রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে ভাড়াটে প্লেয়ার?

ড. কামাল হোসেনকে ভাড়াটে খেলোয়াড় বললেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলের সদস্য মোহাম্মদ নাসিম৷ তাঁর মতে, বিএনপি নির্বাচনের আগে ড. কামালকে ভাড়া করেছিলেন৷ তা সত্ত্বেও ড. কামাল আওয়ামী লীগের পক্ষেই কাজ করেছেন৷

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় জনাব নাসিমের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতার সঙ্গে৷ তিনি জানান, ‘‘বিএনপি বলেছিল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না৷ পরে নির্বাচনে আসলো৷ বিনা শর্তেই আসলো৷ কামাল হোসেন সাহেব তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেন৷ তাদের নির্বাচনে নিয়ে আসলেন৷ আমরাও চেয়েছিলাম তারা নির্বাচনে আসুক৷ আবার নির্বাচন যখন শুরু হলো তখন কামাল হোসেন সাহেব মাঠ থেকে সরে গেলেন৷ বিএনপিও মাঠে থকালো না৷ আমাদের সুবিধা হলো, আমার মনে হয়েছে বিএনপি তাদের স্বার্থে কামাল হোসেন সাহেবকে আনলো আর তিনি কাজ করলেন আমাদের স্বার্থে”৷

ড. কামালের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যোগাযোগ নিয়ে জানতে চাইলে নাসিম বলেন, ‘‘না, নির্বাচনের সময়ও ছিলো না, আগেও ছিলো না, কখনোই ছিলো না৷”

তার মতে, ‘‘বিএনপি কামাল হোসেন সাহেবকে প্লেয়ার হিসেবে ভাড়া করেছে নির্বাচনের আগে৷ মনে করেছে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী৷ কিন্তু তার নিজের দলেতো কেনো লোক নাই৷ ভালো প্লেয়ার মনে করে ভাড়া করেছে কিন্তু খেলতে পারেনি৷ সংসদে না যাওয়ার কথা বলে ড. কামাল সাহেবের দলের লোকরাই আগে সংসদে গেলেন৷ এখন বিএনপির ৬-৭ জনও গেছে৷ তারা এখন সব নির্বাচনেও যাচ্ছে৷”

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘তিনি সংসদে বলেছেন, আমরা সংসদে গিয়েতো আর প্রতিবাদ করতে পারি না৷ তবে আমার মনে হয় নাসিম সাহেব মজা করেছেন৷ তিনি কৌতুক করেছেন, তিনি সিরিয়াস কিছু বলেননি৷ ড. কামাল সাহেব একজন সম্মানিত লোক৷ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অবদান অনেক বড়৷ ভাড়া করা লোক তিনি নন৷”

ড. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘‘ভোটের আগের রাতেই যে ভোট হয়ে গেছে এর দায়তো সরকারের৷ আর সরকার নির্বাচন কমিশনের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে, তাতেই বোঝা যায় নির্বাচন কমিশনের কাজ কে করে৷ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা তৈরির জন্য৷ আমাদের ব্যর্থতা যে আমরা বুঝতে পারিনি নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট হয়ে যেতে পারে৷ আমরা ভাবতে পারিনি আগের রাতেই ভোটের বাক্স ভরে ফেলা হবে৷ ফাঁকা মাঠতো আমরা করিনি, তারাইতো ভোটের কোনো মাঠ রাখেনি৷ ড. কামাল সাহেবতো ভদ্রলোক৷ তিনিতো এসব চিন্তাই করতে পারেননি৷”

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন,‘‘ড. কামাল আওয়ামী লীগের প্রোডাক্ট৷ তিনি এখন গণফোরামের সভাপতি৷ নাসিম সাহেবের কথামতো আওয়ামী লীগে থাকলে ভালো৷ বাইরে গেলে খারাপ৷ ড. কামাল যদি অবিশ্বস্ত হন তাহলে আওয়ামী লীগও সন্দেহের বাইরে না৷ নির্বাচনের আগে বৈঠকে শেখ হাসিনা আশ্বাস দিয়েছিলেন ভালো নির্বাচন হবে৷ বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে না, ‘আমাকে বিশ্বাস করেন’৷ কিন্তু তিনি বিশ্বাসের কাজ করলেন না৷”

‘‘ড, কামাল হোসেনের সঙ্গে আমরা একটি গণতান্ত্রিক ঐক্য করেছি৷ এটাকে যদি নাসিম সাহেব ভাড়া বলেন তাহলে পতিত রাজনীতিবিদ হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননদেরও কি আওয়ামী লীগ ভাড়া করেছিল”-প্রশ্ন রাখেন বিএনপি এই নেতা৷

১৪ দলের সমন্বয়ক মো. নাসিম সংসদে ২৫ জুন বলেন, ‘‘২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত নেতা ও দলের সঙ্গে চক্রান্ত করে ব্যর্থ কামাল হোসেনকে ভাড়া করে সামনে দাঁড় করালেন৷ ওরা কামাল হোসেনকে ওদের জন্য ভাড়া করলেন, আর কাজ করলেন আমাদের জন্য৷ তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে মাঠ খালি করিয়ে দিলেন আর আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম৷ সমস্ত মাঠ খালি হলে গেলো, ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম৷ এই হচ্ছে বিএনপির মুরোদ৷”

তবে যাকে নিয়ে এতো কথা, সেই ড. কামাল হোসেন এখন আছেন দেশের বাইরে৷ তাই এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য জানা যায়নি৷

এসএইচ-০৫/২৭/১৯ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)