উকুন সহজেই একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়

উকুন সহজেই একজন

আপনি হয়তো মনে করেন, উকুন খুব সহজেই একজন থেকে অন্য আরেকজনে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। আসলে ছোট আকারের এই পরজীবীগুলো উপযুক্ত পরিবেশ এবং খাদ্য সরবরাহ না পেলে উপদ্রব জমাতে পারে না।

* উকুনে আক্রান্ত কারো পাশে দাঁড়ানো

আমরা অনেকেই মনে করি উকুন লাফিয়ে একজনের মাথা থেকে অন্য আরেকজনের মাথায় চলে যায় কিন্তু আসলে উকুনের লাফানোর ক্ষমতা নেই। উকুনে আক্রান্ত কারো মাথার সঙ্গে আপনার মাথা স্পর্শ না হলে আপনার মাথায় উকুন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ডা. ক্রিস্টা লোওয়ার এ বিষয়ে বলেন, ‘উকুনে আক্রান্ত ব্যক্তির মাথার সঙ্গে সুস্থ কারো মাথা সরাসরি স্পর্শ হলে সুস্থ ব্যক্তির উকুনে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। মানুষের মাথায় বসবাসকারী উকুন সাধারণত এভাবেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যায়।’

* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব

উকুনেরা মূলত মানুষের মাথায় বসবাস করে এবং মানুষের রক্ত পান করে জীবনধারণ করে। চুলে ময়লা বা খুশকি থাকার সঙ্গে মাথায় উকুনের উৎপত্তির কোনো সম্পর্ক নেই। মাথায় চুল থাকলেই উকুনের ঝুঁকি থাকবে। তার মানে এই নয় যে, আপনি কয়েকদিন ধরে গোসল করেননি বলে আপনার মাথায় উকুন হবে। মাই হেয়ার হেলপার-এর প্রতিষ্ঠাতা এমি চিনিয়ান বলেন, ‘কারো চুল আঠালো হলে সেখানেই বরং উকুনের বংশবৃদ্ধি মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। আঠালো চুলে ডিম পাড়া উকুনের জন্য কঠিন। বরং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন চুল উকুনদের ডিম পাড়ার পছন্দের পরিবেশ। তাই বলে ময়লা চুলে উকুন খোঁজা উপেক্ষা করা উচিত হবে না, এসব চুলে একবার উকুন পাওয়া গেলে তা মারাত্মক ভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।’

* পোষা প্রাণী

আপনার মাথার উকুনের সঙ্গে আসলে পোষা প্রাণীদের কোনো সম্পর্কই নেই। কেননা মাথায় বসবাসকারী উকুন একমাত্র মানুষের চুলেই পাওয়া যায়, অন্যান্য প্রাণীদের চুলে এই উকুন বাস করে না। ডা. চিনিয়ান বলেন, ‘মাথার উকুনদের পক্ষে আপনার পোষা প্রাণীর দেহে জীবিত থাকা সম্ভব নয়; কেননা মানুষ এবং বিভিন্ন পোষা প্রাণীদের দেহের তাপমাত্রা যথেষ্ট ভিন্ন। তাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের মাছি এবং অন্যান্য পোকারা জায়গা তৈরি করে নিয়েছে যারা কখনো আপনাকে বিরক্ত করবে না।’

* স্কুলের ক্লাসরুম অথবা গেমসরুম

আপনার সন্তানের সহপাঠীদের কারো মাথায় উকুন থাকলে সেটা অবশ্য আতঙ্কের ব্যাপারই বটে। তবে এর জন্য আপনার সন্তানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করার কোনো দরকার নেই। তাছাড়া ক্লাসরুম বা গেমসরুম থেকে উকুন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও তেমন একটা থাকে না। শুধু খেয়াল রাখুন উকুনে আক্রান্ত সহপাঠীর সঙ্গে আপনার সন্তান যেন বেশি ঘনিষ্ঠ না হয়ে যায়। ডা. চিনিয়ানের মতে, ‘উকুনেরা হচ্ছে একপ্রকার পরজীবী পোকা যা মাথার ত্বকে বাস করে। এর অর্থ হচ্ছে তারা রক্তের সংস্পর্শে না থাকলে খুব তাড়াতাড়ি মারা যাবে। যদিও উকুনেরা চুলের বাইরে ২৪-৩৬ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু একবার রক্তের উৎস থেকে বেরিয়ে গেলে তারা দুর্বল হয়ে যায় এবং চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।’

* থিয়েটারের সিট

একমাত্র মানুষের মাথা ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে উকুনেরা জীবিত থাকতে পারে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তির মাথায় উকুন আছে, তিনি যতক্ষণ থিয়েটারে থাকবেন উকুনও ততক্ষণই সেখানে থাকবে। থিয়েটারের সিটে উকুনের আধিপত্য বিস্তার করা একেবারেই অসম্ভব। ডা. চিনিয়ান এ বিষয়ে বলেন, ‘একটি উকুন আপনার মাথা ত্যাগ করা মানে সেটি হয়তো মৃত, মৃতপ্রায় অথবা সে নতুন কোনো মাথা বেছে নিয়েছে। উকুনেরা মূলত উপযুক্ত একটি উৎস অর্থাৎ চুলে ভরা নতুন একটি মাথার খোঁজে থাকে। রক্তহীন থিয়েটারের সিটে তাদের জন্য কিছুই নেই।’ থিয়েটারে একটিমাত্র ঝুঁকি রয়েছে। সেটি হচ্ছে, উকুনে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির মাথার সঙ্গে যদি আপনার মাথা ঘনঘন স্পর্শ হয়, সেক্ষেত্রে তার মাথা থেকে আপনার মাথায় উকুন চলে আসতে পারে।

* আপনার বাড়ি

আপনার বাড়িতে কেউ উকুনে আক্রান্ত হলে সময়, অর্থ এবং শক্তি খরচ করে জীবাণুনাশক বিভিন্ন শক্তিশালী কেমিক্যাল দিয়ে বাড়ির প্রতিটি অংশ পরিষ্কার করার কোনো দরকার নেই। কেননা মানুষের মাথার বাইরে উকুনেরা ২৪-৩৬ ঘণ্টার বেশি বেঁচে থাকে না। ডা. লোওয়ারের মতে, ‘বাড়িতে কারো মাথায় উকুন থাকলে কার্পেট বা সোফায় বসার কারণে উকুন ছড়িয়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

* বিছানা এবং বালিশ

বিছানা এবং বালিশের সঙ্গে আমরা দিনের ৭-৯ ঘণ্টা সময় কাটিয়ে থাকি। তার মানে এই নয়, আপনি যার সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমান তার মাথায় উকুন থাকলে তা বিছানা অথবা বালিশের মাধ্যমে আপনার মাথায় চলে আসবে। তবে হ্যাঁ, আপনি যার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমান সে উকুনে আক্রান্ত হলে আপনাদের মাথায় স্পর্শের ফলে উকুন ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বিছানা এবং বালিশের কোনো ভূমিকা নেই। ডা. লোওয়ার এ বিষয়ে বলেন, ‘এক্ষেত্রে বিছানার চাদর এবং বালিশের কাভার ভালোমতো পরিষ্কার করা জরুরি হলেও এভাবে উকুন সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম।’

* জামা-কাপড়

উকুনেরা যেহেতু মানুষের মাথার বাইরে বেশিক্ষণ জীবিত থাকে না; সুতরাং এক্ষেত্রে উকুনে আক্রান্ত ব্যক্তির জামা-কাপড় ব্যবহার করলে আপনার উকুনে আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ডা. চিনিয়ান বলেন, ‘মানুষের দেহে বাসকারী উকুনেরা জামা-কাপড় এবং বিছানাপত্রে দীর্ঘদিন জীবিত থাকে যা মাথায় বাসকারী উকুনেরা পারে না। মানুষ সাধারণত ৩ ধরনের উকুনে আক্রান্ত হয়ে থাকে- মাথার উকুন, কাঁকড়া উকুন এবং দেহের উকুন। এই ভিন্ন ধরনের উকুনেরা শরীরের নির্দিষ্ট সব স্থানে অবস্থান করে। এক অবস্থানে থাকা উকুন শরীরের অন্য স্থানে আসে না।’

* সুইমিং পুল

আশ্চর্যজনকভাবে উকুনেরা পানির মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে। ডা. চিনিয়ানের মতে, পানির মধ্যে উকুনেরা তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে বেঁচে থাকতে পারে; তবে তারা সাঁতার কাটতে পারে না। পানির মধ্যে উকুনেরা বেঁচে থাকলেও ছড়িয়ে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ পায় না। তাছাড়া মাথার চুল একবার ভিজে গেলে উকুনেরা মাথার মধ্যে হেঁটেও বেড়াতে পারে না।’

* টেডি বিয়ার জাতীয় খেলনা

আপনার সন্তান পুনরায় উকুনে আক্রান্ত হওয়ার কারণে টেডি বিয়ার জাতীয় খেলনাগুলো ফেলে দেবেন না। এসব খেলনা থেকে উকুনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম কারণ উকুনেরা মাথার বাইরে ২৪-৩৬ ঘণ্টার বেশি বাঁচে না। ডা. লোওয়ার বলেন, ‘মানুষের মাথার ত্বকের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং কয়েক ঘণ্টা পরপর খাদ্য পাওয়া উকুনদের বেঁচে থাকার সম্বল। একবার মাথা থেকে বেরিয়ে গেলে উকুনেরা খাদ্য এবং উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কয়েক ঘণ্টা পর তারা চলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে।’

* বিমানের সিট

সম্প্রতি একাধিক খবরে জানা যায়, বেশকিছু পরিবারকে বিমানে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়নি, এমনকি বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেননা সন্দেহ করা হয়েছিল সেসকল পরিবারের সন্তানদের মাথায় উকুন রয়েছে। এটা চরম অপমানজনক একটা বিষয়। ডা. লোওয়ারের মতে, এটার কোনো দরকারই ছিল না। কেননা মাথার উকুনেরা মানুষের মাথা অর্থাৎ মাথার ত্বকে বসবাস করার জন্য অভিযোজিত হয়েছে যেখানে তারা নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ পেয়ে থাকে। উকুনেরা মানুষের মাথার বাইরে বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না। ফলস্বরূপ, উকুনেরা কখনো নিজের ইচ্ছায় মানুষের মাথা ত্যাগ করবে না। তাই বিমানের সিটে উকুনের অবস্থান নেয়া একেবারে অসম্ভব একটা ব্যাপার। কোনো উকুনে আক্রান্ত ব্যক্তি বিমানের সিটে বসার পর, সেই সিটে অন্য কেউ পরবর্তীতে বসলে উকুন সংক্রমিত হওয়া আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব।’

আরএম-১৫/২১/০৬ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)