যে সাত উপায়ে আপনি ভুল তথ্য ভাইরাল হওয়া থামাতে পারেন

যে সাত উপায়ে

ইন্টারনেটে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে ব্যাপক হারে, আর তাই বিশেষজ্ঞরা ‘তথ্য স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন সবাইকে।

সেক্ষেত্রে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে আপনি কী ভূমিকা রাখতে পারেন? খবর বিবিসি বাংলা।

১. থামুন এবং চিন্তা করুন

আপনি আপনার পরিবার ও বন্ধুদের ভাল চান এবং তাদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে চান। তাই নতুন কোনো তথ্য যখন আপনি পান – সেটা ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক বা টুইটার যেখানেই হোক না কেন – আপনি তাদের কাছে সেই তথ্য পাঠিয়ে দিতে চান।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে আপনি সর্বপ্রথম যা করতে পারেন, তাহলো এমন কাজ থেকে বিরতি নিন এবং চিন্তা করুন।

আপনার যদি কোনো সন্দেহ হয়, তাহলে ওই বিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন।

২. তথ্যের উৎস যাচাই করুন

কোনো পোস্ট আরেকজনের কাছে পাঠানোর আগে তথ্যগুলোর উৎস যাচাই করার চেষ্টা করুন।

উৎস যদি হয়ে থাকে ‘এক বন্ধু’, ‘বন্ধুর আত্মীয়’, ‘আত্মীয়ের সহকর্মী’ অথবা ‘সহকর্মীর আত্মীয়’-র মত কেউ, তাহলে অবশ্যই সেই তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।

সম্প্রতি ‘মাস্টার্স ডিগ্রিধারী আঙ্কেল’-এর সূত্র দিয়ে প্রকাশিত হওয়া এ রকম একটি বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্বলিত পোস্টের উৎস খুঁজে বের করেছে বিবিসি।

ঐ পোস্টটির কয়েকটি তথ্য – যেমন ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করতে হাত ধোয়ার উপদেশ – সঠিক থাকলেও অধিকাংশ উপদেশই ছিল ক্ষতিকর। যেমন সেখানে রোগ নিরাময়ের অযাচাইকৃত এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন কিছু পরামর্শ ছিল।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক তথ্য যাচাইয়ের প্রতিষ্ঠান ফুল ফ্যাক্টের ডেপুটি এডিটর ক্লেয়ার মিলন বলেন, “স্বাস্থ্য বিষয়ে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরামর্শ দিতে পারে গণস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো – যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেম (এনএইচএস) বা যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।”

এমন নয় যে বিশেষজ্ঞরা সবসময় শতভাগ সঠিক তথ্য দিতে পারেন, তবে তারা নিঃসন্দেহে কারো আত্মীয় বা হোয়াটসঅ্যাপের চেয়ে নির্ভরযোগ্য।

৩. তথ্যটি কি ভুল হতে পারে?

বাইরে থেকে দেখে বিভ্রান্ত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের কারো আনুষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট বা যেকোনো প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের নাম ব্যবহার করে পোস্ট দেয়া খুবই সম্ভব। সেই সব পোস্ট দেখে মনে হতে পারে যে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেই এসেছে তথ্যগুলো।

স্ক্রিনশট পরিবর্তন করে এমনভাবে তা প্রকাশ করা যায় যা দেখে মনে হয় যে তথ্য বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকেই এসেছে।

এ রকম ক্ষেত্রে পরিচিত এবং ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট ও ওয়েবসাইটের তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখুন। সেসব জায়গায় যদি সহজে তথ্যগুলো খুঁজে না পান, তাহলে সম্ভবত এগুলো ভুল।

আর পোস্ট, ভিডিও বা লিঙ্ক দেখেই যদি আপনার ভরসা না হয়, তাহলে হয়তো ভরসা না করাই উচিত।

৪. সত্যতা নিয়ে অনিশ্চিত? – শেয়ার করবেন না

কোনো তথ্য ‘ঠিক-হতেও-তো-পারে’ মনে করে সেগুলো আরেকজনকে পাঠাবেন না।

এ রকম ক্ষেত্রে আপনি কারো ভালো করার মানসিকতা নিয়ে তথ্য দিয়ে হয়তো তাকে ক্ষতির সম্মুখীন করবেন।

৫. প্রতিটি তথ্য আলাদাভাবে যাচাই করুন

হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভয়েস বেশ ছড়িয়েছে। ওই ক্লিপে যে নারী কথা বলেন, তিনি সেখানে বলেন যে তার ‘সহকর্মীর একজন বন্ধু, যিনি হাসপাতালে কাজ করেন’ তার কাছ থেকে তথ্যগুলো জেনে অনুবাদ করেছেন তিনি।

ওই ভয়েস ক্লিপটি সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিবিসি’র কাছে পাঠিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

তবে ভয়েস ক্লিপটির তথ্যগুলো ছিল ভুল এবং সঠিকের সংমিশ্রণে তৈরি করা।

যখন অনেকগুলো উপদেশের তালিকা আপনাকে পাঠানো হবে, তখন অনেক সময় আপনি সবগুলো তথ্যই বিশ্বাস করতে চাইবেন। কারণ তালিকায় থাকা কয়েকটি তথ্য যে সঠিক, সে সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত।

কিন্তু অনেক সময়ই কয়েকটি সঠিক তথ্যের সাথে ভুল তথ্য যোগ করে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

৬. আবেগী পোস্ট থেকে সাবধান

যেসব পোস্ট আমাদের আতঙ্কিত, চিন্তিত অথবা উৎফুল্ল করে তোলে, সে রকম পোস্ট ভাইরাল হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে।

অনলাইনে ভুল তথ্য আলাদা করতে সাংবাদিকদের সাহায্য করা প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ড্রাফটের ক্লেয়ার ওয়ার্ডল বলেন, “বিভ্রান্তিকর তথ্যকে টিকিয়ে রাখার সবচেয়ে বড় ভিত্তি মানুষের মধ্যকার ভয়।”

তিনি বলেন, “নিজেদের কাছের মানুষকে সব সময় সাহায্য করতে চায় মানুষ, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তাই ‘ভাইরাস প্রতিরোধ করার টিপস’ বা ‘এই ওষুধগুলো খান’ জাতীয় পোস্ট সহজে ভাইরাল হয়। কারণ মানুষ যেভাবে পারে কাছের মানুষকে সাহায্য করতে চায়।”

৭. একপেশে চিন্তা সম্পর্কে সাবধানে থাকুন

আপনি যখন একটি পোস্ট শেয়ার করেন, তখন আপনার সেটি শেয়ার করার পেছনে যুক্তিটি কী থাকে?

পোস্টের তথ্যগুলোর সত্যতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত বলে শেয়ার করছেন, নাকি আপনি শুধুমাত্র তথ্যগুলোকে সমর্থন করছেন?

ডেমোসের সেন্টার ফর দ্য অ্যানালিসিস অব সোশ্যাল মিডিয়ার গবেষণা পরিচালক কার্ল মিলার মনে করেন, আমাদের মধ্যে বিদ্যমান ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন যেসব পোস্টে আসে, সেসব পোস্টই আমরা সাধারণত শেয়ার করে থাকি।

তিনি বলেন, “যখন কিছু দেখে আমরা ক্রুদ্ধ হয়ে মাথা ঝাঁকাই, সেই সময়ে আমাদের ভুল তথ্য শেয়ার করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।”

“ঐ সময়টাতে আমাদের অনলাইন কার্যক্রম ধীরগতিতে চালানো জরুরি।”

আরএম-০৮/২৮/০৩ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)