ঈদের দিনে বাড়িতে রান্না করুন মুরগীর ভিন্ন ৫ রেসিপি

ঈদের দিনে বাড়িতে

মুরগীর মাংস হচ্ছে এমন একটি উপকরণ যা রোজকার পাত থেকে বিশেষ অনুষ্ঠানের পদে জায়গা করে নিতে পারে। এই ঈদে মুরগীর মাংস ভিন্নভাবে ব্যবহার করে আপনি বানাতে পারেন কখনও দেশী খাবার ও কখনও বা বিদেশি খাবার।

মুরগীর মাংস দিয়ে বানানো মন মাতানো কয়েকটি সুস্বাদু রেসিপি নীচে দেওয়া হল। দেখে নিন এবং বাড়িতে বানিয়ে আপনজনদের খুশী করুন।

লাখনোউ স্পেশাল মুরগীর কোরমা

লাখনোউ স্পেশ্যাল মুরগীর কোরমা নাম শুনে যতই মনে হতে পারে এটি রান্না করা খুবই ঝামেলা। আসল কোরমা বানানো খুব কঠিন। কিন্তু চিকেন কোরমা অত্যন্ত সুস্বাদু এবং রান্নাও খুব সোজা। তাই নবাবের শহর লাখনোউ থেকে আমরা আজ মুরগীর কোরমা বেছে নিয়েছি আপানাদের কাছে তুলে ধরার জন্য। তাহলে আসুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে বানাবেন এই লাখনোউ স্পেশ্যাল মুরগীর কোরমা।

উপকরণ

মুরগীর মাংস ১ কেজি (মাঝারি মাপের টুকরা), ঘি ৪ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ ৪টি (স্লাইস), ছোট এলাচ ৫টি, লবঙ্গ ৫-৬টি, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, দই ১ কাপ, ধনে গুড়া ২ টেবিল চামচ, লাল মরিচের গুড়া ১ চা চামচ, হলুদ গুড়া ১ টেবিল চামচ, গরম মশলা গুড়া ১/২ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো ।

প্রণালী

মাংসের টুকরোগুলি ভাল করে পরিষ্কার করুন। অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে শুকিয়ে নিন। একটি কড়াইতে ঘি গরম করুন। এতে পেঁয়াজের স্লাইস দিয়ে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজের রং বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন। এবার ভাজা পেঁয়াজ তুলে নিন। অতিরিক্ত তেল ঝরিয়ে নিন। ভাজা পেঁয়াজ একটু পানি দিয়ে ভাল করে বেটে নিন। একটা মিহি পেস্ট তৈরি হলে পাশে সরিয়ে রেখে দিন। এবার এই কড়াইতেই ছোট এলাচ ও লবঙ্গ দিয়ে ভাজতে থাকুন। এবার এতে মাংসের টুকরা দিয়ে দিন। ৪-৫ মিনিট নাড়াচাড়া করুন। মাংসের টুকরোগুলি তুলে আলাদা সরিয়ে রাখুন। এবার ওই একই তেলে আদা-রসুন বাটা দিন। তাতে হলুদ গুড়া, ধনে গুড়া, মরিচ গুড়া দিয়ে ২-৩ মিনিট ভাজুন। আবার ভাজা মাংস কড়াইতে দিয়ে দিন। ৪-৫ মিনিট রান্না করুন। একটি বাটিতে দই ও পেঁয়াজ বাটা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। মাংসের কড়াইতে ঢেলে দিন দই-পেঁয়াজের পেস্টটা। লবণ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ঢেকে দিন। ২০-২৫ মিনিট হাল্কা আঁচে রান্না হতে দিন। এতে ছোট কাপের দেড় কাপ পানি কিছু সময় পর পর দিতে থাকুন। মাংস পুরোপুরি সিদ্ধ হয়ে গেলে গরম মশলা গুড়া উপর থেকে ছড়িয়ে দিন। ঢাকা দিয়ে হাল্কা আঁচে আরও ১০ মিনিট রান্না করুন। তৈরি লাখনোউ স্পেশ্যাল মুরগীর কোরমা।

স্পাইসি থাই চিকেন উইথ বেসিল

মোগলাই, চাইনিজ বা কন্টিনেন্টাল যে কোনও খাবারেই মুরগীর মাংস সমানভাবেই জনপ্রিয়। চাইনিজ তো প্রায়ই খাওয়া হতে থাকে, মোগলাই খাবারও চলে মাঝেমধ্যেই। আসুন না এবার একটু থাই খাবারের স্বাদ নেওয়া যাক।

আজকে আমরা বানাব এমন একটি থাই চিকেন রেসিপি যা অতি সহজেই বানিয়ে ফেলা যায়। স্পাইসি থাই চিকেন উইথ বেসিল।

উপকরণ

চিকেন ব্রেস্ট ৪ টি (ছোট টুকরো করে কাটা), বেসিল ১/২ কাপ, লাল কাঁচা মরিচ ৩ টি (কুচি), রসুন কুচি ২ টেবিল চামচ, ফিশ সস ১ টেবিল চামচ, সয়া সস ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১ চা চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ।

প্রণালী

মাংস ভাল করে পরিষ্কার করে নিন ধুয়ে। এবার ফিশ সস দিয়ে ম্যারিনেট করে রেখে দিন। একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ তেল দিন। এতে রসুন কুচি দিয়ে দিন। ভাল করে ভাজা ভাজা করুন। এতে ম্যারিনেট করা চিকেন দিয়ে দিন। ভাল করে নাড়ুন। অন্য একটি পাত্রে বাকি তেল গরম করুন। এতে বেসিল দিয়ে মুচমুচে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এবার ভাজা বেসিল আলাদা রেখে দিন। চিকেনের পাত্রটিতে সয়া সস, লাল কাঁচা মরিচ, লবণ ও চিনি ভাল করে মেশান। হাল্কা আঁচে ততক্ষণ রান্না করুন যতক্ষণ না মাংস একেবারে ভালভাবে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এবার একে ভাজা বেসিল দিয়ে ভালভাবে নেড়ে নিন। রান্না হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে দিন এবং গরম গরম পরিবেশন করুন।

বাদামি মুরগী

বাড়িতে অতিথি আসছেন? নতুন কিছু খাইয়ে তাক লাগিয়ে দিতে চাইছেন। চাইছেন আপনার রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোন অতিথি। আপনার সমস্যার সমাধান রয়েছে আমাদের হাতে। বাদামি মুরগী। এই শাহি রেসিপিটি বানানো একটু সময় সাপেক্ষ হলেও, যদি হাতে সময় থাকে তাহলে খুব একটা ঝামেলা হবে না বানাতে। তবে এই মাংসে আমন্ড, ঘি, দুধের মতো উপকরণ থাকায় রান্নাটি গুরুপাক। তবে স্বাদে অতুলনীয়। তাহলে আসুন দেখে নেওয়া যাক কী কী লাগবে এই সুস্বাদু বাদামি মুরগী বানাতে।

উপকরণ

মুরগীর মাংস ১ কেজি (মাঝারি টুকরা), লেবুর রস ২ টেবিল চামচ, লাল মরিচ গুড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, পানি ঝরানো টক দই ৩ টেবিল চামচ, গরম মশলা পাউডার ১ চা চামচ, পেঁয়াজ ৩টি (পাতলা ফালি করে কাটা বা স্লাইস), আদা ও রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, ছোট এলাচ ৪টি, গোটা দারচিনি ১ টি, লবঙ্গ ৫টি, তেজপাতা ১টি, চিনি ১চা চামচ, আমন্ড ১/২ কাপ (সারা রাত পানিতে ভেজানো এবং খোসা ছাড়ানো), দুধ ১/২ কাপ, হলুদ গুড়া ১ চিমটি, জায়ফল গুড়া ১ চিমটি, ঘি ৩ টেবিল চামচ, ধনেপাতা ২ টেবিল চামচ (পরিবেশনের জন্য কুচি করা), আমন্ড স্লাইস পরিবেশনের জন্য।

প্রণালী

মুরগীর মাংস ভাল করে ধুয়ে নিন। তারপর একটি কিচেন টাওয়ালে রেখে ভাল করে মুছে শুকিয়ে নিন মাংসের টুকরোগুলি। দুধ আর খোসা ছাড়ানো ভিজানো আমন্ড একসঙ্গে পিষে একটা ঘন পেস্ট বানিয়ে নিন। দই ও গুড়া মশলাগুলি একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট বানান। তাতে নুন ও লেবুর রসও দিয়ে দিন। এই পেস্টে মাংসগুলি ভাল করে ম্যারিনেট করুন। ম্যারিনেট করা মাংস ৫-৬ ঘন্টা ঢাকা দিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। মাংস ম্যারিনেট হয়ে গেলে, একটু কড়াইয়ে ঘি গরম করুন। গরম ঘিতে তেজপাতা, দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ দিয়ে দিন। কড়াইয়ে গোটা গরম মশলা দেওয়ার ১ মিনিট বাদে এতে চিনি ও পেঁয়াজ দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ৫-৬ মিনিট সোনালি করে ভাজুন। এতে আদারসুন বাটা দিয়ে দিন। ২-৩ মিনিট আবার ভাল করে ভাজুন। এবার এই ভাজা মশলায় ম্যারিনেট করা মাংসটা দিয়ে দিন। ম্যারিনেশনের পেস্টটাও দিয়ে দিন। ভাল করে মিশিয়ে নাড়াচাড়া করুন। প্রায় ৭-৮ মিনিট ভাল করে কষে নিন এই মশলাসহ মাংসটা। ভাল করে কষা হলে একে আমন্ড দুধের পেস্ট এবং জায়ফল গুড়া দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে দিন। এর মধ্যে পরিমাণ মতো পানি দিন। পানি ও মশলা ভাল করে মিশিয়ে দিন। ঢাকা দিয়ে ১৫-২০ মিনিটে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। দেখে নিন ভাল করে মাংস সিদ্ধ হয়েছে কিনা। না হলে আরও ৫ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। রান্না হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে দিন। ধনেপাতা এবং আমন্ড স্লাইস দিয়ে ভাল করে পরিবেশন করুন।

ধনিয়া পোস্ত চিকেন

পোস্ত দিয়ে শুধু নিরামিষ রান্না হয় না, মুরগীর মাংসও রান্না করতে পারবেন৤ পোস্ত দিয়ে মুরগীর এই রান্নাটি অভিনব। চলুন দেখে নেই রেসিপি-

উপকরণ

মুরগীর মাংস ১ কেজি (মাঝারি টুকরা), আদা-রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ ২টি (বড় মাপের মিহি করে কুচি করা), দই ২ বড় চামচ, কাঁচা মরিচ ৪টি, শুকনো মরিচ ১টি ফোড়নের জন্য, কালো জিরা ১/২ চা চামচ ফোড়নের জন্য, ধনে পাতা ১ কাপ (কুচি), পোস্ত ৪ টেবিল চামচ (পানিতে ভেজানো), হলুদ গুড়া ১ চিমটি, লবণ স্বাদ মতো, সরষের তেল ৩ টেবিল চামচ, পানি ২ কাপ, সাজানোর জন্য ২ চামচ ধনেপাতা কুচি।

প্রণালী

ভেজানো পোস্ত, ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ একসাথে ভাল করে বেটে নিন। এতে দই দিয়ে আবারও ভাল করে পেস্ট করে নিন। যেন মিহি একটা পেস্ট তৈরি হয়। এবার মাংস ভাল করে ধুয়ে নিন। মাংসের মধ্যে পোস্তর পেস্ট, হলুদ দিয়ে ভাল করে ম্যারিনেট করে রেখে দিন প্রায় ২ ঘন্টা। মাংস ম্যারিনেট হয়ে গেলে একটি কড়াইয়ে তেল দিন। তেল ভাল করে গরম হলে তাতে শুকনো মরিচ ও কালোজিরা ফোড়ন দিন। এরপর এতে পেঁয়াজ দিয়ে দিন। ৫-৭ মিনিট হাল্কা আঁচে ভাল করে ভাজতে থাকুন। এর মধ্যে আদা রসুন বাটা দিয়ে দিন। আরও ৫-৭ মিনিট ভাল করে ভাজুন হাল্কা আঁচে। দেখবেন যাতে তলায় লেগে না যায়। এবার এতে ম্যারিনেট করা মাংসটা দিয়ে দিন। লবণ দিন। ভাল করে কষাতে থাকুন। (প্রেসার কুকারে করবেন না।) ১৫ মিনিট কষানো হয়ে গেলে তাতে অর্ধেক জল দিয়ে দিন। ঢাকা দিয়ে আরও ১৫ মিনিট রান্না করুন। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে দেখে নেবেন তলা ধরে যাচ্ছে কিনা। এবার বাকি পানি দিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করুন। আপনি যদি ঝোল ঝোল চান তাহলে একটু পানি দিতে পারেন। রান্না হয়ে গেলে উপর থেকে ১ টেবিল চামচ কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে দিন। ধনেপাতা কুচি ও চেরা কাঁচামরিচ দিয়ে পরিবেশন করুন।

শাহী মুরগী

শাহী রান্না বলতে আমরা মোঘলদের খাবার বুঝি। এখানে রেসিপিতে মশলার ভারসাম্য রয়েছে সঙ্গে ক্রিমের অসাধারণ ব্লেন্ড।

উপকরণ

মুরগীর মাংস ১ কেজি (মাঝারি টুকরা করে কাটা), দই ৩/৪ কাপ, ধনে গুড়া ১ টেবিলচামচ, জিরে গুড়া ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুড়া ১ চিমটি, আদারসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৩ টি (চেরা), লবণ স্বাদমতো, দারচিনি ১ টি, বড় এলাচ ২টি লবঙ্গ ৪টি, লাল মরিচ গুড়া দেড় চা চামচ, টমেটো পিউরি ১/৪ কাপ, কাজু ৫-৬ টি, ভাজা পেঁয়াজের পেস্ট ৩/৪ কাপ, এলাচ গুড়া আধ চা চামচ, জায়ফল গুড়া ১ চিমটি, গরম মশলা পাউডার ১ চা চামচ, গাঢ় নারকেল দুধ আধ কাপ, ঘি ২ টেবিলচামচ।

প্রণালী

মাংসের টুকরোগুলি ভাল করে ধুয়ে পরিস্কার করে শুকিয়ে নিন। দই, ধনে গুড়া, জিরে গুড়া, হলুদ, লবণ, মরিচ গুড়া, আদারসুন বাটা ভাল করে মিশিয়ে একটি ব্যাটার তৈরি করুন। এই ম্যারিনেশনে ৩০ মিনিট মাংসের টুকরোগুলি ম্যারিনেট করুন। কাজুবাদাম হাল্কা পানি দিয়ে বেটে একটা ঘন পেস্ট তৈরি করুন এবং আলাদা রেখে দিন। একটি পাত্রে ঘি গরম করুন। তাতে গোটা গরমমশলাগুলি দিয়ে দিন। ১ মিনিট ভাজুন।

এরপর ম্যারিনেট করে মাংসের টুকরোগুলি দিয়ে দিন। গনগনে আঁচে ৩-৪ মিনিট রান্না করুন টমেটো পিউরি দিয়ে ভাল করে কষতে থাকুন। এতে পেঁয়াজ বাটাটা দিয়ে আরও ৩-৪ মিনিট রান্না করুন।

এতে কাজুর পেস্ট, এলাচ গুড়া, জায়ফল গুড়া, গরম মশলা, চেরা কাঁচা মরিচ দিয়ে মাঝারি আঁচে ৫-৬ মিনিট রান্না করুন। এতে স্বাদমতো লবণ এবং নারকেলের দুধ দিন। ঢেকে দিয়ে হাল্কা আঁচে ২০ মিনিট রান্না করুন। হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে দিন। তন্দুরি রুটি দিয়ে পরিবেশন করুন।

আরএম-৩৭/০৩/০৬ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)