প্রায় সবদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদেই আসীন নারীরা

উন্নয়নের জোয়ারে আলোর পথের যাত্রী নারীরা। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের প্রায় সবদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদেই আসীন আছেন নারীরা। নিজের কর্মদক্ষতা আর কৌশলে সামনে থেকে অনেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশ ও জাতিকে। উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে কাপড় বোনার চরকা পর্যন্ত ঘুরছে নারীর হাতেই। ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় দিন দিন স্বমহিমায় উজ্জীবিত হচ্ছেন নারীরা। আর এই নারীদের বিশেষ সম্মাননা জানাতেই আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নানা আয়োজনে বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে দিনটি। কর্মক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতায়নের লক্ষ্যে চলতি বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’।

নারী দিবসের প্রথম প্রতিপাদ্য ছিল ‘অতীত উদযাপন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা।’ যেটি ছিল ১৯৯৬ সাল। এরপর থেকে প্রতিবছর একেকটি প্রতিপাদ্য নিয়ে পালন করা হয় নারী দিবস। প্রতিবছর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য নিয়ে নারী দিবস পালিত হলেও বছর বছরই বদলায় নারীর জীবনের গল্প। নারীর এগিয়ে যাওয়ার গল্প। শত বাঁধা পেরিয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল্যতা ছড়িয়ে যাওয়ার গল্প।

নারী দিবসের ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৮৫৯ সালের ৮ মার্চ বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নিজেদের অধিকার আদায়ে মিছিলে নামেন একদল পোশাক শ্রমিক নারী। তাদের দাবি মানার পরিবর্তে সরকারের লেঠেল বাহিনীর পক্ষ থেকে শুরু হয় দমন-পীড়ন। এমনকি ঘটে গুলিবর্ষণের মতো ঘটনাও। তাদের দোষ ছিল প্রসবকালীন সময়ে ছুটি প্রার্থনা করা, তাদের দাবি ছিল কাজের জন্য মজুরি বৃদ্ধির। তারা নির্দিষ্ট একটা সময়সীমা চেয়েছিল কর্মক্ষেত্রে। চেয়েছিল ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হতে। কিন্তু সেসব দাবি না মেনে আন্দোলনরত এসব কর্মজীবী নারীদের ওপর নেমে আসে ভয়াবহ অত্যাচারের খড়গ।

এই আন্দোলনই আবার পুনরুজ্জীবিত হয় ১৯০৯ সালে। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় নারী সমাবেশের। ওইদিনই বলতে গেলে প্রথমবারের মতো নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাস্তায় নামেন প্রায় ১৫ হাজার নারী। বিশ্বের সেবারই প্রথম ঘটে নারী আন্দোলনের সূচনা।

ওই আন্দোলন থেকেই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ছিল নারীর মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। ওই সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম হয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এ সময় ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন। এই সম্মেলনে ক্লারা প্রতিবছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন।

সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। এরপর আমেরিকার রাস্তায় যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়ই শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন খাতে নারীরা আজ সমান দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞানের আবিষ্কার থেকে শুরু করে অর্থনীতির হাল পর্যন্ত ধরছেন শক্ত হাতে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি এমন কোন খাত নাই যেখানে নারীরা নিজের দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন না। বাংলাদেশের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন নারীরা।

বাংলাদেশে নারীর উন্নয়নের আরেক ধাপ যুক্ত করেছেন তামান্না-ই-লুৎফী। এককভাবে একটি হেলিকপ্টার উড়িয়ে ইতিহাস করেছেন তিনি। বিমানবাহিনীর প্রথম সামরিক নারী পাইলটও তিনি। সামরিক বাহিনীর প্রথম পাইলট হিসেবে সফলভাবে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন তিনি। সামরিক বাহিনীতে নিঃসন্দেহে নারীদের জন্য এক বিরাট সাফল্য।

শুধু তাই নয় বাংলাদেশের রয়েছে দুজন এভারেস্ট জয়ী নারী। নিশাত মজুমদার এবং ওয়াসফিয়া নাজরীন নামের এই দুর্বার সাহসী নারীদের মধ্যে ওয়াসফিয়া শুধু এভারেস্ট জয় করেই থেমে নেই। তিনি বরং সাতটি মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীদের ভিন্ন এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাবও পেয়েছেন ওয়াসফিয়া।

এসএইচ-০১/০৮/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : জনকণ্ঠ)