জাতীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন যাবে ঐক্যফ্রন্ট?

সরকারের পদত্যাগ এবং জাতীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট৷ তারা মনে করছে দেশে এখন জাতীয় সরকারের কোনো বিকল্প নেই৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই দাবি আদায়ে আন্দোলন কতটুকু জমাতে পারবে?

শনিবার বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে ঐক্যফ্রন্ট সরকারের পদত্যাগ এবং জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে৷ সেই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের দাবিও করা হয়৷ কিন্তু এই বৈঠকে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না৷ তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টেলিফোনে যুক্ত ছিলেন বলে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্ট কোনো আন্দোলন গড়ে তুলকে পারেনি৷ এমনকি ফ্রন্টের অন্তর্ভূক্ত দল থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া আর সবাই শপথ নিয়েছেন৷ ফ্রন্টের শরীক দলগুলোর মধ্যে দূরত্বও বাড়ছে৷ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ফ্রন্টে আর আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়৷

এই অবস্থায় সরকারের পদত্যাগ ও জাতীয় সরকারের দাবি নিয়ে কতটুকু তারা যেতে পারবেন? প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর আমরা সরকারকে সময় দিয়েছি৷ আমরা দেশে রক্তস্রোত বয়ে যাক সেটা চাইনি৷ আমরা চেয়েছি দেশে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় থাকুক দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক৷ আমরা চেয়েছি শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান৷”

তিনি বলেন, ‘‘এখন তো সব কিছু বেরিয়ে আসছে৷ দুর্নীতি অপকর্ম সব প্রকাশ পাচ্ছে৷ আমরা যা বলেছিলাম তাই হয়েছে৷ দেখা যাচ্ছে পুলিশও এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে৷ হাসিনা সরকার এখন গন্ধ দূর করতে চাইছে৷ তাই লোক দেখানো অভিযান চালানো হচ্ছে৷ আসলে এতে পরিস্থিতির উন্নতি হবেনা৷ তাই আমরা চাই সরকার পদত্যাগ করুক৷ একটি জাতীয় সরকার গঠন করে এইসব বিষয়ের সমাধান করতে হবে৷”

বিএনপিও মনে করে আন্দোলন তীব্র করার সময় এসেছে৷ এখন দেশের যা পরিস্থিতি তাতে আন্দোলন বেগবান করার কোনো বিকল্প নাই৷ সেটা কীভাবে করা যায় তা নিয়ে বিএনপিও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে৷ সামনে যেকোনো একটা ইস্যুতে এর প্রকাশ ঘটাতে চাচ্ছে তারা৷ তাই চলমান ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান তারা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে৷

বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘এই অভিযানে স্পষ্ট যে, যারা দুর্নীতিতে জড়িত তারা সবাই আওয়ামী লীগের৷ ফলে এই সরকার দিয়ে দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়৷ ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয়৷ তারপরও তারা ক্ষমতা ধরে আছে৷ এর অবসান হওয়া প্রয়োজন৷”

তিনি বলেন,‘ ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় সরকারের কথা বলছে৷ আমরা শুরু থেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছি৷ বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের শরীক দল৷ শনিবারের বৈঠকে আমাদের কেউ উপস্থিত না থাকলেও তারা যে দাবি দিয়েছে তার সঙ্গে আমরা একমত৷ সামনে আমাদের সাথে আরো আলোচনা হবে৷ আমরা আন্দোলনকে আরো কীভাবে বেগবান করতে পারি তার কৌশল নির্ধারণ করা হবে৷ বিএনপিতো আন্দোলনে আছেই৷ এখন এটাকে ঐক্যফ্রন্টকে সাথে নিয়ে আরো কীভাবে গতি আনা যায় তা নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ সরকারের সাথে আগে আলোচনাও হতে পারে৷”

আর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘‘আমরা মাঠে নামছি না বলে কথা আছে৷ কিন্তু আমাদের নেতা-কর্মীদের মামলা দিয়ে, নির্যাতন চালিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে৷ সাদ্দামের সময়, গাদ্দাফির সময়ও লোকজনকে রাস্তায় নামতে দেয়া হতো না৷ এই সরকার একটা স্বৈরাচারী সরকার৷ মানুষকে অত্যাচার করে ক্ষমতা দখল করে আছে৷ এজন্য আমাদের আন্দোলন করতে সময় লাগবে, কিন্তু আমরা সেটা করবো৷ এখন সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয় না৷ দিলেও দু’ঘণ্টা আগে৷ আমাদের সমাবেশ করতে দেয়া হোক, দেখবেন লাখ লাখ লোক রাস্তায় নেবে আসবে৷”

তিনি কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা সব এখনই বলছি না৷ তবে দ্রুতই তা দৃশ্যমান হবে৷”

এসএইচ-১৩/৩০/১৯ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)