যাত্রীবাহী বাসে স্বাস্থবিধির কোন বালাই নেই

বাসে সব আসনে যাত্রী তোলার সুযোগের প্রথম দিনই স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই দেখা গেল না। এ চিত্র যেমন রাজধানী ঢাকার, তেমনি ঢাকার বাইরের বড় শহরেরও। পরিবহনশ্রমিকদের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক ছিল না। সচেতনতা ছিল না যাত্রীদের মধ্যেও। জীবাণুনাশকের ব্যবহারও দেখা যায়নি বললেই চলে।

বাসে গাদাগাদি ছিল না। অবশ্য সাধারণ সময়ের চেয়ে যাত্রীর চাপও অনেক কম ছিল। ফলে কিছু কিছু বাসে আসন খালিও দেখা গেছে। কিন্তু হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা যায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ের সমান ভাড়াই নিতে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও ছিল।

সব মিলিয়ে বাসে প্রতি আসনে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত সরকার দিয়েছিল, তা অনেকাংশে পালিত হয়নি। দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। ১ জুন থেকে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার শর্তে বাস চলাচলের সুযোগ দেয় সরকার। বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভাড়া বাড়ানো হয় ৬০ শতাংশ। ফলে যাত্রীর ওপর চাপ পড়ে। এখন ভাড়া আগের জায়গায় গেল। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির বালাই না থাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ল।

এরই মধ্যে সরকার মঙ্গলবার থেকে ‘যত আসন তত যাত্রী’ নিয়মে বাস চলাচলের সুযোগ দেয়। এ ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা, দূরপাল্লার বাস ও সারা দেশের কোথাও বাস-মিনিবাসে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী না তোলা, যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার এবং তাঁদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি ও জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা রাখার শর্ত দেওয়া হয়। যাত্রা শুরু ও শেষে যানবাহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা ও জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা এবং যাত্রীদের হাত ব্যাগ ও মালপত্র জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখার কথাও বলা হয়েছিল।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা দেশে খোঁজ নিয়ে তিনি যে তথ্য পেয়েছেন, তাতে পরিস্থিতি সন্তোষজনক। সরকার কঠোর নজরদারি করছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মানুষের নিজের স্বার্থেই স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত। সরকার সারা দেশেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে।

ঢাকার বাইরে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের বাসগুলোয় ভাড়া ঠিক থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। এর মধ্যে রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর উল্লেখযোগ্য। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যাত্রী অনেক কম ছিল। চালক-সহকারী ও পরিবহনশ্রমিকদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। যাত্রীদেরও অনেকে মাস্ক ছাড়া যাতায়াত করছেন।

নীলফামারীতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে যাত্রী বহনের দায়ে ১৪টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা করে জেলা পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিশেষ অভিযান চালিয়ে মাস্কবিহীন যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয়।
সারা দেশের মধ্যে চট্টগ্রামে ব্যতিক্রম ছিল। সেখানে গণপরিবহন কম ছিল। ফলে মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। দাঁড়িয়ে-গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। বাড়তি ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও ছিল উদাসীনতা। গতকাল বিকেলে নগরের ইপিজেড মোড়ে কারখানা ছুটির পর বাসের সংকট তৈরি হয়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এখন এমনিতে যাত্রী কম, সামনে যাত্রী বাড়লে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই এখন থেকে সতর্ক হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিটা কেবল কাগজপত্রে, বাস্তবে এর প্রয়োগ দেখা যায় না। যাত্রার শুরুর আগে ও শেষে গণপরিবহনে জীবাণুনাশক ছিটানোর দায়িত্ব সরকার নিতে পারে। একই সঙ্গে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারে।

এসএইচ-০৩/০২/২০ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র : প্রথম আলো)