বিএনপি ও আ’লীগের অনড় মনোভাবে রাজনীতি কোন পথে?

বিএনপি অভিযোগ করেছে যে নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে আক্রমণ শুরু করেছে বলেই দেশে সহিংসতা শুরু হয়েছে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ ।

ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার এখন দলীয় কর্মী ও পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে আক্রমণ ও হামলা করাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন “পুলিশ এখন কথায় কথায় গুলি করছে।”

আলমগীরের দাবি – বিরোধী দল যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্যই সরকার রাজনীতির মাঠ খালি করতে এমন সহিংস আচরণ শুরু করেছে।

তবে তিনি বলেন, তারাও এসব মোকাবেলা করেই সরকার পতন হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন করে যাবেন।

আলমগীর পরে বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতার পুরো দায় সরকারের।

“আমরা কোন সহিংসতা করছি না। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে যে তারা রাজপথ দখল করবে ও রাজপথে আর কাউকে আসতে দেবে না। আমরা কখনোই সন্ত্রাসী বা সহিংস কোন কর্মসূচিতে যাবো না। তবে এটা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ কীভাবে নিতে চায়”।

অর্থাৎ তার কথাতেও এটা স্পষ্ট যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বললেও সামনে তাদের কর্মসূচিতে বাধা এলে তারাও খুব একটা ছেড়ে কথা বলবেন না।

আর রাজনীতিতে হঠাৎ এই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সূচনা হয়েছে জুলাই মাসের শেষ দিকে ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে গুলিতে দুজন নিহত হবার পর। এরপর দেশের নানা জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে।

পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নারায়ণগঞ্জে একজন নিহত হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই দিনই বেশ কিছু জেলায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এসব সংঘর্ষের জন্য বিএনপিকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, বিএনপির এমন আচরণ সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোরভাবে দমন করবে।

“বিএনপি সহিংসতার দিকে চলে গেছে। কুমিল্লায়, নারায়ণগঞ্জে, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ সহ বিভিন্ন জায়গায় তারা হামলা ভাঙচুর ও সহিংসতা করেছে। বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা করে তারা চাইছে সরকার কঠোর হোক। সহিংসতা করলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হবে সেটাই স্বাভাবিক”।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার পুলিশ দিয়ে আন্দোলন দমন করছে না। তবে আইন-শৃঙ্খলার কেউ বিঘ্ন ঘটালে পুলিশ ব্যবস্থা অবশ্যই নেবে।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি সক্রিয় থাকলেও দলটির নেতাকর্মীরা খুব একটা সংঘর্ষে জড়ায়নি। কিন্তু গত কয়েক মাসে দলটির কৌশলে পরিবর্তন হয়েছে এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকেও কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার কথা বলা হচ্ছে।

অন্যদিকে সরকারি দলের নেতারাও রাজপথ যে কোন মূল্যে দখলে রাখার ঘোষণা দিচ্ছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজনীতিকে সহিংসতাপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন।

তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দু দলের জেদাজেদি ও ক্ষমতা-কেন্দ্রিক মহড়ার ফল হলো সহিংসতা – যা সামনে আরো বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।

যদিও কদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা না দেয়ার কথা বলেছিলেন। আর বিরোধী দল বলছে বাধা না আসলেও তারাও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন।

এমন পটভূমিতে সামনে বিএনপির দিক থেকে সরকারবিরোধী আরও কর্মসূচি আসছে, অন্যদিকে সরকারি দলের নেতাদের কাছ থেকে আরও কঠোর পুলিশী পদক্ষেপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে ।

এসব কারণেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাঠ দখলের রাজনীতি আসলে সার্বিক পরিস্থিতিকেই সহিংস করে তুলতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে।

এসএইচ-১৬/০৪/২২ (রাকিব হাসনাত, বিবিসি)