বয়স ১১০ হলেও সরকারি চাকরিতে অবসর মেলে না!

কারো বয়স সত্তর পেরিয়েছে, কারো বা পেরিয়েছে শত বছর, তারপরও তারা অবসরে যাওয়ার সুযোগ পান না৷ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে এমন অনেকে আছেন যাদের আমৃত্যু সরকারি চাকরি করে যেতে হয়৷

চাকরিটা ভালোবেসেই নিয়েছিলেন বায়ার্ড কুমবিম্বা দিউবা৷ কিন্তু সেই চাকরি যে আর তাকে ছাড়বে না, তা ভাবেননি৷ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন, কানে শুনতে পান না ঠিকমতো৷ তবুও ৮৪ বছর বয়সি দিউবা লুবুমবাসি শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন নিয়মিত৷ ‘‘আমি ১৯৬৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষকতা শুরু করি৷

এই চাকরি আমি নিজেই বেছে নিয়েছি৷ কিন্তু এখন আমি সামর্থের শেষ প্রান্তে”, বলছিলেন তিনি৷ তারপরও অবসর কেন নিচ্ছেন না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘‘আমি ছাড়তে চাই৷ কিন্তু খালি হাতে নয়৷ আমার যা প্রাপ্য সেটা আমি চাই৷”

শিক্ষক দিউবার চাওয়া খুব বেশি নয়, সম্মানের সঙ্গে একটু অবসর৷ তার হিসাবে সেটি যথাযথ হবে, যদি এককালীন ত্রিশ হাজার ডলার আর নিয়মিত অবসর ভাতা দেয়া হয় তাকে৷ কিন্তু এই চাওয়া দেশটির অনেক শিক্ষক আর প্রশাসনিক কর্মীরই অধরা হয়ে আছে৷

যদিও ২০১৬ সালে এই সংক্রান্ত একটি আইন করা হয়েছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে৷ সেখানে বলা হয়েছে, যাদের বয়স ৬৫ বছর বা যারা ৩৫ বছরের চাকরি জীবন অতিক্রম করেছেন, তারা অবসরের জন্য বিবেচিত হবেন৷

কিন্তু দিউবাদের কথা সরকার ভুলে গেছে৷ মাসে মাত্র ১৮৫ ডলার বেতনে তার মতো শিক্ষককে এই বয়সেও অবসরের আশায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়ে যেতে হচ্ছে৷ আরেকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফ্রান্সিসি ইউম্বা মিটওয়েলেরও একই অবস্থা৷ ৭৮ বছর বয়সি এই শিক্ষিকা চাকরিতে প্রবেশ করেন ১৯৬২ সালে৷

একসময় উদ্যম থাকলেও এখন ক্লান্ত তিনি৷ তারপরও চাকরি চালিয়ে যাচ্ছেন ‘বিদায়কালীন ভাতা’ পাওয়ার আশাতে৷ তার আশা, সরকার তাকে প্রাপ্য ২৫ হাজার ডলার দেবে, যা দিয়ে সন্তানদের জন্য চলনসই একটা বাড়ি বন্দোবস্ত করা যাবে৷

গত সেপ্টেম্বরে দেশটির জনসেবামন্ত্রী জ্যা পিয়েরে লিহাউ জানিয়েছিলেন, সাড়ে তিন লাখ সরকারি চাকরিজীবী অবসরকালীন বয়সে রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ১৪ হাজার জনের বয়স নব্বইয়ের উপরে৷ এমনকি ২৫৬ জন আছেন শতবর্ষী৷ আছেন সর্বোচ্চ ১১০ বছর বয়সি চাকরিজীবীও৷ পর্যায়ক্রমে তাদের অবসরে পাঠানোর কথা বলেন তিনি৷ কিন্তু সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি৷

‘‘প্রত্যেক মন্ত্রী একই কথা বলেন, কিন্তু তা কার্যকর হয় না,” বলছিলেন লুবুমবাসির হিউম্যান রাইটস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হুবার্ট শিসওয়াকা৷ তারা এ ধরনের মামলা নিয়ে লড়ছেন আদালতে৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের অবসর আর আসে না এবং বৃদ্ধ পিতা আর মাতারা কষ্টেই মারা যান৷” এজন্য তিনি সরকারি অর্থের আত্মসাৎ আর বিচারহীনতাকে দায়ী করেন৷

শিক্ষিকা ফ্রান্সিসি ইউম্বা মিটওয়েল ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ‘‘আমি মাথা উঁচু করে বিদায় নিতে চাই৷ আমাদের একটা পদকও নেই, যা নাতি-নাতনিদের জন্য রেখে যেতে পারি৷”

এ-তো গেল শিক্ষকদের কথা৷ ভালো নেই প্রশাসনিক খাতে নিয়োজিত বয়োবৃদ্ধ চাকরিজীবীরাও৷ ধরা যাক ইয়ানতুলা ববিনা পিয়েরের কথা৷ ৮০ বছর বয়সি এই প্রবীণ রাজধানী কিনশাসার লিংওয়ালার একটি প্রশাসনিক দপ্তরের প্রধান৷ প্রতিবেশী, আবাসন সংক্রান্ত অভিযোগ আর আদমশুমারির দায়িত্ব তার উপর৷ ১৯৬৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা হারান তিনি৷

রোববার ছাড়া সপ্তাহের ছয়দিনই অফিস করে যান৷ প্রতিদিন ভোর তিনটায় ওঠেন এবং যানজট এড়িয়ে তার কার্যালয়ে পৌঁছান৷ ক্লান্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বয়স নয়, বরং অফিসে কম্পিউটার না থাকাকে দুষলেন৷ ‘‘বিশ্ব বদলে গেছে, কিন্ত (এখানকার) প্রশাসন বদলালো না,” তাকের পর তাক সাজিয়ে রাখা ফাইলের সামনে বসে বলছিলেন তিনি৷ সেই সঙ্গে দুঃখ করে বলেন, ‘‘আমার বয়স তো দেখতেই পাচ্ছেন, এখন বিশ্রামের সময়…কিন্তু অবসরের দেখা নেই৷ সেই অপেক্ষায় আছি৷”

এই মানুষগুলোর অবসরের জন্য সুনির্দিষ্ট কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে বার্তা সংস্থা এএফপি দেশটির জনসেবা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে তারা কোনো সাড়া দেয়নি৷

এসএইচ-১০/২৭/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : ডয়চে ভেলে)