট্রোলিয়াম জেলির সঙ্গে তরল রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে বানানো হচ্ছে ভেজাল ভ্যাসলিন।

নকল প্রসাধনীর অসাধু উৎপাদন ও বিপণন শুধু বাংলাদেশেই হয় না। ভারত-চীনেও চলে এমন হীন কর্মকাণ্ড। সেসব দেশের নকল প্রসাধন সামগ্রীও আমদানি করে থাকে আমাদের দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র। ভেজাল মেহেদি ও অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করে খোসপাঁচড়াসহ মারাত্মক সব চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সহজ-সরল মা-বোনেরা। অন্যদিকে ভেজাল পণ্যে বাজার সয়লাব হওয়ার কারণে হুমকির মুখে পড়ছে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রসাধন শিল্প। তাই এই ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ‘জিরো টলারেন্স’ জরুরি মনে করছেন সচেতন মহল।

আরএম-০৯/০২/০৩ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)