মানুষের জীবনে ডজনখানেক অভ্যাসের প্রভাব

নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন। করোনা কেবল মানুষের জীবনকেই সংকটে ফেলে দিচ্ছে না, বদলে দিচ্ছে চিরায়ত কিছু স্বভাবকেও। যেখানে ধারণা করা হচ্ছে হাত না মেলানো, দূরত্ব বজায় রাখা ও বারবার হাত ধোয়াসহ ১৩টি অভ্যাস করোনা-পরবর্তী সময়েও থেকে যেতে পারে মানুষের মধ্যে। কী সেই অভ্যাসগুলো?

বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাত মেলানোর রীতি

নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সবার আগে যে অভ্যাসটি বন্ধ করতে হয়েছিল, তা হলো হাত মেলানোর রীতি। মূলত হাত মেলানোর মাধ্যমে সহজেই ভাইরাসটি একজনের কাছ থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সুরক্ষার স্বার্থে হাত মেলানো এখন পৃথিবীব্যাপী বন্ধ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নেসোচি ওকেকে-ইগবোকেউই বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের এ নতুন যুগে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কারণে সন্দেহাতীতভাবে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতি বদলে যাবে। হাত মেলানো, হাই ফাইভ দেয়া, জড়িয়ে ধরা ও চুমু খাওয়ার রীতি বন্ধ হয়ে যাবে। তার পরিবর্তে বুকে হাত দেয়া, মাথা নাড়ানো অথবা স্পর্শবিহীন অন্য কোনো শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতি চালু হতে পারে।

বাড়তে পারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার

নভেল করোনাভাইরাস-পরবর্তী সময়ে আমরা খুব সম্ভবত অফিস, রাস্তাঘাট ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বহুল ব্যবহার দেখতে পাব। এমনও হতে পারে, অফিসের অভ্যর্থনা কক্ষে কিংবা অফিসের বাইরে স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে।

এছাড়া অনেক কনসার্টের ভেন্যু, দোকান ও জিমেও এরই মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার দেখা গেছে। রেস্টুরেন্ট, চার্চ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ও সামনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার এ বস্তুটির দেখা মিলতে পারে।

সেবা প্রদানের প্রক্রিয়া উন্নত হতে পারে

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাধ্য করেছে, যেকোনো কাজে দ্রুত সাড়া দেয়ার জন্য দল তৈরি করতে। অনেকে বুঝতে পারবে যে তাদের সহকর্মী ও কর্মচারীদের প্রাসঙ্গিক মেধা রয়েছে, যা কোম্পানির কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া পরবর্তী সময়ে সংকটকালের জন্য কর্মীদের হয়তো ট্রেনিং ও দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

রেস্টুরেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক বদলাতে পারে

বাইরে খেতে যাওয়া অথবা নিয়ে আসা কিংবা অর্ডার দিয়ে খাবার আনার বিষয়টি গত কয়েক সপ্তাহে অনেক বদলে গেছে। তবে এখনো পরিষ্কার না হলেও এটা নিশ্চিত যে প্রাদুর্ভাব শেষ হওয়ার পর রেস্টুরেন্টের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বদলে যাবে। যেমন খেতে যাওয়ার পরিবর্তে খাবার নিয়ে আসা কিংবা ডেলিভারি নেয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে।

বিডেটের ব্যবহার বাড়তে পারে

গত কয়েক বছরে ইউরোপে মলত্যাগের পর টিস্যুর পরিবর্তে বিডেট ব্যবহার করছে, যা মূলত শরীরের নিম্নাঙ্গ ধৌত করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। করোনার পর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এর ব্যবহার আরো বাড়তে পারে। তবে টুশি নামে একটি কোম্পানি বলছে, এরই মধ্যে তাদের তৈরি বিডেট বিক্রির পরিমাণ ১০ গুণ বেড়েছে।

ঘরে বসে কাজের পরিসর বাড়তে পারে

করোনার কারণে দেশে দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পর এরই মধ্যে বেশির ভাগ অফিস ও কর্মক্ষেত্র বন্ধ। অবশ্য করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপর অনেক কোম্পানি কর্মীদের ঘরে বসে কাজের নির্দেশ দেয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, করোনার প্রকোপ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনেক অফিস হয়তো এ পদ্ধতিতে অফিস পরিচালনা করবে।

বাটন চাপার নতুন উপায় আসতে পারে

লিফট, এটিএম বুথ ও দোকানে কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাটন চাপার যে প্রক্রিয়া, তাতে পরিবর্তন আসতে পারে। ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ আরো বেশি সচেতন হতে পারে। আঙুলের পরিবর্তে কনুই দিয়ে কিংবা কলমের মতো বস্তু দিয়ে বাটন চাপবে।

বন্ধ হয়ে যেতে পারে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া

বাদাম কিংবা পপকর্নের মতো খাবার কখনো কখনো যৌথভাবে খাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এ ধরনের খাবার সমসময় সন্দেহজনক। কারণ সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার পদ্ধতি একইরকম হয় না। অনেকে হয়তো টয়লেট ব্যবহার করে ঠিকভাবে হাত ধোয় না। যার ফলে ভবিষ্যতে একসঙ্গে বসে একই পাত্র থেকে খাওয়ার অভ্যাস বদলে যেতে পারে।

দূরত্ব বজায় রাখার অভ্যাস তৈরি হবে

নভেল করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বারবার একজনের কাছ থেকে অন্যজনের ছয় ফুট দূরত্ব রাখার কথা বলা হচ্ছে। তবে ছয় ফুটের দূরত্ব রাখা না হলেও এর সংক্ষিপ্ত কোনো উপায়ের দেখা মিলতে পারে করোনা-পরবর্তী সময়ে। যেখানে দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে বাড়তে পারে মানুষের সচেতনতা।

হাত ধোয়ার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়বে

করোনার কারণে যে কাজটি আমাদের বারবার করতে হচ্ছে তা হলো হাত ধোয়া। প্রতিবার ন্যূনতম ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে কিংবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতেও মানুষের মাঝে থেকে যেতে পারে এ অভ্যাস।

ভিড় এড়িয়ে চলার অভ্যাস তৈরি হতে পারে

করোনার বিস্তার লাভের অন্যতম এক মাধ্যম হচ্ছে জনসমাবেশ। তাই কোনো অঞ্চলে করোনা দেখা গেলে সবার আগে সভা-সমাবেশ ও ভিড় বন্ধ করে দেয়া হয়। মানুষও এখন এ বিষয়ে অনেক সচেতন। ভবিষ্যতেও মানুষের মাঝে ভিড় এড়িয়ে চলার প্রবনতা থেকে যেতে পারে।

জনস্বাস্থ্য নীতির ধারণা উন্নত হতে পারে

করোনার শুরুর দিকে অনেকেই এর গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। যে কারণে বারবার বলার পরও আটকানো যায়নি ভিড়ে মধ্যে যাওয়া থেকে। তবে পরিস্থিতি যতই অবনতির দিকে গেছে, মানুষ প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পেরেছে। এখানে নিয়ম মেনে কেবল নিজেকে বাঁচানো নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অন্যের স্বাস্থ্যরক্ষার বিষয়টিও। বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়টিকে ভুলে থাকা যার অন্যতম, যা হয়তো ভবিষ্যতে মানুষের জনস্বাস্থ্য নীতির ধারণাকে উন্নত করবে।

রিডার্স ডাইজেস্ট