সিটি ভোটে ইসির স্বস্তি থাকলেও প্রশ্ন গ্রহণযোগ্যতায়!

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত হলো দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনের ভোট। বিএনপিসহ বেশকিছু দল অংশগ্রহণ না করায় নির্বাচন ছিল অনেকটাই নিরুত্তাপ। সহিংসতার ঘটনাও খুব একটা ছিল না। পাঁচ সিটির ভোট নিয়ে তুষ্টিতে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ভোটে বড় বড় দল না আসায় ইসির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, পাঁচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন ভালো হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় নির্বাচন যেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটাতে ভোটাররা খুব উৎসাহিত হবেন যে, ভোট উৎসবমুখর হতে পারে। সেখানে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হবেন। সিইসি বলেন, আমরা সন্তুষ্ট বোধ করছি। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটাররা অবাধে, নির্বিঘ্নে এসে ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, প্রতিটি সিটি নির্বাচনের পর কমিশনকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেন কম ছিল, অংশগ্রহণমূলক কেন হলো না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।

শারমিন মুরশিদ আরও বলেন, স্থানীয় সরকারের এই ভোটের মধ্য দিয়ে ইসি নিজেদের কর্মকা- বিশ্লেষণের ক্ষমতা অর্জন করবে, ভুলগুলো শুধরে ভালো নির্বাচন করার চেষ্টা করবে। সেগুলো না করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলে হবে না। এই ভোটে কি সাধারণ মানুষ কিংবা ভোটাররা সন্তুষ্ট? ইসি নিজেরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলে তো হবে না।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন হতে হলে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্পের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে তা ছিল না। প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও মাঝপথে সরে গেছে। সে হিসেবে এটা তো নির্বাচনই হয়নি। আর সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তো প্রশ্নই আসে না। এই নির্বাচনে ইসির স্বস্তিবোধ করা বা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কোনো সুযোগ নেই।

নির্বাচন কমিশন তিন ধাপে দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে ইভিএমে ভোট হয়। পুরো ভোট সিসিটিভির মাধ্যমে ইসি কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। নির্বাচনে চার সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। গাজীপুরে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে জিতে যান সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। পাঁচ সিটির মধ্যে গাজীপুর বাদে অন্যগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।

বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। ওই ঘটনার পর ইসলামী আন্দোলন সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এক বক্তব্যকে দায়িত্বহীন ও কুরুচিপূর্ণ আখ্যায়িত করে গতকাল দলটি সিইসিকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে। নোটিশে তারা ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছে। একই সঙ্গে তারা সিইসির পদত্যাগ ও ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছে। আইনি নোটিশে বিষয়টির সুরাহা না হলে তারা আদালতের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছে।

এসএইচ-০৫/২৩/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, আমাদের সময়)