দেশে সন্ত্রাসীদের উত্থানের ঝুঁকি রয়ে গেছে

ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ২০১৬ সালে যে জঙ্গি হামলায় ২২ জন নিহত হন, আজ তার তৃতীয় বার্ষিকী।

দেশের ইতিহাসে ঐ হামলাকেই ইসলামী জঙ্গিদের চালানো সবচেয়ে বড় হামলা বলে বিবেচনা করা হয়। ঐ হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন বিদেশি নাগরিক।

এরপর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ব্যাপক অভিযান শুরু হয় এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও ঢেলে সাজানো হয় বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করে আসছে।

তিন বছর পর এধরনের সহিংস জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখন কতটা প্রস্তত?

এক সাক্ষাৎকারে নিরাপত্তা বিশ্লেষক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনিরুজ্জামান বলেন, গত তিন বছরে বাংলাদেশে বড় ধরণের কোন সন্ত্রাসী আক্রমণ না হলেও যেসব গোষ্ঠী সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারে তাদের তৎপরতা থেমে নেই।

“গত কয়েক বছরে বড় কোন সন্ত্রাসী হামলা না হলেও একই সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কর্মকান্ডও সম্পূর্ণভাবে থেমে নাই।”

“তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং ছোটখাটো বিভিন্ন ঘটনা ঘটানোর প্রচেষ্টা করেছে।”

তবে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের কার্যক্রম প্রতিহত করতে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘সফল ভূমিকা’ পালন করেছে বলে মনে করেন মুনিরুজ্জামান।

“কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চালানো অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে এবং ঐ গোষ্ঠীগুলো যে তাদের সংগঠনে নতুন সদস্য অন্তভূক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাজেই এটাও স্পষ্ট যে, তাদের প্রচেষ্টা থেমে নেই।”

মুনিরুজ্জামান মনে করেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত গোষ্ঠীগুলো এখনও সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় রয়েছে।

“তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, এমনটা বললে ভুলভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।”

তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে তাদের কর্মকান্ড সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে এরকম সন্ত্রাসীদের উত্থানের ঝুঁকি রয়ে গেছে।

মুনিরুজ্জামানের মতে, সেই ঝুঁকি নির্মূল করতে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে করে বাংলাদেশের সমাজের মধ্যে থেকে এরকম সন্ত্রাসীদের উত্থানের সুযোগ এবং পরিবেশ না থাকে।

আর সিরিয়ায় দায়েশ’এর কর্মকান্ড ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর সেখানকার বিদেশি যোদ্ধারা বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে নতুন করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মি. মুনিরুজ্জামান।

“আমার জানি যে, বাংলাদেশ থেকে কিছু সংখ্যক নাগরিক সেখানে (সিরিয়ায়) গিয়েছিলেন, তারা হয়তো আবার বাংলাদেশে ফেরত আসার চেষ্টা করতে পারেন।”

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এরকম অন্তত ৫০জন বিভিন্ন দেশ থেকে গিয়ে সিরিয়া আর ইরাকে আইএসের সঙ্গে জড়িত হয়েছিল, যাদের ‘ফরেন টেরোরিস্ট ফাইটার’ বলা হচ্ছে, তাদের একটি তালিকা বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন বিভাগের কাছে রয়েছে বলে কিছুদিন আগে জানানো হয় গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে।

হোলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে অভিযুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরীও সিরিয়া-ইরাকে গিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

তবে মুনিরুজ্জামান মনে করেন, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বাংলাদেশে প্রবেশ আটকাতে শুধুমাত্র প্রচলিত পথে নজরদারি যথেষ্ট নয়।

“বর্ডার অতিক্রম করে বিভিন্নভাবে যে রাস্তাগুলো আছে, সমুদ্রপথ বা নৌকার মাধ্যমে চেষ্টা করতে পারে তারা।”

সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম স্বল্পমেয়াদে দমন করতে পারলেও, দীর্ঘমেয়াদে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের উত্থানের সম্ভাবনা বন্ধ করতে যে ধরণের উদ্যোগ প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে এখনও বড় ধরণের দুর্বলতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মি. মুনিরুজ্জামান।

“সমাজ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্রীয় কৌশল অবলম্বন করতে হবে, যেদিকে আমাদের এখন পর্যন্ত কোন সক্রিয় ভূমিকা আছে বলে আমি মনে করি না।”

এসএইচ-০৬/০১/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)