কেমন বালিশে ঘুমানো উচিত?

বালিশ নিয়ে অনেকেই খুব খুঁতখুঁতে হন৷ নজের প্রিয় বালিশটি ছাড়া ঘুম হয় না অনেকেরই৷ কারও আবার বালিশই ঠিক হয় না রাতে৷ বালিশের কারণে ঘুমই হয় না সারারাত৷ এমনই কিছু অদ্ভুত সমস্যা প্রতি রাতেই দেখা যায় ঘরে ঘরে৷ আপনার সেই সাধের বালিশ পুরনো হলে নতুন বালিশ নির্বাচন করবেন কিভাবে? দেখে নিন কোন ধরণের বালিশ ঘুমের জন্য আদর্শ৷

১। আকৃতি-

বালিশের আকৃতি আপনার পছন্দ মতোই নির্বাচন করতে পারবেন। তবে খুব বেশি ছোট বালিশে আপনার ঘুম ভাল হবে না। মিডিয়াম, লার্জ, স্ট্যান্ডার্ড, কিং, কুইন ইত্যাদি নানা মাপের তৈরি করা বালিশ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। এর থেকে আপনার পছন্দসই একটি বালিশ বেছে নিতে পারেন।

২। বালিশের উচ্চতা-

অতিরিক্ত উঁচু বা একদম নিচু বালিশ ঘুমের জন্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভাল নয়। বালিশের উচ্চতা হওয়া উচিত মাঝারি। বালিশের উচ্চতা এমন হওয়া উচিত, যাতে কাঁধ বা ঘাড় না বাঁকিয়ে মোটামুটি সোজা বা সমান্তরাল রেখে শোয়া যায়। যদি এক পাশে ফিরে শোয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে বিছানায় শোয়ার পরে কাঁধের সঙ্গে গলার উচ্চতা যত টুকু তত টুকুই হওয়া উচিত বালিশের উচ্চতা। আর যদি আপনি চিৎ হয়ে শুতে পছন্দ করেন, তাহলে আপনার ঘাড় এবং বালিশের উচ্চতা সমান্তরালে থাকা উচিত।

৩। বালিশের উপকরণ-

বালিশের উপরকরণ প্রাকৃতিক হওয়াই ভাল। ফোমের বালিশ বেশ নরম হলেও ঘুমানোর জন্য মোটেই তেমন আরামদায়ক নয়। এ ধরণের বালিশে স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়। তাই তুলার তৈরি বালিশই ভাল ঘুম এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৪। বালিশের কভার-

বালিশের কভার খুব বেশি খসখসে হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে কারুকাজ করা চাদরের সঙ্গে যেই বালিশের কভারগুলো দেওয়া থাকে সেগুলো রাতে ঘুমানোর সময় ব্যবহার করা উচিত না। বালিশের কভার হিসেবে নরম সুতি কাপড়ের কিংবা সার্টিন কাপড়ের কভারই সবচেয়ে ভাল।

এদিকে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ জানান, সঠিক বালিশের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিক বালিশের ব্যবহার না হলে ঘাড়, কাঁধ এসব অঙ্গে ব্যথা হতে পারে। বালিশ নির্বাচনে ফোম ব্যবহার না করে তুলার বালিশ ব্যবহার করাই ভালো। বালিশ বেশি উঁচু হবে না, আবার খুব নিচুও হবে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, কে কীভাবে ঘুমায় সেটার ওপর নির্ভর করে বালিশ নির্বাচন করতে হবে। এমনভাবে বালিশ ব্যবহার করতে হবে যেন মেরুদণ্ড সোজা থাকে। সাধারণত বালিশের উচ্চতা চার থেকে ছয় ইঞ্চি হতে পারে। তবে শারীরিক গঠন অনুযায়ী বালিশের উচ্চতা বাড়তে পারে।

আমাদের দেশের বালিশগুলো সাধারণত শক্ত থাকে। এগুলো ব্যবহার ভালো। যেসব বালিশে মাথা একেবারে ডুবে যায়, সেগুলোর ব্যবহারে মেরুদণ্ডের অবস্থান ঠিক থাকে না। এগুলো তেমন স্বাস্থ্যকরও নয়।

ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘সাধারণত আমরা তিনভাবে ঘুমাই। কেউ কাত হয়ে, কেউ চিত হয়ে এবং কেউ উপুড় হয়ে ঘুমাই। কাত হয়ে শুলে খেয়াল রাখতে হবে ঘাড় এবং কাঁধে যেন দূরত্ব থাকে। কাত হয়ে শুলে বালিশ একটু উঁচু হতে হবে। যেন মেরুদণ্ড একই লেভেলে থাকে। এ ক্ষেত্রে একটু শক্ত বালিশ ব্যবহার করাই ভালো। এ ছাড়া কাত হয়ে শুলে দুই হাঁটুর মাঝখানে বালিশ দিয়ে শোয়া ভালো। এতে মেরুদণ্ড সাপোর্ট পাবে।’

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু আরো বলেন, ‘চিত হয়ে শুলে অনেকে মাথার নিচে দুটো বালিশ দেয়। এটি ঠিক নয়। এতে মাথা উঁচু হয়ে থাকে এবং কাঁধে ব্যথা হতে পারে। একটি বালিশ ব্যবহার করাই ভালো। এ ছাড়া চিত হয়ে শুলে হাঁটুর নিচে একটি বা দুটো বালিশ রাখা যেতে পারে। আর উপুড় হয়ে শুলে একটু পাতলা বা নরম বালিশ ব্যবহার করতে হবে; এই বালিশের উচ্চতা কম হলে ভালো হয়। যেন ঘাড় এবং মাথা কাছাকাছি থাকে।’

এক থেকে দেড় বছরের বেশি কোনো বালিশ ব্যবহার করা ভালো নয় জানিয়ে তিনি বলেন, দুই বছর হলে অবশ্যই বালিশ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। উলের বালিশ, সিনথেটিক বা ফোমের বালিশ ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। তুলার বালিশ ব্যবহার করা ভালো।

আরএম-১৯/১৮/০৫ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)