ভবিষ্যতে যে চাকরিগুলো জনপ্রিয় হবে

ভবিষ্যতে যে চাকরিগুলো

দিন দিন বদলাচ্ছে চাকরির বাজার। গত বছরের সাথে তুলনা করলে চলতি বছরের পরিবর্তনগুলো সহজেই লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে বৈশ্বিক এবং দেশীয় চাকরির বাজারের দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যায়, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রযুক্তি নির্ভর চাকরির চাহিদাও বেড়েছে বেশ। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে পরিবর্তন হচ্ছে চাকরির ধরণ এবং সাফল্যের মাপকাঠি। নতুন ধাঁচের কাজের সাথে পরিচিত হচ্ছে মানুষ। তাই এখন একজন ছাত্র কোন বিষয় নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করবে তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের চাকরির হাল চালের উপর।

ফিন্টেক টেকনিশিয়ান (ফিনেন্সিয়াল টেকনোলজিস্ট)

বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই এখন চলছে মোবাইল ব্যাংকিং আর অনলাইন ব্যাংকিং । সবার বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছে এই সেবা। কিন্তু বিশ্বজুড়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এই সেক্টরে কাজ করার জন্য দক্ষ জনশক্তির অভাবে ভুগছে সবসময়ই। গতানুগতিক ফিনেন্সের রিপ্লেস্মেন্ট হচ্ছে এই ফিনেন্সিয়াল টেকনোলজি, তাই একাউন্টিং আর ফাইনান্স নিয়ে মেজর করা ছাত্রছাত্রীরা ফিন্টেক নিয়ে করে ফেলতে পারেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে অনলাইনে কোর্স চালু করেছে। এছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি কোর্সটি অফার করছে।

ফিউশন রি-অ্যাক্টর ( ফিউশন রি-অ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণ করা )

বাংলাদেশে বিদ্যুতের সংকট কাটাতে সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই হবে মানুষের বিদ্যুতের জোগানদাতা। তবে বর্তমানে ফিউশন প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

ফ্রান্সে ২০১৯ সালে চালু হবে পৃথিবীর প্রথম থার্মো নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর, যেখানে ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এর ফলে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেই বাংলাদেশের মতো একটি দেশের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এসব ফিউশন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রয়োজন পড়বে দক্ষ মানুষের, যারা ডায়াগনস্টিক পদার্থবিদ, ম্যাগনেট অক্সিলারি কর্মকর্তা, রেডিয়েশন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। এইসকল বিষয়ে পড়তে চাইলে ইউএস বার্নিং প্লাজমা আইটিইআর সামার স্কুল আন্তর্জাতিকভাবে খুব জনপ্রিয়।

নভো পাইলট (মহাবিশ্বে নভোযান চালক)

ভার্জিন গ্যালাক্টিক ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০২১ সাল থেকে নিয়মিত মহাকাশ ভ্রমণ পরিচালনা করবে, যার প্রতিটি আসনের মূল্য হবে দুই লাখ পাউন্ড। অবশ্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই খাতে বিনিয়োগ শুরু করলে বিশাল এই খরচটা নিশ্চিতভাবেই কমে আসবে এবং অনেক মানুষ মহাকাশ পরিভ্রমণে যাবে। ভবিষ্যতে বিনোদনের অন্যতম জায়গা হবে মহাকাশ।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রতিদিন একটি নভোবিনোদন করে অভিযান পরিচালনা হবে। এখন যারা বৈমানিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর, তাঁরা বরং প্রস্তুত হয়ে যান ভবিষ্যতের বৈমানিক হওয়ার জন্য । নভো পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে অবশ্যই বিমানে পড়ার স্কুল থেকে পড়াশোনা করতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে মহাকাশ গবেষণাগারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ।

থট হ্যাকার ( অন্যদের চিন্তা বুঝতে পারা )

ব্রেইন কম্পিউটার হয়তো আর দূরের কোনো বিষয় নয়। ভবিষ্যতে হয়তো এমন কিছু আবিষ্কার হবে, যার সাহায্যে পক্ষাঘাতগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি মস্তিষ্ক দিয়ে কম্পিউটার চালনা করতে পারবে।বর্তমানে মনের ভেতরের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা বাইরে থেকে বোঝার জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। ক্যালিফোর্নিয়া অব বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যাক গ্যালান্ট ইতিমধ্যে মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করার জন্য একটি যন্ত্রের নকশা করেছেন। এ ছাড়া মনোবিদ্যা নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। সাইকো থেরাপি ও প্রযুক্তির মনোবিদ্যা নিয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে। এতে মানুষের চোখের ভাষা ও মস্তিষ্কের ভেতরের বিভিন্ন সংকেতের বিশ্লেষণ করা হবে আগামী দিনের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পেশা। তাই এই পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে করে ফেলতে পারেন নিউরোসায়েন্স ও কম্পিউটার-বিজ্ঞানে পিএইচডি এবং এই সংক্রান্ত পড়াশোনা।

মহাবৈশ্বিক স্থপতি (মহাজাগতিক স্থাপনার পরিকল্পনা করা)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা বলেছে, ২০২৫ সালের মধ্যেই মানুষ অন্য গ্রহে যাবে। সেখান থেকে মূল্যবান খনিজ সংগ্রহের কথাও তারা বলেন। সে সময় মঙ্গলগ্রহে শূন্যের নিচে তাপমাত্রা থেকে অত্যন্ত উষ্ণ তাপমাত্রার আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন পড়বে উন্নত যন্ত্রপাতি। কীভাবে খরচ কমিয়ে ভালো ডিজাইন করা যায়, তার ওপর নির্ভর করবে মানুষ কত দ্রুত মঙ্গলে বসবাস শুরু করবে।

এছাড়া অধিকসংখ্যক মানুষ বাস করা শুরু করলে প্রয়োজন হবে নির্দিষ্ট ধরনের জীবনধারা, যা তৈরি করে দিতে হবে প্রকৌশলী ও স্থপতিদেরই।পৃথিবীর উপর চাপ কমাতে ইতোমধ্যেই মহাকাশকে মানুষের বাসযোগ্য করা যাবে কিনা তা নিয়ে হয়ে গেছে অনেক গবেষণা। স্থায়ী বসবাসের জন্য মঙ্গলে প্রথম বাংলাদেশি বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন লুলু ফেরদৌস। মহাবৈশ্বিক স্থপতি হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে করতে হবে মহাকাশ স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি । বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয় পড়ানো হয়।

মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষক (কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা)

কিছুদিন আগেই উৎক্ষেপণ করা হল বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। যা দিয়ে করা হবে জনসংখ্যা, বিভিন্ন এলাকা, তাপমাত্রা, সমুদ্রের গভীরতা, রোগ ও মহামারির ভয়াবহতা নির্ণয় ইত্যাদি কাজের জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পর্যবেক্ষণের এই কাজের গুরুত্ব ও পরিধি আরও বেড়ে যাবে।

এতদিন মানুষ পৃথিবী থেকে মহাকাশ দেখত, সামনে আকাশ থেকে পৃথিবী দেখার জন্য পর্যবেক্ষকের প্রয়োজন পড়বে। পর্যবেক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে নৃবিজ্ঞান ও ভূ-পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতকেরা অগ্রাধিকার পাবেন।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নকশাবিদ (মানুষের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি)

মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা দিনে দিনে বাড়ছে। এ কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে বাইপাস সার্জারি, হূৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন ইত্যাদি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু অনেক সময়ই প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় হৃদপিণ্ড পাওয়া যায় না।

অন্যদিকে, ২০৫০ সালে মানুষের সংখ্যা হবে দ্বিগুণ। ফলে প্রয়োজন পড়বে কৃত্রিম হূৎপিণ্ডের। তাই হৃদপিণ্ডসহ মানুষের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন হাত-পা, কান, যকৃৎ, ফুসফুস, রক্তনালি, শ্বাসনালিসহ সবকিছুই বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে বানানোর চেষ্টা করছেন। ৩ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে সফলতা। এই বিষয়ে কাজ করতে চাইলে পড়তে হবে জীব প্রকৌশল।

জেনেটিক ডক্টর (জন্মের আগেই রোগ থেকে মুক্তি)

ভবিষতে বিজ্ঞানের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে জিনপ্রযুক্তি। ওষুধশিল্পেও চলে আসবে জেনেটিক ওষুধ। খাবারের ক্ষেত্রেও থাকবে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড খাবার। তখন নিশ্চয় বিজ্ঞানীরা পুরোপুরিভাবে জেনে যাবেন কোন কোন রোগের জন্য কোন জিন দায়ী।

এতে কিছু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে, যাঁরা শিশু মায়ের গর্ভে থাকতেই জেনেটিক প্রকৌশল খাটিয়ে রোগের জন্য দায়ি জিনগুলো সরিয়ে দেবেন। ফলে জন্মের পর তাকে আর ক্যানসার, ডায়াবেটিস বা অটিজমের মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে হবে না।জিনবিজ্ঞান নিয়ে বাংলাদেশেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে কাজ হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালেও জিনবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের নেওয়া হচ্ছে।

আরএম-০৬/২১/০৩ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)