দাম বাড়ানোর দৌড়ে পিছিয়ে নেই কেউই

আমদানির হুমকির সঙ্গে নিয়মিত অভিযান চালিয়েও নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের বাজার। রাত পেরোলেই কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা করে বাড়ছে চালের দাম। চাল খাওয়া কমিয়ে ভোক্তারা যে আটা-ময়দায় ঝুঁকবে, নেই সেই উপায়ও। মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এদিকে সরকার ২০ টাকা দাম না বাড়ানোয় বাজারে সয়াবিন তেল ছাড়ছে না উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।

দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর রীতিমতো যেন উৎসব চলছে। আমদানিকারক থেকে মহল্লার খুচরা দোকানি-দাম বাড়ানোর দৌড়ে পিছিয়ে নেই কেউই। নেই কারও রাখঢাকও।

চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেয়া হয়েছে আমদানির অনুমতিও। এরপরও টানা যায়নি দামের লাগাম। মোহাম্মদপুর পাইকারি কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভালো মানের মিনিকেট গতপরশু দিনও মিলগেটে ছিল ৩ হাজার ৬০০ টাকা। তবে গতরাতে (১৯ আগস্ট) সেই চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়েছে। পাইকারিতে প্রতিকেজি ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। আর ৫০ টাকার নিচে মিলছেই না মোটা চাল। খুচরায় বিক্রি হচ্ছে আরও ১ থেকে ২ টাকা বাড়তি দরে।

চালের দাম বাড়ার বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা যদি মিলারদের প্রশ্ন করি যে দাম এত বেশি কেন? তারা জবাবে বলে যে ধানের দাম বেশি। এখন আমরা তো মিলারদের থেকে আনি। আমরা তো তাদের কথা শুনতে বাধ্য। মিলার ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে বাজার এমন পর্যায়ে চলে আসছে যে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে।

এদিকে একমাস আগেও পাইকারিতে প্রতি বস্তা আটা ২ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে দাম ২ হাজার ৪৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে গেছে। এছাড়া ময়দা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭৮০ টাকায়। তবে খুচরায় আরও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা আর ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়।

বাজারে আটার সরবরাহ সংকটের বিষয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, আজ প্রায় ৫ থেকে ৬ দিন যাবত কোম্পানিগুলো আটা দিচ্ছেন না। টাকা পরিশোধ করে ট্রাক পাঠিয়েছি। ট্রাক সিরিয়ালে রয়েছে। তবে কোম্পানি বলছে, উৎপাদন নেই।

বিশ্ববাজারে যখন ভোজ্যতেলের দর কমছে তখন দেশে চলছে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া। সরকার ২০ টাকা দাম না বাড়ানোয় টাকা দিয়েও ২০ থেকে ২৫ দিন ধরে তেল না পাওয়ার অভিযোগ করছেন ডিলাররা।

তারা বলেন, প্রচুর ক্রেতা ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ’তেল নেই’ বলা ছাড়া উপায় নেই। কোনো কোম্পানিই বাজারে তেল সরবরাহ করছে না।

বাজারের এমন অবস্থায় দোকানে দোকানে ঘুরেও পকেটের সঙ্গে দামের সমন্বয় করতে পারছেন না ভোক্তারা। আয়-ব্যয়ের হিসাব না মেলাতে পারা এক ভোক্তা বলেন, কিছুতে টাকা বাঁচানো যায় না। এক পণ্য কমে কিনলে অন্য আরেকটি পণ্য বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আগেই অভাবে দিন কাটাতে হত। এখন তো আরো খারাপ অবস্থা।

এদিকে রাজধানীর উত্তরাতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর অভিযান চালায়। মূল্য তালিকা না থাকাসহ পণ্যমূল্য বেশি রাখার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মুদি দোকানে জরিমানা করেন তারা।

অভিযানকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার বলেন, আজকে এক দোকানি বললেন যে এক ডজন ডিম ১১৪ টাকায় কেনা পড়েছে, তা উনি ১২০ টাকা ডজন বিক্রি করছেন। কিন্তু পাশের দোকানিকে দেখলাম ১৩৫ টাকা ডজন দরে ডিম বিক্রি করছেন। সুতরাং প্রায় ১৫ টাকার পার্থক্য। আমি নিজেই ভোক্তা সেজে তাদের প্রশ্ন করলাম।

উল্লেখ্য, দ্রব্যমূল্যের কারসাজি রোধে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন বাজার তদারকিতে মাঠে থাকা কর্মকর্তারা।

এসএইচ-০২/২০/২২ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : সময়)