বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে ‘একলা চলো’ নীতি

বাংলাদেশে সরকার বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনসমর্থন আদায়ে সারাদেশে গনসমাবেশ কর্মসূচী করেছে বিএনপি।

দলটির দাবি, এরপর যুগপৎ আন্দোলন হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ে।

দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির রাজপথে নিজেদের শক্তি দেখাতে চাইছে এককভাবে দলীয় কর্মসূচী পালনের মধ্যে দিয়ে।

চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিএনপির বিভাগীয় কর্মসূচী শুরু হয়েছে যা সাংগঠনিক দশটি বিভাগে প্রতি সপ্তাহে পালিত হচ্ছে। তাদের বিভাগীয় গণসমাবেশ শেষ হবে ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে ঢাকা থেকে পরবর্তী আন্দোলনের দিক-নির্দেশনা আসবে।

কিন্তু বিএনপির চলমান কর্মসূচীর একটি কৌশলগত দিক হচ্ছে ২০ দলীয় জোটকে বাইরে রেখে সম্পূর্ণ এককভাবে দলীয় সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন জোটবদ্ধ আন্দোলন না করে এককভাবে আন্দোলন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

“বিএনপি তার নিজের শক্তিতে বলীয়ান। আমরা কেন অন্যের শক্তি ধার করতে যাব। আমরা নেতাকর্মীদের সবার মতামত নিয়েই একা শুরু করেছি।”

তার ভাষায়: “এমনকি আমরা সাতদিন ধরে মিটিং করে আমাদের সেন্ট্রাল কমিটির সবার মতামত নিয়েছি। সবার মতামত নিয়ে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে এবার আমরা একা করবো।”

বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ব রাজনীতি আর দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ক্ষমতায় আসার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে বিএনপি।

এই নির্বাচনে বিএনপি কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না দলের তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতৃত্বের কেউই।

দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম বলেন, এককভাবে কর্মসূচী “এককভাবে বিএনপিকে শক্তিশালী করাটাই প্রধান কারণ।”

“গত ১৪ বছর বিএনপি কিন্তু সরকারের, বাইরে ক্ষমতার বাইরে এমনকি পার্লামেন্টেরও বাইরে। সেইক্ষেত্রে বিএনপির নিজের যে অঙ্গসংগঠনগুলো আছে, আমাদের যে নেতাকর্মীরা আছে তাদেরকে নিজেদের শক্তিতে বলীয়ানতো হতে হবে। সেই সাংগঠনিক প্রচেষ্টা কিন্তু আমাদের উচ্চপর্যায় থেকে হয়ে আসছে।”

এককভাবে কর্মসূচীর তাৎপর্য নিয়ে শামা ওয়াবেদ বলেন, “এটার তাৎপর্য হচ্ছে যে বিএনপিকে নিজের শক্তিতে দাঁড়াতে হবে প্রথমে।”

“তারপরে আমাদের সাথে যারা আসবে, তারা অফকোর্স ওয়েলকাম। তারা একটা অ্যাডেড বেনিফিট (বাড়তি সুবিধা) হবে। কিন্তু প্রথমে বিএনপিকে নিজের শক্তিতে দাঁড়াতে হবে। সেটাই আমরা করছি।”

বিএনপির গণসমাবেশে মঞ্চে থাকছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সমাবেশে অংশ নিচ্ছে স্থানীয় নেতা কর্মীসমর্থকরা।

গণসমাবেশে বিএনপির জোট বা সমমনা দলগুলোর ব্যানারেও কোনো মিছিল দেখা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপি ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেয়। বিশ দলীয় জোটে অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী।

কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় জামায়াতকে ঘিরে বিএনপির ভেতরে এবং বাইরে সমালোচনা আছে। দলের মধ্যেও অস্বস্তি আছে।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতকে বাদ দিয়ে একক আন্দোলন রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ কিনা সে প্রশ্ন রয়েছে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ বিষয়ে বলেন, “গণ অভ্যুত্থানের জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি। তারই পদক্ষেপ হিসেবে আমরা বিভাগে আছি। পলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজি (রাজনৈতিক কৌশল) সবসময় একরকম থাকে না।”

“আমাদের স্ট্র্যাটেজি এখন দেখছি যে এটা করলেই বেটার, সেজন্য আমরা করছি এটা।”

তিনি জানান, “১০ ডিসেম্বরের পর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হবে। অন্যান্যরাও আসবে। তাদের সাথে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো। জোটবদ্ধভাবে আর আন্দোলন করছি না আমরা।”

বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য বর্তমান সরকারকের ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করা।

বিএনপি বলছে, সমমনা সব দলকে সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে চায় তারা।

এসএইচ-০৫/২৮/২২ (আবুল কালাম আজাদ, বিবিসি)