রোজায় নিজের যত্ন

রোজায়

হাজারো ব্যস্ততায় কাটে আমাদের প্রতিদিন প্রতিক্ষণ। অন্দরমহল কিংবা বাইরের দুনিয়া, সব দিকেই রাখতে হয় সমান নজরদারি। আর এ ক্ষেত্রে যখন ঘরনির কথা আসে তখন তা যেন আরও কয়েকগুণ দায়িত্বের সঙ্গে যুক্ত হয় সব কাজের সঙ্গে। পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের প্রতি তাকেই রাখতে হয় সব সময় সজাগ দৃষ্টি। তবে এত কিছুর মাঝে নিজের প্রতি যত্ন নিতেই যেন সব কার্পণ্য।

অন্যদিকে আর কিছু দিনের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস মাহে রমজান। তাই এ সময় খাবার-দাবারের প্রতি যেমন খেয়াল রাখা জরুরি তেমনি নিজের ক্ষেত্রেও যত্ন আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে অনেকেই বাইরে যাওয়ার সময়টুকুও পান না। তারা খুব সহজেই হাতের কাছের কিছু টুকিটাকি জিনিস দিয়ে কীভাবে নিজের যত্ন রাখতে পারবেন পুরো রমজান মাসজুড়ে তাই জানিয়েছেন হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিনিকের স্বত্বাধিকারী শাহিনা আফরিন মৌসুমী।

রোজার এ সময়ে আমাদের শরীরে সবচেয়ে বেশি পানি শূন্যতা দেখা দেয়। যার ফলে ত্বকে র‌্যাশ, লালচে ভাব কিংবা ব্রণের মতো নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই এ সময় ত্বকের যত্ন আবশ্যক। অন্যদিকে রোজার সময় গরমের কারণেও ত্বকে র‌্যাশ কিংবা ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। তাই ত্বক বুঝে নিতে হবে তার সঠিক যত্ন। এ ক্ষেত্রে যাদের ত্বক রুক্ষ তাদের ত্বকের রুক্ষতার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। নাকের পাশের চামড়া ওঠা, মুখের ত্বকে র‌্যাশ কিংবা লালচে ছোপ ছোপ ভাব দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে ত্বক ডিহাইড্রেড হয়ে গিয়েছে। তাই ত্বককে হাইড্রেড করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ত্বকের যত্নে বেসন খুব দ্রুত কাজ করে।

যে কোনো ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেই বেসন ব্যবহার করা যায়। তবে যাদের ত্বক রুক্ষ তারা হাফ কাপ বেসন, হাফ কাপ চালের গুঁড়া আর এক চা চামচ কর্পূর মিশিয়ে কাচের বোতলে রেখে দিলে আর তা দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে মুখের লোমকূপে থাকা ময়লা যেমন পরিষ্কার হবে তেমনি ত্বক হাইড্রেড হতে শুরু করবে। এ মিশ্রণটি মুখে দুই থেকে তিন মিনিট রেখে ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিলেই হবে। এতে ত্বক উজ্জ্বল হবে পাশাপাশি ত্বকের মলিনতা দূর হবে। অন্যদিকে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়ার পর প্যাক ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিন টেবিল চামচ কুসুম গরম দুধে দুই থেকে তিনটি খেজুর, বিচি ফেলে দিয়ে ভিজিয়ে রেখে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে তাতে ময়দা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এ প্যাকটি পনেরো থেকে বিশ মিনিট রেখে ধুয়ে নিতে হবে।

গরমের এ সময়ে যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ক্লিঞ্জার হিসাবে হাফ কাপ বেসন, হাফ কাপ চালের গুঁড়া আর এক চা চামচ কর্পূর মিশিয়ে অল্প অল্প করে পরিমাণে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। আর প্যাক হিসাবে পুদিনা পাতার রস সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন আর মুলতানি মাটি একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এ গ্লিসারিন ত্বককে করবে নরম আর ফ্রেশ রাখবে লম্বা সময় পর্যন্ত।

অন্যদিকে যাদের ত্বক মিশ্র সঙ্গে ব্রণের সমস্যাও হচ্ছে তারা দুই চা চামচ গোলাপ জল, কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন আর এক কিংবা দুইটি লবঙ্গ, ময়দা মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে। এ মিশ্রণটি মূলত প্যাক হিসাবে ব্যবহার করতে হবে এতে ত্বক পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার পাবে। এর বাইরেও অনেকের ত্বকে ছোপ ছোপ আকারে লালচে ভাব দেখা দেয় তারা ত্বকে তিন কাপ পুদিনা পাতা, তিন কাপ তুলসী পাতা সঙ্গে ছয় কাপ পানি মিশিয়ে ভালো করে জাল দিয়ে নির্যাস বের করে নিতে হবে। এ মিশ্রণটি বরফ আকারে ত্বকে ব্যবহার করলে এ সমস্যা থেকে খুব সহজেই সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে।

গরমের এ সময়ে ত্বকের পাশাপাশি চুলের রুক্ষতাও সমানভাবে বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যাদের চুলের ত্বক কিংবা স্কাল্প অনেক বেশি ঘামে তারা দুটি লেবুর খোসা পেস্ট করে সঙ্গে হাফ ইঞ্চি আদা টুকরা মিশিয়ে পুরো চুলের স্কাল্পে অ্যাপ্লাই করতে হবে। এতে ঘাম কমে যাবে সঙ্গে ফাংগাল ইনফেকশন থেকেও সুরক্ষিত থাকবে স্কাল্প। এ মিশ্রণটি এক ঘণ্টা রেখে এর পরে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। অন্যদিকে যাদের চুল অনেক বেশি রুক্ষ তাদের চুলে একটি পাকা কলা ভালো করে পেস্ট করে সঙ্গে একটি পেঁয়াজ, কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন ভালো করে মিশিয়ে স্কাল্প এবং চুলে অ্যাপ্লাই করতে হবে। ঘণ্টাখানেক রেখে শ্যাম্পুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাবেন ঝরঝরে আর খুশকি মুক্ত স্বাস্থ্য উজ্জ্বল চুল।

আরএম-০৩/০২/০৪ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)