‘নব্য রাজাকারের’ জবাবে ‘নব্য ভারতীয় দালাল’!

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় হেফাজতে ইসলাম ‘নতুন রাজাকারের ভূমিকায়’ বলে মন্তব্য করেছেন৷ জবাবে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, এসব কথা যারা বলেন তারা নব্য ভারতীয় দালাল৷

ইসলামাবাদী আরো বলেন, দাবি না মানলে ‘মাঠেই ফয়সালা হবে৷’

হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করীম ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার দাবি তোলার পরও পরিস্থিতি তত উত্তপ্ত হয়নি৷

কিন্তু কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার পর পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠে৷ এই ঘটনায় দুইজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও দুইজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকার কোনো ছাড় দেবে বলে মনে হচ্ছে না৷ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো আগেই মাঠে নেমেছে৷ আন্দোলনে নেমেছে অনেক সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনও৷ সর্বশেষ বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তারা মাঠে নেমে প্রতিবাদ করেছেন৷ তারা বলেছেন, ‘‘কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর অবমাননা সহ্য করা হবে না৷’’

আর সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘‘তাদেরকে আমরা কী বলি? তাদেরকে আমরা কী ডাকি? তাদেরকে আমরা রাজাকার ডাকি৷ একাত্তরে ছিল জামায়াত আর এখন হেফাজতও সেই নতুন রাজাকার হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷’’

তিনি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ১২ বছর’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে আরো বলেন, ‘‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তারা সাহস করেছে জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার৷ জাতির জনকের ওপর হামলা করাটা কী? এটা হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ওপর হামলা৷ আমাদের স্বাধীনতার চেতনার ওপর হামলা কারা করেছে, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে৷’’

এর জবাবে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিুলল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা অভিযোগ৷ আমরা যদি পাল্টা অভিযোগ করি যে, ওরা হচ্ছে নব্য ভারতীয় দালাল৷ ওরা ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আলেম ওলামাদের রাজাকার বলছে৷ আমরা বলব তারা দেশের শত্রু৷ একটি কুচক্রী মহল দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করার জন্য উস্কানি দিচ্ছে৷ জয় এই উস্কানি আরো বাড়াতে একথা বলছেন৷’’

হেফাজতে ইসলাম অবশ্য এরইমধ্যে তাদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আবেদন করেছে৷ তবে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান দলটির এই নেতা৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কেন দেখা করতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ভাস্কর্য আর মূর্তি একই জিনিস৷ এগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে৷ আমাদের দাবিদাওয়া আমরা রাষ্ট্রের কাছে জানাব৷ প্রধানমন্ত্রী যেহেতু রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা করেন তাই তার সাথে দেখা করতে চাই৷’’

তিনি বলেন, ‘‘শরিয়তের বিধানের ব্যাপারে কোনো আপোষ নয়, কোনো ছাড় নয়৷ সরকার যদি দাবি না মানে তাহলে মাঠে ফয়সালা হবে৷”

তবে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রবিবার মারা যাওয়ায় এই সপ্তাহে নতুন কর্মসূচি দেয়ার কথা থাকলেও তা দিচ্ছেনা হেফাজত৷

নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকার ও আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেবে না৷ এটাকে তারা চরম আঘাত মনে করছে৷ তাই হেফাজতের দাবি মেনে নেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ এমনকি সহজে তারা প্রধামন্ত্রীর দেখাও পাবে না৷ নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷ যে কেউ তারা সাথে দেখা করতে চাইতে পারেন৷ কিন্তু দেখা করবেন কিনা সেটা প্রধানমন্ত্রীর বিষয়৷’’

তিনি বলেন, অতীতেও তারা অনেক আস্ফালন করেছে৷ তাতে কাজ হয়নি৷ তারা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাতে চায়৷ কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন সফল হবে না৷ এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো জায়গা নেই৷ সজীব ওয়াজেদ জয় ঠিকই বলেছেন, তারা নব্য রাজাকার৷

দাবি মানা না হলে মাঠেই ফয়সালা হবে হেফাজতের এমন হুমকির জবাবে তিনি বলেন, হেফাজত কি বলে তা আমলে নেয়ার কোনো দরকার নাই৷ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কী বলে সেটাই আমলে নিতে হবে৷

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হেফাজতের এই অবস্থার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দায়ী৷ সরকার তাদের দাবি মেনে এর আগে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে থেমিসের ভাস্কর্য সরিয়েছে৷ পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এনেছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মনে করেন, ‘‘তবে এবার হেফাজতের দাবি সরকারের মানার সুযোগ নেই৷ কারণ তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কথা বলছে৷ আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই৷ তারা যাবে না৷”

কিন্তু হেফাজত কি পরিমাণ শক্তি দেখাতে পারে তার ওপর নির্ভর করছে তারা মুখোমুখি অবস্থানে যাবে কিনা, বলেন এই অধ্যাপক৷

তার মতে, বড় সমাবেশ ঘটানো আর রাজনৈতিক আন্দোলন এক জিনিস নয়৷

এসএইচ-০৬/১৪/২০ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)