করোনার ভারী সময়ে মন হালকা রাখবেন যেভাবে

চারদিকে করোনা আতঙ্ক। মারণ ভাইরাস করোনায় কাঁপছে গোটা বিশ্ব। এই মারণ ভাইরাসের হানায় একের পর এক দেশ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে। চীন, ইরান, ইতালি ও স্পেনে ভয়াল থাবা বসিয়েছে করোনা। তবে সারা বিশ্বই এখন ওঠেপড়ে লেগেছে করোনা মোকাবেলায়। এমন অবস্থায় আমাদের মধ্যে নানা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এমন একটি পরিস্থিতিতে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য আমাদের মানসিক শক্তি ও সুস্থতা বজায় রাখতে হবে।

আমরা সবাই এখন খুব কঠিন একটি সময় পার করছি। তবে এই সময়টা চিরস্থায়ী নয়। কিছুদিন পর যখন এই ভয়াবহতা থাকবে না। তখন আমরা আবার আগের মতো জীবন যাপন করতে পারব। শুধু কিছুদিন আমাদের মনে সাহস ও শক্তি নিয়ে এ দুর্যোগে লড়াই করে যেতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নের জন্য নিচের এই কাজগুলো করতে পারেন-

সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউজ থেকে দূরে থাকুন

করোনার এই দুঃসময়ে নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও যে নিউজগুলো মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়ায় তা এড়িয়ে চলুন। করোনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট মানব মনে যথেষ্ট উদ্বেগ সৃষ্টি করে। আর প্রতিদিনই করোনা বাড়ছে; এমন নিউজগুলো এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ভয় ও হতাশাও বাড়ায়। তাই এসবগুলো এড়িয়ে চলতে পারেন। আর না পরলে নিউজ পড়ার একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। আর খুব বেশি করে অন্য কিছুতে মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন।

মেডিটেশন বা ধ্যান করুন

ধ্যান বা মেডিটেশন হচ্ছে এমন একটি উপায়, যার মাধ্যমে মনকে প্রশিক্ষিত করা হয়। ধ্যানের মাধ্যমে নতুন এবং ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ তৈরি করা যায়। দেখা যায় আমাদের মন একসঙ্গে অনেক কিছু চিন্তা করতে থাকে। ধ্যানের মাধ্যমে একটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। যেমন হতে পারে নিশ্বাসের কিংবা শারীরিক সংবেদনের দিকে মনোযোগ দেওয়া। আবার হতে পারে একটি নির্দিষ্ট শব্দ বা শব্দগুচ্ছের প্রতি ধ্যান করা, যাকে বলা হচ্ছে ‘মন্ত্র’। মেডিটেশনে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, নিজের প্রতি সচেতনতা বাড়ায়, হতাশা কমায়, মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আর দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ কমায়। তাই করোনার এই দুঃসময়ে আজ থেকেই শুরু করতে পারেন ধ্যান।

প্রার্থনা করুন

কোনো কিছুর জন্য উদ্বিগ্ন না হয়ে শুরু করুন প্রার্থনা। প্রার্থনার মাধ্যমেই মিলবে মুক্তি। আপনি উদ্বিগ্ন ও চাপের মধ্যে থাকা বিষয়টি সৃষ্টিকর্তার কাছে অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয়। আপনার জীবনের প্রতিটি ভালো জিনিসের জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে শুরু করুন। প্রার্থনা শুরু করেন নিজের সৃষ্টিকর্তার কাছে। শুধু নিজের জন্যই না প্রার্থনা করুন অন্যর জন্যও। আপনার বিশেষ মানুষটির জন্যও প্রার্থনা করতে ভুলবেন না যেন। আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখার জন্য অনেক শক্তিশালী প্রার্থনা। তাই বসে আছেন কেন?

জার্নাল বা বই পড়ুন

করোনার এই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে জার্নাল বা বই পড়ুন। স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসকরা মানসিক স্বস্থ্য ঠিক রাখতে এই কাজটি বেশি করে করতে বলেন। জার্নাল পড়লে আপনার যেকোনো বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন হয়ে যাবে। যে বিষয়ে জানতে চান; সেই বিষয়েই জানতে পারবেন জার্নাল পড়ে। তাই ফেসবুক বা ফেইক নিউজ না পড়ে পড়ুন জার্নাল। আপনি যে বিষয়টি পড়তে ভালোবাসেন সে বিষয়ের বইও পড়তে পারেন। বই পড়লে মানুষের মনে অবস্থা ভালো থাকে বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

ব্যায়াম করুন

শরীর ও মন ঠিক রাখত ব্যায়াম করুন। বাড়ির ভেতরে থেকে হাঁটু-কনুইয়ের ব্যায়াম, প্লাঙ্ক, ব্যাক এক্সটেনশন, স্কোয়াট, হাঁটু ওঠানো, সুপারম্যান, ব্রিজ, চেয়ার ডিপ, চেস্ট ওপেনার মতো ব্যায়ামগুলো করতে পারেন। মানসিকভাবে ভালো থাকতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি। শরীরকে সক্রিয় রাখতে সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলে সুখ হরমোন নিঃসৃত হয়। মানসিকভাবে হালকা বোধ করতে বা মন ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের চর্চা করে যান।

ফোন বা ভিডিও কলে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন

মন ভালো রাখতে সঙ্গরোধ করা যাবে না। করোনার এই সময়ে মন ভালো রাখতে চাইলে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন। ফোনে বা ভিডিও কলে সময় কাটান। বন্ধুদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ভার্চুয়ালি এগিয়ে আসুন। এতে করে মনও ভলো থাকবে বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কও ভালো থাকবে।

নতুন রুটিন তৈনি করুন

করোনা কারণে আগের রুটিন দিয়ে জীবন চালানো যাচ্ছে না। তাই নতুন একটি রুটিন তৈরি করুন। রুটিন উদ্বেগ কমাতে সহায্য করে, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়াতে সাহায্য করে। মূলত সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে একটি ভালো রুটিন। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়াটাও করতে হবে। এটি আপনার শারীরিক শক্তি যোগাবে।