দুদকের তালিকায় ৪৩ ‘অর্থ পাচারকারীর’ নাম

দেশ থেকে কে কত টাকা বিদেশে পাচার করেছে, হাই কোর্ট জানতে চাওয়ার নয় মাস পর কর ফাঁকি সংক্রান্ত পানামা ও প্যারাডাইস কেলেঙ্কারিতে উঠে আসা ৪৩টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)৷

তালিকায় ৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪টি নাম ‘পানামা পেপার্সে’ এবং ২৯ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছিল ‘প্যারাডাইস পেপার্সে’৷ এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরসহ বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও তার ছেলে তাবিথ আউয়ালের নাম রয়েছে ৷

রোববার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় ৷ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ৷ শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক রিটকারী পক্ষে আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান৷

পানামাপেপার্সেআসা১৪নাম

বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী,সেতু কর্পোরেশনের পরিচালক উম্মে রুবানা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, গুলশান-২ এর আজমত মঈন, বনানীর সালমা হক, এসএম জোবায়দুল হক, বারিধারার সৈয়দ সিরাজুল হক, ধানমন্ডির দিলীপ কুমার মোদি, শরীফ জহির, গুলশানের তারিক ইকরামুল হক, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, পরিচালক খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম, আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আখতার মাহমুদ৷

প্যারাডাইসপেপার্সেএসেছে২৯নাম

বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও তার স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল,ছেলে তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল, তাজওয়ার মো. আউয়াল, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোগল ফরিদা ওয়াই ও শহিদ উল্লাহ, ঢাকার বনানীর চৌধুরী ফয়সাল, বারিধারার আহমাদ সামির, ব্রামার অ্যান্ড পার্টনার্স অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড ও ভেনাস ওভারসিজ কোং-এর মুসা বিন শমসের,ডাইনামিক এনার্জির ফজলে এলাহী, ইন্ট্রিপিড গ্রুপের কেএইচ আসাদুল ইসলাম, খালেদা শিপিং কোম্পানির জুলফিকার আহমেদ, নারায়ণগঞ্জের জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের তাজুল ইসলাম তাজুল, চট্টগ্রামের বেঙ্গল শিপিং লাইনসের মোহাম্মদ মালেক, ঢাকার সাউদার্ন আইস শিপিং কোম্পানির শাহনাজ হুদা রাজ্জাক, ওসান আইস শিপিং কোম্পানির ইমরান রহমান, শামস শিপিং লিমিটিডের মোহাম্মদ এ আউয়াল, ঢাকার উত্তরার এরিক জনসন আনড্রেস উইলসন, ইন্ট্রিডিপ গ্রুপের ফারহান ইয়াকুবুর রহমান, জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের তাজুল ইসলাম, পদ্মা টেক্সটাইলের আমানুল্লাহ চাগলা, রাশিয়ার নিউটেকনোলজি ইনভেস্টমেন্টের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, মাল্টার মোহাম্মদ রেজাউল হক, নারায়ণগঞ্জের জেমিকো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ কামাল ভূঁইয়া, তুহিন-সুমন, সেলকন শিপিং কোম্পানির মাহতাবা রহমান, নারায়ণগঞ্জের জেমিকো ট্রেড ইন্টান্যাশনালের ফারুক পালওয়ান ও আয়ারল্যান্ডের গ্লোবাল এডুকেশন সিস্টেমের মাহমুদ হোসাইন ৷

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘‘আমাদের হাতে যে তথ্য-উপাত্ত আসছে, সেগুলো দিয়েছি৷ কতগুলো এখনও যাচাই-বাছাই হচ্ছে, সেগুলোও দিবো আমরা৷ এখন প্রাথমিক অনুসন্ধানের কাজ করছি৷’’

শুনানিতে অর্থ পাচার সংক্রান্ত আদালতের বক্তব্য তুলে ধরে এ আইনজীবী বলেন, ‘‘অর্থ পাচার ঠেকাতে আদালত সবাইকে সহযোগিতা করতে বলেছেন৷ আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনীতিক, নাগরিক সমাজকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন৷’’

আদালতের আদেশে এর আগে গত ২৪ অক্টোবর হাই কোর্টকে ঢাকা-চট্টগ্রামে তদন্তাধীন সাত মামলায় ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩১০ কোটি ৮০ লক্ষ ৭৪৮ টাকা পাচারের তথ্য দিয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ৷

সে প্রতিবেদনে অর্থ পাচারকারী ব্যক্তিদের মধ্যে উঠে আসে যুবলীগের সাবেক (বহিস্কৃত) নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদের নাম৷

এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও দুবাইয়ে টাকা পাচার করেছেন বলে সিআইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷

বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস ৷

তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রুলসহ আদেশ দেয় আদালত ৷ সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য বিদেশি ব্যাংকে বাংলাদেশের কে কত টাকা পাচার করেছে, সে তথ্য জানতে চায় হাই কোর্ট ৷

এছাড়া পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে বাংলাদেশি যেসব নাগরিক ও কোম্পানির নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং সে তদন্তের অগ্রগতি প্রতি মাসে আদালতকে জানাতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চায় আদালত ৷

গত বছরের ১৮ নভেম্বর ডিআরইউর মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের সত্যতা পাওয়ার কথা বলার পরেই এই ঘটনার সূত্রপাত হয়৷

তার বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার কথিত ‘বেগম পাড়ার’ প্রসঙ্গ উঠে আসে৷

গত বছর ২২ নভেম্বর অর্থপাচারকারীদের নাম-ঠিকানাসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চায় হাই কোর্ট৷

গত ১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন৷

এসএইচ-০৪/০৬/২১ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র : ডয়চে ভেলে)