বেগম খালেদা জিয়া চাইলে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহযোগিতা পাবেন

করোনায় আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চাইলে তার চিকিৎসার বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে৷ তবে এই মুহূর্তে তিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন৷

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত৷ সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন স্থিতিশীল৷ তার চিকিৎসায় প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসক যারা আছেন, তাদের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে৷ তিনি এখন স্টেবল (স্থিতিশীল) আছেন, ভালো আছেন৷ তার কোন উপসর্গ নেই৷”

খালেদা জিয়া চাইলে তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম৷ তবে এখন পর্যন্ত সহযোগিতা চাওয়া হয়নি৷

করোনা পরীক্ষার একটি রিপোর্টও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি৷ তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান এ খবর নিশ্চিত করেন৷

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে৷ শনিবার তিনি নমুনা দিয়েছিলেন৷ আইসিডিডিআর,বি-এর একজন টেকনিশিয়ান তার বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন৷’’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ শনিবার আইসিডিডিআর,বিতে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ আমরা আজকে যেটা পেয়েছি, সেই টেস্ট রিপোর্টটা পজিটিভ৷ অর্থাৎ তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ তার কোনো টেম্পারেচার নেই, অন্য কোনো উপসর্গও নেই৷ আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক যারা আছেন তারা দেশের অত্যন্ত বরণ্যে চিকিৎসক৷

তিনি তাদের তত্ত্বাবধানে আছেন এবং ভালো আছেন৷ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে৷ অর্থাৎ যদি কোনো প্রয়োজন হয়, তখন সেই ভাবেই পরবর্তী ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাচ্ছি যে, এই ব্যাধি এখন যেভাবে সারা দেশে একটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সেই প্রেক্ষিতে দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও আহ্বান জানিয়েছেন যে, তার জন্য, তার মুক্তির জন্য সবাই যেন দোয়া করেন৷’’

খালেদা জিয়ার বাসার অন্য কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সে ব্যাপারে আমার কাছে কোন তথ্য নেই৷

তবে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে যে কেউ যেকোন সময় আক্রান্ত হতে পারেন৷’’ তবে খালেদা জিয়ার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ও তার ভাগ্নে ডা. মামুন রহমান জানান, খালেদা জিয়ার বাসার আরো আটজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন৷

খালেদা জিয়া কী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো ধরনের চিকিৎসা সহযোগিতা চেয়েছেন? জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ ওনার চিকিৎসা সংক্রান্ত সহযোগিতা চাননি৷ ওনার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিবকে জানিয়ে রেখেছি৷’’

সহযোগিতা চাইলে আপনাদের অবস্থান কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, ‘‘উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা৷ ওনার চিকিৎসা সহযোগিতা পাওয়ার সব ধরনের অধিকার রয়েছে৷ সহযোগিতা চাইলে উনাকে আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহযোগিতা দেব৷’’

৭৫ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত হয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যেতে হয়৷ দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়৷ তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন৷

এসএইচ-২৪/১৪/২১ (সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে)