করোনাকালে দুশ্চিন্তা ছোবল মারছে? মুক্তি মিলবে এসব উপায়ে

এই মহামারির সময় বিশ্বব্যাপী সবাই যেন এক অন্য জীবন কাটাচ্ছেন। সবার চোখে মুখেই অনিশ্চয়তা খেলা করছে। প্রিয়জনকে হারানোসহ একাকীত্ব সময় কাটানো পাশাপাশি আর্থিক অনিশ্চয়তা সব মিলিয়েই মানুষ এখন দিশেহারা।

প্রায় সবাই এখন নেতিবাচক চিন্তায় আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই নানা মানসিক জটিলতা সৃষ্টি করে। হয়ত কেউ মেজাজ হারাচ্ছেন আবার কেউ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, করোনাকালে মানুষের মানসিক পরিবর্তনের কারণেই এমনটি হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের মানুষেরা এখন অনিদ্রাতেও ভুগছে।

তাই খুব বেশি খারাপ পরিস্থিতিতে যাওয়ার আগেই নিজের মানসিক পরিচর্যা করা উচিত। এই বিষয়ে মাই অনলাইন থেরাপির মনোবিজ্ঞানী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা এলিনা টুরনি বলেন, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা যখন পিছু ছাড়ে না তখন তাকে বলা হয় চিন্তার ফাঁদ। এর মধ্যে সাধারণ হলো, বিপর্যয়, ভালো ও মন্দ চিন্তা এবং আবেগিক যুক্তি।

যদিও চিন্তাভাবনা গুরুতর বিষয় নয়। তবে যখন এমন নেতিবাচক চিন্তার ফাঁদে মানুষ আটকে যায় তখন তার এই দুশ্চিন্তার প্রভাব পড়ে পেশাগত ও পারিবারিক জীবনে। এজন্য জেনে নিন এই মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার উপায়-

> গবেষণায় দেখা গেছে, নেতিবাচক চিন্তা বাদ দেয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনটি হওয়ার ফলে সে মানসিকভাবে আরো শক্ত হয়ে ওঠে। পরে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও ইতিবাচক মনোভাব কাজে লাগিয়ে নেতিবাচক চিন্তা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারে।

> বর্তমানে অনেকেই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলে দম আটকে যাওয়ার অনুভূতি হয়। কারণ চিন্তার সময় মানুষ শ্বাস নিতে ভুলে যায়, গবেষণা এমনটিই বলছে। দম বন্ধ ভাব লাগলে এই সময় চোখ বন্ধ করে চার বার বড় করে শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন। কখনো খুব বেশি মানসিক চাপ অনুভব করলে বা দুশ্চিন্তায় পড়লে নিজের প্রতি মনোযোগী হন এবং কিছুটা সময় নিয়ে শ্বাস নিন, অশান্ত মন শান্ত হবে।

> এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সচেতন রাখতে প্রয়োজনে নোট লিখে চোখের সামনে রাখার পরামর্শ রাখুন।

> নিজে যা ভাবছেন তার সবটুকুই সঠিক ভাববেন না। আপনার ভাবনাটি আপনার কাছে সঠিক মনে হলেও সেটি ভুল হতে পারে। চিন্তাভাবনা ক্রমাগত নেতিবাচক হতে থাকলে নিজেকেই এটা নিয়ে প্রশ্ন করুন।

> আপনার নেতিবাচক ভাবনার পক্ষে যুক্তি কতটা বা এমন সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়ার আদৌ কোনো কারণ আছে কি-না তা ভেবে দেখুন। নিজের বিপক্ষে গিয়েও চিন্তা করুন, তাহলে ভালো সমাধান পাবেন।

> নিজেকে শান্ত রাখতে ও শক্তিশালী ভাবতে ইতিবাচক কথা ও বার্তার দিকে মনোযোগ দেন। যেমন- সব ঠিক হয়ে যাবে, সব কাজ ঠিক মতো হবে, কাজ হবে ইত্যাদি বলে নিজেকে স্বান্তনা দিন। চাইলে ঘরের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের ইতিবাচক বাক্য চোখে পড়ে এমন স্থানে লিখে রাখতে পারেন।

> মানসিক অবস্থা ভালো থাকলেও এই সব ইতিবাচক কথা স্মরণ করুন। যাতে পরবর্তিতে খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে পারেন সহজেই।

> কখনো ভাববেন না আমার কোনো বন্ধু নেই। নিজেই নিজের বন্ধু হন।

> মাথায় খারাপ কোনো চিন্তা এলে তা থেকে বেড়িয়ে আসতে সুন্দর মনোরম কোনো জায়গার কথা চিন্তা করার পরামর্শ দেন ম্যানলিবিশেষজ্ঞরা। খোলা মাঠ, নীরব কোনো সৈকত অথবা ছায়া ঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় নিজেকে কল্পনা করুন।

> নিজেকে বেশি একাকী মনে হলে একমনে বসে উয়োগা করুন। পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও কোরআন শরীফ পড়ুন। দেখবেন, এই সব নিয়ম মানলে দ্রুত আপনার মন হালকা হয়ে উঠবে।