শত্রুর ‘ডালপালা’ নিয়ে সতর্ক আ.লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে রাজনৈতিক দলগুলোর দৌড়ঝাঁপ ততই বাড়ছে। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা মত থাকলেও নির্বাচনী হাওয়ায় ভাসতে শুরু করেছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল।

তবে শোকের মাস আগস্টে বড় কোনো কর্মসূচি রাখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অবশ্য নিজেদের বড় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও বিএনপির কর্মসূচিগুলোর ওপর কড়া নজর রাখছে তারা। সঙ্গে নজর থাকছে বিএনপির ‘ডালপালা’র ব্যাপারেও।

এ ছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলের বিভিন্ন গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ নিজ জোটের অংশীদারদের সক্রিয় করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বড় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি, বিরোধী দলের নানা ‘অপকর্ম’ তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।

নির্বাচন সামনে রেখে এরইমধ্যে ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সকল সাংগঠনিক ইউনিটকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মীদের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা নিরসনেও কাজ করছে দলটির সাংগঠনিক টিম।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আগস্ট মাসে আমাদের দলের ভিতরের কাজগুলো শুরু হয়েছে। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ৬ আগস্টের তৃণমূলের যে বর্ধিত সভা সেটা নির্বাচনী কাজেরই অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে। ইশতেহারের কাগজপত্রগুলো তৈরি করা হচ্ছে। শোকের মাস শেষে আমাদের কয়েকটি মহাসমাবেশের প্ল্যান রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ হবে। মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মহাসমাবেশগুদগঠনিক কাজগুলো চলছে।

বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, বিএনপির অপকর্মের স্পষ্ট প্রমাণ হলো ২৯ জুলাই। অবরোধের নামে অগ্নি সন্ত্রাস, জ্বালাওপোড়াও, রাস্তায় জনগণের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। আগস্ট এলে এরা হত্যা, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। আগস্ট এলেই তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে। আগস্ট এলে তারা হিংস্র হয়ে ওঠে, তার জন্য আমরা সজাগ থাকি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারাই আজ ষড়যন্ত্র করছে। ’৭৫ এর খুনি তারা, ২০০৪ সালের খুনি তারা, সবই একই সূত্রে গাঁথা। হয়তো ব্যক্তি পরিবর্তন হয়েছে, সেই শক্তির প্রতিনিধিত্ব কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়ার জায়গায় জিয়াউর রহমান, জিয়ার ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া, খালেদা জিয়ার ধারাবাহিকতায় এসেছেন তারেক জিয়া। শক্তি তো একই শক্তি। আমাদের কাজ বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচিত করা। বিএনপির মূল শক্তির ডালপালারা এখন ষড়যন্ত্র করছে।

গত ৬ আগস্ট ‘শত সংগ্রামে অজস্র গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় তৃণমূল থেকে আসা প্রায় ৩০ জন নেতা-নেত্রী বক্তৃতা করেন। এ সময় তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। আমি প্রতি ছয় মাস পর পর জরিপ করি। সেই জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের কাছে জানতে চান, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে তারা কাজ করবেন কি না। এ সময় উপস্থিত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতা-জনপ্রতিনিধি দুই হাত তুলে ওয়াদা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, সামনের নির্বাচনে বিজয়ের পতাকা নিয়ে গণভবনে আসবেন। আপনাদের আসার আমন্ত্রণ থাকল।

দলীয় সূত্র মতে, বর্ধিত সভার পরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে যেসব নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কোন্দল চরমে সেসব এলাকা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ঢাকায় তলব করা হবে। তার আগে সংগঠনিকভাবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দলীয় প্যাডে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা।

এসএইচ-০৩/১০/২৩ (অনলাইন ডেস্ক, সূত্র : ঢাকা পোষ্ট)