বড় হুমকি আটক জঙ্গিরাই?

দেশে কারাগারে আটক জঙ্গিরা সবচেয়ে বড় হুমকি হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা৷ কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, এ কারণে তারা আটক জঙ্গিদের কঠোর নজরদারিতে রাখছেন৷ কিন্তু যারা জামিন পায় তাদের ব্যাপারে তাদের করণীয় কিছু নেই৷

হোলি আর্টিজান হামলার পর ব্যাপক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বাংলাদেশ জঙ্গিদের সক্ষমতা এখন অনেকটাই কমে গেছে৷ এপর্যন্ত বড় ধরনের ২২টি অভিযানে একশরও বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে৷ আর আটক হয়েছে এক হাজারেরও বেশি জঙ্গি৷ তাদের একটি অংশ এখন কারাগারে আছে৷ আবার কেউ কেউ জামিনেও ছাড়া পেয়েছে৷ তবে হোলি আর্টিজান হামলার আগেও জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় আটক হয়৷

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এবং কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের(সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম মনে করেন,‘‘বাগদাদি নিহত হওয়ায় বাংলাদেশে জঙ্গিদের মনোবল আরো ভেঙে যাবে৷ হোলি আর্টিজানের পর অভিযানে তারা দুর্বল হয়ে পড়লেও শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পর তারা কিছুটা উজ্জিবীত হয়েছিল৷ দ্বিতীয় দফা অভিযানে তাও শেষ হয়ে গেছে৷”

তিনি বলেন,‘‘বাংলাদেশে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক এখন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে৷ ভার্চুয়াল জগতেও তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে৷”

কারা সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৫৭৭ জন জঙ্গি আটক ছিলো৷ কিন্তু এখন আছে ৪৭০ জন৷ বাকিরা এরই মধ্যে জামিন পেয়েছে৷ জানা গেছে আটক জঙ্গিদের মধ্যে যারা দুর্ধর্ষ তারা আছে গাজীপুর কারাগারে ৷ বাকিরা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আছে৷

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন,‘‘বাইরে জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে পড়লেও বাংলাদেশে এই কারাবন্দি জঙ্গিরাই সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দেখা গেছে কারাগার থেকেই জঙ্গিরা আরো প্রশিক্ষিত হয়ে বের হয়৷ নিহত আবুবকর আল-বাগদাদিও শুরুতে বড় জঙ্গি ছিল না৷ সে কারাগার থেকেই বড় জঙ্গি হয়ে ওঠে৷ আমাদের এখানে কারাগারে জঙ্গিদের জন্য আলাদা কোনো সেল নেই৷ থাকলেও দুই একজনের জন্য আছে৷ তারা কারাগারে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারছে৷ মিশতে পারছে৷ এর ফলে তারা সেখান থেকেই নতুন পরিকল্পনার সুযোগ পাচ্ছে৷ যারা জামিনে বের হচ্ছে তারাও বা কি করছে আমরা জানি৷”

তিনি আরো বলেন,‘‘কারাগারে এইসব জঙ্গিদের ডিরেডিক্যালাইজেশনের কোনো উদ্যোগ নেই৷ আমার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি আইজি প্রিজনের কথা হয়েছে৷ তিনিও বলেছেন এটা সম্ভব হচ্ছে না৷ কারণ এজন্য সরকারের দেয়া কোনো ফান্ড নেই৷” তাই যারা কারাগারে আছে এবং যার জামিনে বের হচ্ছে তারাই এখন বড় হুমকি বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক৷ তিনি বলেন,‘‘ডিরেডিক্যালাইজড না হয়ে যারা জামিনে ছাড়া পাচ্ছে তারা আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে৷”

দেশের কারাগারগুলোতে এখন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), নব্য জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), আনসার আল ইসলাম, হিযবুত তাহরির, হিযবুত তাওহীদ ও হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশসহ আরো কিছু জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা আটক আছে৷ তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ জনকে দুর্ধর্ষ জঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে৷

অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল আকবর হোসেন জানান,‘‘দুধর্ষ জঙ্গিদের গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে রাখা হয়েছে৷ আটক সব জঙ্গিদের ব্যাপারেই আমাদের কঠোর নজরদারি আছে৷ তারা যাতে অন্য বন্দিদের সাথে মিশতে না পারে৷ নামাজে ইমমাতি করতে না পারে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে৷ তাদের সাথে যারা দেখা করতে আসেন তাদের ব্যাপারেও আমরা নজরদারি করি৷ তবে যেসব জঙ্গি জামিনে বের হয়ে যায় তারা কি করে তা আমরা জানি না৷”

আটক জঙ্গিদের ডিরেডিক্যালাইজেশনের ব্যাপারে কারা কতৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প বা ফান্ড নেই ৷ তবে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের ধর্মীয় এবং সাইকোজিক্যাল মোটিভেশনের কাজ বরছে বলে জানান তিনি৷

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘যারা কারাগারে আটক আছে তাদের একাংশ আমাদের হেফাজতে থাকার সময়ই ডিরেডিক্যালাইজড হয়েছে৷ আর যারা জামিনে ছাড়া পায় তাদেরও আমরা নজরদারীতে রাখি৷ কারাগারে এখনো রেডিক্যালাইজড যারা আছে তাদেরকে আমরা বড় ধরনের থ্রেট মনে করছিনা৷ তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷”

এসএইচ-০৯/৩০/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : ডয়চে ভেলে)